বিজ্ঞাপন

‘প্রস্তুত হচ্ছে’ ফিটনেসবিহীন বাস, ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনার শঙ্কা!

April 4, 2024 | 10:29 am

রাব্বী হাসান সবুজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রংপুর: ঈদযাত্রায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যাত্রী আনা-নেওয়া করতে ফিটনেসবিহীন শত শত বাস রাস্তায় নামানোর প্রস্তুতি চলছে রংপুরে। কেবল নগরীর অর্ধশতাধিক ওয়ার্কশপে দিনরাত এক করে চলছে লক্করঝক্কর বাসের মেরামত ও রঙ করার কাজ। প্রকাশ্যেই জোড়াতালির এই কাজ চললেও কোনো তৎপরতা নেই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)। দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ এসব ফিটনেসবিহীন বাস সড়কে নামানোর আগেই সরকারকে আইনের কঠোর প্রয়োগের পরামর্শ পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টদের।

বিজ্ঞাপন

রংপুর নগরীর টার্মিনাল-আর কে রোড এলাকায় গেলে চোখে পড়বে ঈদে যাত্রী পরিবহনের জন্য বাস মেরামতের হিড়িক পড়েছে ওয়ার্কশপগুলোয়। ঈদকে সামনে রেখে তৈরি হচ্ছে পুরোনো যানবাহনগুলো। কেউ বাসের বডি মেরামত করছেন তো, কেউ বানাচ্ছেন আসন, কেউ বা আবার রঙ করা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। তবে দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই, ভাঙাচোরা-বিধ্বস্ত প্রায় এই বাসগুলোই এবারের ঈদযাত্রায় চকচকে নতুন রূপে দৃষ্টি কাড়বে যাত্রীদের। কাটাকাটি আর জোড়াতালি দিয়ে ফেরানো হচ্ছে নতুন অবয়ব আর রঙের ছোঁয়ায় পাচ্ছে চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য।

রংপুর নগরীর আর কে রোডসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার ওয়ার্কশপে এখন দম ফেলার ফুরসৎ নেই ডেন্টিং-পেন্টিং মেকানিকদের। যতো দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করে গাড়িগুলো রাস্তায় নামাতে ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছেন এসব বাসের মালিকেরা।

বসুন্ধরা পরিবহনের ড্রাইভার ওবায়দুল হক জানান, ঈদে যাত্রী পরিবহনের উদ্দেশে বাসের একটু মেরামত করলে যাত্রী ভালো উঠে। বিশেষ করে রঙের কাজ করলে যাত্রীরা খুশি হয়। এজন্য অধিকাংশ বাস মালিকই চেষ্টা করে ঈদের আগের গাড়ির কিছুটা হলেও ঝকঝকে তকতকে করার।

বিজ্ঞাপন

তবে ফিটনেসবিহীন বাস সড়কে চলার কারণে বড় ধরণের যে দুর্ঘটনা ঘটে এটা স্বীকার করছেন মজিবুর রহমান নামে অপরূপা নামে বাসের চালক। তিনি বলন, ‘ঈদকে কেন্দ্র করে ঢাকার অধিকাংশ লোকাল বাস মহাসড়কে নেমে আসে যাত্রীপরিবহনের জন্য; যেগুলো বেশিরভাগই ফিটনেসবিহীন। এসব গাড়িগুলো রাস্তায় দুর্ঘটনার মূল কারণ।’

ফয়সাল এবং আশিক নামে দুই মিস্ত্রী জানান, ঈদকে সামনে রেখে তাদের গ্যারেজে পুরাতন গাড়ির কাজ বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। গাড়িতে রঙ ও ইঞ্জিনের ক্রটিগুলো মেরামত করা হচ্ছে। এসব বাসের কোনটির ইঞ্জিন ও ব্রেকে সমস্যা; সিটগুলোও ছেঁড়া। আবার কোনোটির বডিতে রঙ নেই। এসব বাসে মেরামত করলে ঈদযাত্রায় এ বাসগুলো চকচকে হয়ে নতুন রূপে দৃষ্টি কাড়বে যাত্রীদের। তাই ঈদের সময় কাজের চাপ বেড়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে থেকেই মূলত রাজধানীসহ দেশে বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মস্থল ছাড়বে চাকরিজীবীরা। তাই সড়কে চাপ বাড়ার সম্ভাবনা অনেক। এজন্য আগেভাগেই রাস্তায় নামছে এসব বাস।

বিআরটিএ সূত্র বলছে, ফিটনেস সনদ আছে রংপুর জেলায় এমন বাস-মিনিবাসের সংখ্যা ৫৩৪টি। অথচ এ জেলার সড়ক-মহাসড়কে চলাচল করে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাস। তাহলে অনুমোদনের তুলনায় এতো এতো অবৈধ বাস চলছে কিভাবে তার কোনো সদুত্তর নেই কারও কাছে।

এদিকে ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলোর চেহারা বদলের কর্মযজ্ঞ প্রকাশ্যে চললেও এ ব্যাপারে তেমন কোনো তৎপরতা নেই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)।

রংপুর বিআরটিএ অফিসের মোটরযান পরিদর্শক মো. নজরুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সকাল থেকেই সড়কে ফিটনেসবিহীন, অবৈধ ও ত্রুটিযুদক্ত যানবাহন ঠেকাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা শুরু হবে।

বিজ্ঞাপন

তবে ওয়ার্কশপে ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলোর চেহারা বদলের কর্মযজ্ঞ সম্পর্কে তার জানা নেই জানিয়েছে বিআরটিএ’র এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ওয়ার্কশপগুলোতেও মনিটরিং করা হবে।’

পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিটনেসবিহীন এসব যানবাহন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিতে হাইওয়ে পুলিশ এবং প্রশাসনকে বহুমাত্রিক তৎপরতা চালানোর তাগিদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান রিপনের।

এই যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘প্রায় দেড় কোটি মানুষ ঈদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করবেন। এই বিপুলসংখ্যক ঈদযাত্রীর ৬০ শতাংশ অর্থাৎ ৯০ লাখ মানুষ ব্যবহার করবে সড়কপথ। প্রতি বছরই ঈদে সড়কে দুর্ঘটনায় ঝড়ে পড়ে শতাধিক প্রাণ। ঈদকে কেন্দ্র করে জেলা ও রাজধানীতে চলাচলকারী অনেক বাস কিন্তু এসব বাসের দূরপাল্লায় যাওয়ার মতো নেই পর্যাপ্ত ফিটনেস, চালকদেরও ধারণা নেই দূরের সড়ক সম্পর্কে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি মাথায় নিয়েই যাতায়াত করে এসব পরিবহন। তাই ঝুঁকি বিবেচনায় জেলা প্রশাসন ওয়ার্কশপগুলোতে নিয়মিত তদারকি করলে এ ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো নামানের উদ্যোগ অনেকটা কমে যাবে।’

সারাবাংলা/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন