বিজ্ঞাপন

অন্য এক আঁধার (তৃতীয় পর্ব)

April 10, 2024 | 2:50 pm

ইকবাল খন্দকার

। পাঁচ।

বিজ্ঞাপন

সুমি দেখতে পায় না ছেলেটাকে।
তাই সে রিকশাওয়ালার দিকে তাকায়।
চোখের ভাষায় জানতে চায়- ছেলেটা কোথায় ছিল?

রিকশাওয়ালা ডান হাতের আঙুল সোজা করে চিপাগলির মুখ এবং এর আশপাশের জায়গা দেখায়। বলে- আমি শিওর, এখনও ওইখানেই আছে। কিন্তু শরমের চোডে সামনে আইতাছে না। হয়তো কোনওকিছুর আড়ালে দাঁড়ায়া রইছে। আপনে একটা কাজ করেন। ফোন দেন। ফোন দিয়া কন, শরমের কিছু নাই। চইলা আসো। রিকশাঅলা আমার পরিচিত। কাউরে কিছু কইবো না। দেন একটা ফোন। আর আপনে দিতে না চাইলে নম্বরটা দেন। আমি দেই।
সুমি জানায় কে তাকিয়ে ছিল, সে জানেই না। অতএব তার কাছে ওই লোকের নাম্বার থাকার কোনও কারণ নেই। রিকশাওয়ালা কাশির শব্দের মতো শব্দ করে হাসে। যে হাসি বলে দেয়, সুমির কথা সে বিশ্বাস করতে পারেনি। এছাড়া তার চোখও ঘুরতে থাকে চারপাশে। আর খুঁজতে থাকে ছেলেটাকে। এমন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খোঁজে, যেন এক্ষুনি পেয়ে যাবে। সুমি বলে- আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। আপনি চলেন তো!
: ঠিক আছে। তয় একটা অনুরোধ করি আফা। আর যা-ই করেন, ভুল কইরেন না। বলতে বলতে রিকশার গতি বাড়ায় রিকশাওয়ালা।
: ভুল! ভুল কিসের?
: আপনেরে দেইখাই বোঝা যাইতাছে, আপনে বিবাহিত। মানে কারো না কারো বউ। আর যেয় চিপাগলির মুখে দাঁড়ায়া আপনের দিকে তাকায়া ছিল, তারে দেইখাই বোঝা গেছে বাদাইম্যা একটা পোলা। এই ধরনের পোলাপালের কাজই হইলো মানুষের বউয়ের পিছনে ঘোরা, সুখের সংসারে আগুন লাগানি। আফা, তাগোরে সুযোগ দেওয়া উচিত না।
: দেখেন ভাই, আপনি কিন্তু আমাকে ভুল বুঝছেন।
: ভুল বুইঝা থাকলে মাফ চাই। আরও মাফ চাই একটু আগের কথাগুলার লাইগা।
: কোন কথা?
: আমি আপনেরে বলছিলাম না তারে ফোন দিয়া বলার লাইগা, সে যাতে আইসা আপনের পাশে বসে? কথাটা বলা অন্যায় হইছে। আবেগে বইলা ফেলছিলাম। মাফ কইরা দেন।
: ঠিক আছে, মাফ করে দিলাম। আপনি আরেকটু তাড়াতাড়ি চালান।
: জি আফা।

এবার রিকশার গতি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। তবে শংকা কমে না সুমির। সে ডানে-বামে তাকাতেই থাকে। তাকায় পেছনেও। আর তা আড়চোখে দেখে রিকশাওয়ালা বলে- একটা বিষয় কী আফা, পুরুষ মানুষ দুনিয়ার সব কষ্ট সহ্য করতে পারে। কিন্তু নিজের ঘরের বউ আরেকজনের সাথে ফষ্টিনষ্টি করলে যেই কষ্টটা পায়, সেইটা সহ্য করতে পারে না। তখন হয় সে নিজের গলায় দড়ি দেয়, না হয় গলা টিপ্যা বউ মাইরা ফালায়। মোটকথা, ঘটনা একটা ঘটায়াই ছাড়ে।
সুমি নীরব থাকে। বন্ধ রাখে এদিক ওদিক তাকানো। রিকশাওয়ালা বলে- আমার কথায় আপনে বিরক্ত হইছেন, এইটা আমি বুঝতে পারছি। তয় কথাগুলা কিন্তু কারণ ছাড়া কই নাই। আমি কাছেই থাকি। এই রাস্তা দিয়া প্রায়ই যাওয়া-আসা করি। যেই পোলাডার কথা কইলাম, তারে কিন্তু আজকা প্রথম দেখি নাই। আরও এক-দুইদিন ওই জায়গায়ই ঘোরাঘুরি করতে দেখছি। তার মানে হইলো, সে আপনের পিছনে ভাল কইরা লাগছে। কিন্তু যতই লাগুক, আপনে শক্ত থাকলে কিচ্ছু করতে পারব না।
: ছেলেটা দেখতে কেমন, একটু বলবেন?
রিকশাওয়ালা বলতে চায়। কিন্তু সুমিই হাত উঁচু করে তাকে থামিয়ে দেয়। কারণ, তার মোবাইল বাজতে শুরু করেছে। সে ভ্যানিটি ব্যাগের চেইন খোলে। দেখে রনি ফোন করেছে। সুমি ফোনটা রিসিভ করে জানায় কাছাকাছি চলে এসেছে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। আর জানতে চায় সে কোথায় আছে, নির্ধারিত জায়গায় পৌঁছুতে তার কতক্ষণ লাগবে। রনি জানায়, সে আরও আগেই পৌঁছে গেছে। এখন চা খাচ্ছে।
সুমি কথা শেষ করে ফোন রাখে। তারপর রিকশাওয়ালাকে আবার জিজ্ঞেস করতে চায় ছেলেটা দেখতে কেমন। বয়স কত হবে। কিন্তু জিজ্ঞেস করে না ভয়ে। যদি তার উত্তর লম্বা হয়! যদি এই লম্বা উত্তর শেষ হওয়ার আগেই রিকশা পৌঁছে যায় গন্তব্যে! আর যদি রনি শুনে ফেলে! অথবা রিকশাওয়ালাই যদি আগ বাড়িয়ে তাকে সব বলে দেয়! যদি তার মনে সন্দেহের জন্ম নেয়! যদি এর জেরে ভেঙে যায় সাজানো গোছানো সংসারটা!
: ঠিক আছে, রাখেন। সামনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলে সুমি।
: জি আফা?
: বললাম, রাখেন।
: ক্যান যাইবেন না?
: যাবো। এখানে একটু কাজ আছে তো! কাজটা সেরে হেঁটে হেঁটে চলে যাবো।
রিকশাওয়ালা সুমির দিকে তাকায়। তাকানোটা একটু কেমন যেন। প্রশ্ন মেশানো, অবিশ্বাস মেশানো। সুমি তবু নির্ভারই থাকে। ভাড়া দেয়। তারপর হাঁটতে শুরু করে মাটির দিকে তাকিয়ে। তবে বেশি দূর এগোতে পারে না। পাঁচ-ছয় কদম এগোতেই পেছন থেকে ডাক শুনতে পায় সে। আর ডাকটা দেয় রিকশাওয়ালা। সুমি দাঁড়ায়। রিকশাওয়ালার দিকে তাকায়ও। তবে নড়ে না। কিছু জিজ্ঞাসাও করে না। শুধু অপেক্ষায় থাকে ডাকের কারণ শোনার জন্য।
রিকশাওয়ালা রিকশাটা রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রেখে সুমির কাছে আসে। বলে- আপনে জানতে চাইছিলেন পোলাডা দেখতে কেমন। আমিও উত্তর দিতে চাইছিলেন। তয় তখন উত্তর দিলে পুরাপুরি সঠিক হইতো না। কারণ, আজকা-সহ তারে আরও এক দুইদিন দেখলেও খুব একটা মনোযোগ দিয়া দেখি নাই। কিন্তু এইমাত্র পুরা মনোযোগ দিয়া দেখলাম। এখন উত্তরটা সঠিকভাবে দিতে পারমু। দিমু? নাকি আপনের বেশি তাড়া?
: আপনি কি এইমাত্র তাকে আবার দেখেছেন? ভয়ে শুকিয়ে আসা গলা কোনওমতে ভিজিয়ে নিয়ে প্রশ্নটা করে সুমি।
: জি। সে আমাগোর পিছনে পিছনেই আসছিল।
: কিন্তু কীভাবে? আপনি তো রিকশা অনেক স্পিডে চালিয়েছেন।
: তা তো জানি না। তয় আমার মনে হইতাছে, সেও রিকশায় উঠছিল। রাস্তায় কত কত রিকশা! কোনডায় উইঠা বইসা ছিল কেডা জানে! আমরা তো খালি ডাইনে-বাঁয়ে খুঁজছি। কোনও রিকশার দিকে তো তাকাই নাই।
: তাকে দেখামাত্রই আপনি আমাকে ডাক দিলেন না কেন?
: দিছি তো। আমার ডাক শুইনাই সে এক দৌড়ে ওই বাড়িটার পিছনে চইলা গেল। তারপরে কই গেছে আল্লাহ মালুম।
: এটা কোনও কথা হলো? আপনার উচিত ছিল না তার পেছন পেছন যাওয়া?
রিকশাওয়ালা নিরুত্তর থাকে। তারপর সুমি হাঁটা শুরু করতে চাইলে সে বলে- এইগুলা কিচ্ছু না আফা। আল্লায় আপনেরে রূপ দিছে, গুণ দিছে। এইরকম দশটা-বিশটা পোলা আপনের পিছনে ঘুরতেই পারে। এইটার লাইগা আপনেও দায়ী না, তারাও দায়ী না। কারণ, সবাই সুন্দরের কাঙাল। কিন্তু আপনে যেহেতু আরেকজনের বউ, আপনের বড় একটা দায়িত্ব আছে। কী দায়িত্ব? যেকোনও কায়দায় নিজেরে ‘কন্টোল’ করতে হইবো।
এবার আর দাঁড়িয়ে থাকে না সুমি। কারণ, অপরিচিত কারো মুখ থেকে আর কোনও জ্ঞানগর্ভ কথা শুনতে চায় না সে। অনেক হয়েছে। এখন সে প্রস্তুত স্বামীর কথা শোনার জন্য। হ্যাঁ, স্বামী তাকে জ্ঞানগর্ভ কথা না শোনালেও তিতে কথা শোনাতেই পারে। কারণ, সে অনেক দেরি করে ফেলেছে। কখন যাবে হাসপাতালে? এখান থেকে হাসপাতাল তো আর কম দূরে না!

বিজ্ঞাপন

রনি আবার ফোন দেয়। সুমি ধরে না। যেহেতু কাছাকাছি চলে এসেছে। এরপর এক মিনিট পার হতে না হতেই দেখা হয়ে যায় দুজনের। রনি খালার চিকিৎসার সর্বশেষ খবর জানাতে চায়। কিন্তু সুমির মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝে ফেলে, তার মন ভাল নেই। সে জানতে চায় কী হয়েছে। সুমি কেঁদে ফেলে। আর বলে দেয় যা যা হয়েছে।

রনি জানায় হাসপাতালে যাবে না। এরপর সে রিকশা ডাকে। সুমি জানতে চায় কোথায় যাবে। সে রিকশায় উঠতে উঠতে বলে- গেলেই বুঝতে পারবে।

। ছয়।

বিজ্ঞাপন

সুমিকে নিয়ে থানায় যায় রনি।
দেখা করে ওসি সাহেবের সঙ্গে।
বিবরণ দেয় গোটা ঘটনার।

ওসি সাহেব মনোযোগ দিয়ে শোনেন সব কথা। তবে কোনও মন্তব্য করেন না। আর এমন নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে থাকেন, যেন তার তন্দ্রা চলে এসেছে। সুযোগ পেলে ঘুমিয়েও পড়তে পারেন। যা একদমই ভাল লাগে না রনির। সে বিরক্ত হয়, মনে মনে ক্ষুব্ধ হয়। আর এদিকে সুমি ডুবতে থাকে হতাশায়। থানায় এসে অভিযোগ করার পর পুলিশ কোনও ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি না নিয়ে বসে বসে ঝিমুবে, এমনটা তার কল্পনায়ও ছিল না। সে উঠে পড়তে চায়।
স্ত্রীকে বসে থাকার আদেশ দেয় রনি। আর ঝাঁঝালো গলায় বলে- এত সহজে ছেড়ে দেওয়ার লোক আমি না। ওসি সাহেব যদি কোনও ব্যবস্থা না নেন, তাহলে আমি এসপি সাহেবের কাছে যাবো। সেখানেও কোনও হেল্প না পেলে আরও উপরে যাবো। আর যদি কিছুতেই কিছু না হয়, তাহলে সংবাদ সম্মেলন করবো। তখন দেখবো সম্মানটা আমার যায়, নাকি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের যায়। আসলে পুলিশ যদি নিজেদের সম্মান নিজেরা ধরে রাখতে না পারে, তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।
: একটু বসেন। ঝাঁঝালো কথাগুলো বলা শেষ করে রনি সস্ত্রীক বসা থেকে উঠে পড়তে চাইলে অনুরোধের সুরে বলেন ওসি সাহেব।
: আর বসে কী হবে? শুধু শুধু আপনার ঘুমের ডিস্টার্ব।
: আমি আপনার সঙ্গে একান্তে একটু কথা বলতে চাই। কিছু মনে করবেন না ভাবি। আপনি একটু বাইরে গেলে ভাল হয়।

রনি এবার ভয় পেয়ে যায়। কারণ, সে ধরে নেয় তার কথায় ওসি সাহেব রাগ করেছেন। আর এখন তিনি সেই রাগ মেটাবেন। অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ তো করবেনই, গায়ে হাতও তুলতে পারেন। এরপর হয়তো ভরে দেবেন হাজতখানায়। পুলিশের হাতে তো মানুষকে ফাঁসানোর কায়দা-কৌশলের অভাব নেই। রনি সুমিকে ইশারা দেয়। যে ইশারার অর্থ- কোথাও যাবে না তুমি। যেভাবে বসে আছো, সেভাবেই বসে থাকো।
রনির ইশারা দেখে ফেলেন ওসি সাহেব। আর বুঝে ফেলেন এর অর্থ এবং কারণ। তাই তিনি হেসে বলেন- আপনি খামোখাই ভয় পাচ্ছেন রনি সাহেব। আমি বিশেষ কোনও উদ্দেশ্যে ভাবিকে বাইরে যেতে বলিনি। আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে, সিক্রেট কিছু কথা বলা। যেটা ভাবির সামনে আমি বলতে চাচ্ছি না। বেশি সময় নেবো না। চার-পাঁচ মিনিট। যান ভাবি, একটু ওয়েটিংরুমে গিয়ে বসেন। উনি এখনই চলে আসবেন।

এবার সুমি বের হয়ে যায় রুম থেকে। আর ওসি সাহেব চেয়ারের হেলানটা ছেড়ে দিয়ে টেবিলে কনুই গেড়ে বসেন। বলেন- রনি সাহেব, যা বুঝলাম, আপনার মাথা খুব গরম। অল্পতেই ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন। বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। মানুষকে ভুল বোঝেন। পরিস্থিতি কী, সেটা বোঝার চেষ্টা করেন না। কিন্তু আমাদের সবকিছুই বুঝতে হয়। চিন্তা-ভাবনা করতে হয় মাথা ঠান্ডা রেখে। এতে রহস্য বের করাটা সহজ হয়ে যায়।
: তা আমাদের ঘটনা থেকে কী রহস্য বের করলেন? কিছুটা ঠাট্টার সুরেই প্রশ্নটা করে রনি।
: বললে তো কষ্ট পাবেন। কিন্তু না বললেও চলছে না।
: আমি এত সহজে কষ্ট পাই না। আপনি যা বলতে চান, বলে ফেলেন।
: আপনাদের বিয়েটা নিশ্চয়ই প্রেমের না?
: কেন?
: পাল্টা প্রশ্ন না করে আমি যেটা জানতে চাই, সেটার উত্তর দেন। আপনারা প্রেম করে বিয়ে করেননি। ময়-মুরুব্বিরা বিয়ের আয়োজন করেছে। আপনারা শুধু কবুল বলেছেন। কী, ঠিক?
: জি।
: আপনার ওয়াইফ দেখতে কিন্তু মাশাআল্লাহ বেশ সুন্দর। আমি শিওর, বিয়ের আগে উনার কারো সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আর যে সমস্যা নিয়ে আপনি থানায় এসেছেন, এই সমস্যাটা ওই সম্পর্কেরই জের। মানে হলো, যে ছেলেটাকে দেখা যাচ্ছে, সে আপনার ওয়াইফের আগের প্রেমিক অথবা প্রেমিকের পক্ষের কেউ। আপনি কি বিষয়টা ক্লিয়ার? নাকি আরও ক্লিয়ার করতে হবে? যদি বলেন, করতে পারি। কী, করবো?

বিজ্ঞাপন

ঘটনা ভিন্ন খাতে ঠেলে দেওয়ার দায়ে ওসি সাহেবকে কড়া কথা শোনাতে চায় রনি। কিন্তু ভয়ও পায়। একটু আগে ঝাঁঝালো কথা শুনিয়ে পার পেয়ে গেছে। হয়তো বউ সামনে ছিল বলে। এখন যদি আর পার না পায়? যদি ওসি সাহেব ডাইরেক্ট অ্যাকশনে চলে যান? এই নিরিবিলি রুমে কে তাকে রক্ষা করবে? বাইরে গিয়ে কাউকে বলবে থানা থেকে মার খেয়ে এসেছি, সেই উপায়ও তো নেই। মান-ইজ্জত থাকবে না। সারাজীবন কথা শুনতে হবে মানুষের।
রনি কিছুক্ষণ মুখ ভার করে বসে থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে। ওসি সাহেব তাকে বসতে বলেন। কিন্তু সে বসে না। বরং চেয়ারের কাছ থেকে কিছুটা সরে দাঁড়ায়। ওসি সাহেব বলেন- বুঝতে পেরেছি, আমাকে আপনি সহ্য করতে পারছেন না। তবে এটা মনে রাখবেন, আমি যা বলেছি, পূর্ব-অভিজ্ঞতা থেকে বলেছি। রেগুলারই এই ধরনের কেস আমাদেরকে হ্যান্ডেল করতে হয় তো! রনি সাহেব, আপনাকে একটা পরামর্শ দিই। ওয়াইফকে কয়টা দিন ভালভাবে সময় দেন। দেখবেন আপনাদের দুইজনের মধ্যে অন্য কেউ ঢোকার চান্স পাবে না।
: আসি।
: অবশ্যই আসবেন। তবে একটা জিডি করে যান। তাহলে আমাদের পক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।
: তার আর দরকার নেই। যা শোনালেন, মন একেবারে ভরে গেছে। তবে আফসোসটা কোন জায়গায় জানেন? একজন ওসি হয়েও আপনার চিন্তা-ভাবনা একটা রিকশাওয়ালার মতো। শুধু চিন্তা-ভাবনা না, কথাবার্তাও। কিছু একটা হলেই নারীকে দোষারোপ! ছি ছি ছি!

এবার আর দাঁড়ায় না রনি। এক হাঁটায় রুম থেকে বের হয়ে চলে যায় গেটে। সুমি ওয়েটিংরুমের বারান্দায় দাঁড়ানো ছিল। স্বামীকে দেখে গেটে চলে যায় সেও। জানতে চায় ওসি সাহেব কী বললেন। রনি উত্তর দেয় না। শুধু গালাগাল করে। সুমি তাকে শান্ত হতে বলে। আর রিকশা খোঁজে। কিন্তু পায় না। এবার রনি বলে- বাদ দাও। রিকশায়ই উঠবো না। শালার রিকশাওয়ালা-পুলিশ দুইটাই বয়কট করলাম। কত বড় সাহস তোদের! কিছু একটা হলেই তোরা নারীর চরিত্রের দিকে আঙুল তুলিস!

একটা রিকশা পাওয়া যায়। সুমি উঠে বসে। কিন্তু রনি উঠতে চায় না। সে ঘোষণা দেয়, হেঁটে বাড়ি ফিরবে। সুমি তাকে পাগলামি করতে মানা করে। তারপর তার হাত ধরে টেনে তোলে রিকশায়। বলে- তুমি না বললেও আমি বুঝতে পেরেছি ওসি কী বলেছে। আমার ধারণা, পাড়ার লোকজন বা বিল্ডিংয়ের কমিটির কাছে বিচার দিলেও সেইম কথাই বলবে। কারণ, যত দোষ, নন্দ ঘোষ। আর এখানে নন্দঘোষটা হচ্ছি আমরা। মানে মেয়েরা।
: কিন্তু আমি তো তোমাকে কোনও দোষ দিচ্ছি না!
: আজকে দাওনি। কালকে হয়তো দেবে। কালকে না দিলে পরশু।
: পরশুরটা পরশু দেখা যাবে। অ্যাডভান্স কথা বলে এখন মেজাজটা আর খারাপ করো না তো!
: একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
: বলে ফেলো।
: যে সন্দেহটা রিকশাওয়ালা করলো, যে সন্দেহটা ওসি করলো, সেই সন্দেহটা কি তুমিও করো? প্লিজ, সঠিক উত্তর দেবে।

রনি সুমির দিকে তাকায়। তাকায় ঢিমেতালে প্যাডেল মারতে থাকা রিকশাওয়ালাও। এতে গায়ে যেন আগুন লেগে যায় রনির। সে ধমকাতে শুরু করে রিকশাওয়ালাকে। আর ভুলে যায় সুমির প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কথা। অবশ্য সেও মনে করিয়ে দেয় না। এই ভয়ে মনে করিয়ে দেয় না- যদি মাসুমের প্রসঙ্গ সামনে চলে আসে!

চলবে…

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন