বিজ্ঞাপন

দুর্দিনে ছেড়ে যাবেন না— প্রধানমন্ত্রীকে বুয়েট শিক্ষার্থীদের চিঠি

April 2, 2024 | 9:55 pm

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ‘অভিভাবক’ সম্বোধন করে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ রাখার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা চিঠিতে তারা বলেন, আপনি সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছেন। আমরা জানি এই দুর্দিনে আপনি আমাদের ছেড়ে যাবেন না।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনিক ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে চিঠি পড়ে শোনান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তবে নতুন কোনো কর্মসূচির কথা তারা জানাননি।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা এই চিঠিতে ‘ছাত্ররাজনীতিবিহীন সময়ে’ বুয়েটে নিজেদের নানা আবিষ্কার ও অর্জনের কথা তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। চিঠিতে তারা বলেন, ‘আমরা করোনার সেই বিপদ মুহূর্তে বানিয়েছি লো কস্ট ভেন্টিলেটর। ক্লিন সিটির আশায় পরিত্যক্ত মাস্ক থেকে বানিয়েছি কংক্রিট। খুঁজছি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সহজ উপায়। বানাচ্ছি আর্টিফিশিয়াল আর্মস। পদ্মাসেতুর নির্মাণে আমাদের বুয়েটের শিক্ষক ও সাবেক শিক্ষার্থীদের অবদান অনবদ্য।’

প্রধানমন্ত্রী নিঃশর্তে এসব কার্যক্রমে অর্থ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে তারা লিখেছেন, ‘শুধু দেশেই না, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অন্য দেশের দলগুলো যাদের জন্য বরাদ্দ থাকে, আমাদের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি অর্থ ও গবেষণাগারের সুবিধা, তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমরা ছিনিয়ে আনছি বিজয়।’

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীরা ‘রাজনীতির মারপ্যাঁচ’ বুঝতে পারে না জানিয়ে বলেন, ‘আমরা ত্রাসের রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝি না। আমরা শুধু দেশকে, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে জানি। নিজেদের কাজ দিয়ে তা আমরা প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর। আপনি আমাদের সবার অভিভাবক, দেশের অভিভাবক। আমরা জানি দেশের কোথাও কোনো দুঃখজনক পরিস্থিতি চললে, দেশের কোথাও সংকট চললে আপনার হৃদয়ে গভীর রক্তক্ষরণ হয়।’

বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনে জনমত গঠনে ছাত্ররাজনীতির ভূমিকার কথা স্বীকার করে বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বুয়েট শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের মাঝে সূচনা ঘাটছে আধিপত্য, দাপট, র‌্যাগিং, শিক্ষকদের অপমান, চাঁদাবাজি, শিক্ষার্থী নিপীড়ন, খুনোখুনিতে মেতে ওঠার মতো ঘটনা। শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিং কিংবা ছাত্ররাজনৈতিক দাপটে অমানসিকভাবে নিপীড়িত হওয়ার ঘটনা বুয়েটের র‌্যাগিং স্টোরি আর্কাইভে সারি সারি আকারে লিপিবদ্ধ আছে।’

বুয়েট ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ও সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে— নানা মহল থেকে উত্থাপিত এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তারা চিঠিতে বলেন, ‘আমরা নির্দ্বিধায় বলতে চাই, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা যদি কোনো সময় এসব নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর যেকোনো কার্যকলাপ ক্যাম্পাসে চলমান দেখি, শিগগিরই তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেব এবং প্রশাসনকে অবহিত করব। এমনকি ভবিষ্যতে যদি ক্যাম্পাসে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে সেটার বিরুদ্ধেও আমাদের অবস্থান দৃঢ় থাকবে।’

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর লেখা বুয়েট শিক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ চিঠিটি পড়ুন এখানে—

আইনিভাবে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ থাকার পরও গত ২৮ মার্চ দিবাগত রাতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছেন— এমন অভিযোগের ভিত্তিতে পরদিন ২৯ মার্চ থেকে আন্দোলনে নামেন বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন রাতেই তড়িঘড়ি করে প্রতিষ্ঠানটির পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাহীম রাব্বীর হলের সিট বাতিল করে করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ।

পরে বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বীর করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধের যে সিদ্ধান্ত, তা ফের স্থগিত করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের দেওয়া এমন সিদ্ধান্তের পর বুয়েট উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার জানান, আদালাত অবমাননার সুযোগ নেই। আইনি প্রক্রিয়ায় পুরো বিষয়টি সম্পন্ন করা হবে জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরআইআর/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন