বিজ্ঞাপন

কাটা যাবে না গাছ, অক্ষত থাকবে দ্বিতল সড়ক— ২ মন্ত্রীর নির্দেশ

April 3, 2024 | 9:55 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্প (গাড়ি ওঠা-নামার পথ) নির্মাণের জন্য কোনো ধরনের গাছ না কাটার নির্দেশ দিয়েছে দুই মন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) মৌখিকভাবে এ নির্দেশ দেন।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৩ এপ্রিল) এ নির্দেশনা পাবার নগরীর টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউণ্ড পর্যন্ত দ্বিতল সড়ককে অক্ষুন্ন রেখে র‌্যাম্প নির্মাণের বিকল্প উপায় খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস।

জানা গেছে, র‌্যাম্প নির্মাণের জন্য সিডিএর গাছ কাটার উদ্যোগ নিয়ে নাগরিকদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে বুধবার দুপুরে দুই মন্ত্রী টেলিফোনে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় গণপূর্তমন্ত্রী কোনো ধরনের গাছ না কেটে, পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে এবং দ্বিতল সড়কের নান্দনিকতা অক্ষুন্ন রেখে র‌্যাম্প নির্মাণের বিকল্প পথ বের করার নির্দেশনা দেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সিডিএ চেয়ারম্যানকে দ্বিতল সড়কের গাছ না কাটার অনুরোধ করেন।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি সংস্থা।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ‍গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মৌখিকভাবে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। গাছ না কাটতে বলেছেন। দ্বিতল সড়কটি এখন যে অবস্থায় আছে, সেভাবেই যেন থাকে সেটা বলেছেন। আমরা অবশ্যই মন্ত্রী মহোদয়দের নির্দেশ অনুসরণ করব। দ্বিতল সড়কের নান্দনিক সৌন্দর্য্য অবশ্যই অক্ষুন্ন থাকবে। র‌্যাম্প বানানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত থাকবে। আমরা বিকল্প কোনো উপায়ে র‌্যাম্প নির্মাণ করা যায় কি না সেটা খতিয়ে দেখছি।’

সিডিএর কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান গাছ কাটার সিদ্ধান্তের বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের আগে অবহিত করেননি। বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে গাছগুলো চিহ্নিত করার পরই সেটি জানাজানি হয়। এর মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ শুরু হয়।

বিজ্ঞাপন

প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘দ্বিতল সড়ক কিন্তু আমরাই (সিডিএ) বানিয়েছি। এটি আগে একমুখী দুই লেনের সড়ক ছিল। ১৯৮০-৮১ সালের দিকে তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলীর নকশা অনুযায়ী আরেকটি দুই লেনের সড়ক নির্মাণ হয়। এরপরই সেটি দ্বিতল সড়কের আদল ধারণ করে। দুই সড়কের বিভাজকে তখন সিডিএর পক্ষ থেকেও গাছ লাগানো হয়েছিল। সুতরাং আমাদের তৈরি সড়ক যাতে অক্ষুন্ন থাকে, এ ব্যাপারে আমাদের অবশ্যই দায়বদ্ধতা আছে। আমরা তো এমন একটি নান্দনিক সড়ককে ধ্বংস করে দিতে পারি না।’

সিআরবি পাহাড়ের পাদদেশে দ্বিতল সড়ক হিসেবে পরিচিত নগরীর টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ড অংশে সম্প্রতি ৪৬টি গাছ কাটার উদ্যোগ নিয়ে সেগুলো রং দিয়ে চিহ্নিত করে সিডিএ। বিষয়টি জানাজানির পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

সোমবার (১ এপ্রিল) নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন সংগঠন সমাবেশ করে সিডিএকে গাছ কাটার সিদ্ধান্ত বাতিলের আহ্বান জানায়। সিপিবি, বাসদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনও বিবৃতি দিয়ে একই আহ্বান জানায়। এ প্রেক্ষাপটে সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অনুপম সেন মঙ্গলবার সিডিএ চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে গিয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকেই সিডিএ চেয়ারম্যান গাছ কাটার সিদ্ধান্ত থেকে আপাতত সরে আসার কথা জানান।

বিজ্ঞাপন

নগরীর লালখানবাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করেছে সিডিএ। এখন সেই এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি ওঠানামার জন্য ১৫টি র‌্যাম্প নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর মধ্যে জিইসি মোড়ে একটি, টাইগারপাসে দুটি, আগ্রাবাদে চারটি, ফকিরহাটে একটি, নিমতলায় দুটি, সিইপিজেডে দুটি এবং কেইপিজেড এলাকায় দুটি র‌্যাম্প থাকবে। আগ্রাবাদ এলাকার চারটি র‌্যাম্পের মধ্যে জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর সড়কে একটি, ঢেবারপাড় সড়কে একটি এবং আগ্রাবাদ এক্সেস সড়কে হবে দুটি র‌্যাম্প।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন