বিজ্ঞাপন

বন্ধুকে গলাটিপে হত্যার পর ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি

April 6, 2024 | 7:07 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে তিন দিন আগে তালাবদ্ধ বাসা থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধারের পর তার মৃত্যুরহস্য উদঘাটন করেছে বায়েজিদ বোস্তামি থানা পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে ওই যুবকের এক বন্ধুকে।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ জানিয়েছে, জুনায়েদ হোসেন সিজার (২১) নামে ওই যুবককে তার বন্ধু শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে গলাটিপে হত্যা করেছে। এরপর ওই বন্ধু নিহতের মাকে ফোন করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। গ্রেফতারের পর সে দাবি করেছে, নিহত জুনায়েদের সম্মতিতে তার মায়ের কাছ থেকে টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একাই টাকা আত্মসাতের লোভে পড়ে সে হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) রাতে নগরীর কোতোয়ালি থানার ডিসি হিল এলাকা থেকে মেশকাতুর রহমান মেশকাত (২০) নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করে বায়েজিদ বোস্তামি থানা পুলিশ। তার বাড়ি আনোয়ারা উপজেলায়।

এর আগে, বুধবার রাতে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার হাজিরপুল এলাকায় একটি ভবনের চতুর্থ তলার এক বাসার বাথরুম থেকে তিন দিন ধরে নিখোঁজ জুনায়েদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বাসা থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়ায় জরুরি সেবা নম্বর ট্রিপল নাইনে কল পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।

বিজ্ঞাপন

মৃত জুনায়েদ মীরসরাই উপজেলার ওসমানপুর গ্রামের প্রবাসী আবু জাফরের ছেলে। তিনি পটিয়া মাদরাসার হিফজ বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। তাকে খুন করা হয়েছে বলে সন্দেহ করছিল পুলিশ।

পুলিশ জানায়, জুনায়েদ ও মেশকাতের বাসা কাছাকাছি ভবনে। মেশকাত ও করিম যে বাসা থেকে লাশ উদ্ধার হয়েছে সেখানে ভাড়া থাকতো। তবে রমজান শুরুর পর করিম বাড়ি চলে গেলে মেশকাত একাই সেখানে থাকতো। তিন জনই মাদরাসার সাবেক ছাত্র এবং কোরআনে হাফেজ। জুনায়েদ প্রায়ই ওই বাসায় গিয়ে মেশকাতের সঙ্গে আড্ডা দিত।

বায়েজিদ বোস্তামি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সঞ্জয় কুমার সিনহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘জুনায়েদের বাবা জমি কেনার জন্য কিছু টাকা পাঠিয়েছিল। সেটা বন্ধু মেশকাতের সঙ্গে সে শেয়ার করেছিল। এর মধ্যে একটি ঘটনা ঘটে। জুনায়েদ স্থানীয় মসজিদে তারাবির নামাজ পড়িয়ে ছয় হাজার টাকা আয় করে। তার মা সেই টাকা খুঁজলে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। অভিমান করে ১ এপ্রিল জুনায়েদ বাসা থেকে বেরিয়ে মেশকাতের কাছে যায়।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘মেশকাতের তথ্যানুযায়ী, জুনায়েদ ও সে মিলে অপহরণের নাটক সাজিয়ে মায়ের কাছ থেকে টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছিল। এর মধ্যে জুনায়েদ মায়ের ওপর অভিমান করলে বিষয়টি লুফে নেয় মেশকাত। এক পর্যায়ে জুনায়েদকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করে মেশকাত। অজ্ঞান করার পর সে ভাবে, যেহেতু ঘটনা একটা ঘটিয়ে ফেলেছে, এখন জুনায়েদকে বাঁচিয়ে রাখলেই সে বরং ফেঁসে যাবে। তখন সে জুনায়েদকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।’

ওসি সঞ্জয় জানান, ১ এপ্রিল জুনায়েদ বাসাটিতে যাওয়ার পর মেশকাত তাকে ঘুমের ওষুধ মেশানো শরবত খেতে দিয়েছিল। সেটি খাবার পর জিসান দুর্বল হয়ে গেলে তাকে বাথরুমের ভেতর ঢুকিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। পরে শ্বাসরোধ করে তাকে খুন করে রাত ৯টার দিকে বের হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে আবার এসে জিসানের গলা চেপে ধরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে তার মোবাইল নিয়ে ঘরে তালা দিয়ে চলে যায়।

মেশকাত পরে জিসানের নম্বর থেকে তার মাকে ফোন করে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। কল রেকর্ডটি তার এক বন্ধুকে শোনালে তিনি সেটি মেশকাতের বলে শনাক্ত করে। মেশকাত জুনায়েদের মোবাইলটি আনোয়ারায় নিয়ে বিক্রি করে দেয়। সেই মোবাইলের সূত্রে মেশকাতের অবস্থান শনাক্ত করে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন