বিজ্ঞাপন

সরকারি সরবরাহ বন্ধ, বাজারে কনডমের দাম দ্বিগুণ

April 12, 2024 | 11:55 am

মাহী ইলাহি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাজশাহী: হঠাৎ করেই রাজশাহী বিভাগে সরকারের পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের নামমাত্র মূল্যে কনডম বিতরণ কর্মসূচি স্থবির হয়ে পড়েছে। গত জানুয়ারি থেকে বন্ধ হয়ে গেছে সরবরাহ। এ সুযোগ নিচ্ছে ওষুধ কোম্পানিগুলো। ওষুধের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর দাম। অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে অস্থিতিশীল জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর বাজার। কনডমের দাম গত কয়েক মাসে বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত জানুয়ারি মাস থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর মধ্যে অন্যতম ‘কনডম’-এর পাশাপাশি ‘স্বস্তি’ ইনজেকশনের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এর পরপরই মার্কেটে কোম্পানিগুলো কনডমের বাড়িয়ে দিতে থাকে। চার মাসে এসব কোম্পানির কনডমের দাম দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গেছে।

রাজশাহীর সরকারি হাসপাতাল ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সরকারি ক্লিনিকগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত স্টক থাকতেই প্রতিবার কনডম ও স্বস্তি ইনজেকশনসহ অন্যান্য জন্মনিয়ন্ত্রণ উপকরণ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এবার হঠাৎ করেই জানুয়ারি মাস থেকে সরবরাহ বন্ধ। এতে সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছে মানুষ। জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমেও এর প্রত্যক্ষ নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নগরীর একটি সরকারি হাসপাতালে কনডম কিনতে এসেছিলেন রায়হান আলী। তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে নামমাত্র মূল্যে কনডম পাওয়া যায়। কোয়ালিটিও ভালো। কিন্তু গত দুই মাসে চারবার এসে ঘুরে গেছি। মার্কেটেও দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। গোপনীয় বিষয় হওয়ায় এটা নিয়ে কেউ কথা বলে না। এ সুযোগে কোম্পানিগুলো যা ইচ্ছা তাই করছে।

বিজ্ঞাপন

সরকারি একটি হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, সরকারি জহন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর মধ্যে কনডম ও স্বস্তি ইনজেকশনের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু হঠাৎ করেই এর সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে মাঠপর্যায়ের কর্মীরাও বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। কিন্তু কোনো কারণ তাদেরও জানানো হয়নি। কবে নাগাদ সরবরাহ আসবে, সে বিষয়েও কিছু বলা হচ্ছে না।

এদিকে নগরীর ফার্মেসিগুলো ঘুরে ও দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেও এসএমসির প্যানথার কনডম বিক্রি হয়েছে প্রতি প্যাকেট (এক প্যাকেটে তিন পিস কনডম) ১৫ টাকা দরে। সেই কনডমের দাম এখন প্রতি প্যাকেট ২৫ টাকা। এ ছাড়া ক্লাসিকের দাম প্রতি প্যাকেট ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫ টাকা, ইউ অ্যান্ড মি ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ৭০ টাকা, সেনশেসন ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ফার্মেসির বিক্রয়কর্মীরা জানালেন, অন্যান্য ব্র্যান্ডের কনডমের দামও বেড়ে দ্বিগুণ, কোনো কোনোটির দাম তারচেয়েও বেশি হয়ে গেছে। এ ছাড়া কোনো কোনো দোকানে কনডমের প্যাকেটে বিক্রয়মূল্যের ছাপা অংশের ওপর স্টিকার লাগিয়ে তাতে বেশি দাম বসিয়েও বিক্রি করতে দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

নগরীর একটি ফার্মেসির দোকানি তানভির আলম বলেন, কনডমের দাম হঠাৎ করেই বেড়েছে। কী কারণে বেড়েছে, তা জানা নেই। হয়তো অন্য জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, তাই এর দামও বেড়েছে। তবে দাম বেড়ে যাওয়ায় কনডমের বিক্রিও কিছুটা কমেছে।

সরকারিভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রীর সরবরাহ বন্ধের বিষয়ে হাসপাতালগুলোর পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বা পরিবার পরিকল্পনা দফতরের কর্মকর্তারা কথা বলতে চাইছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিবার পরিকল্পনা দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, কনডমের সরবরাহ বন্ধ হয়েছে কী কারণে, তা জানা নেই। তবে বাজারে এত দাম বেড়ে যাওয়ারও কোনো যৌক্তিকা নেই। একটি কনডমের উৎপাদন খরচ সর্বোচ্চ ৩ টাকা থেকে ৫ টাকার মধ্যে। কিন্তু বিভিন্ন নামে বাজারে এসে তা ১০ থেকে ২৫ টাকা হয়ে যাওয়া কাম্য নয়।

জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের পরিচালক মো. এনামুল হক সারাবাংলাকে বলেন, জানুয়ারি পর্যন্ত কনডম ও স্বস্তি ইনজেকশনের সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল। এরপর সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ জানা নেই। তবে এরই মধ্যে বগুড়াসহ বেশকিছু জায়গায় কনডম চলে এসেছে। রাজশাহীতেও কয়েক দিনের মধ্যে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে আশা করছি। আর মার্কেটের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি জানা নেই।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন