বিজ্ঞাপন

ওই হাততালিটা কি পাবো আর কখনও: কাজী মারুফ

April 12, 2024 | 5:56 pm

আহমেদ জামান শিমুল

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী অভিনেতা কাজী মারুফ। অর্ধ যুগ পর তার অভিনীত ছবি ‘গ্রীণকার্ড’ মুক্তি পেয়েছে এবারের ঈদে। তার সঙ্গে কথা বলেছেন সারাবাংলার সিনিয়র নিউজরুম এডিটর আহমেদ জামান শিমুল।

  • ‘গ্রীণকার্ড’-এ অভিনয়ের পাশাপাশি কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার হিসেবেও কাজ করেছেন। এখানে মূলত আমরা কী দেখতে পাবো।

গল্পটা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের। এখানকার প্রবাসীদের নিয়ে আপনি কোন কিছু বানাবেন কিন্তু তার সঙ্গে ‘গ্রীণকার্ড’ বিষয়টা সম্পৃক্ত থাকবে না—তা হবে না। আমাদের ছবিতে ‘ডানকি’র মতো বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা দেখানো হয়নি। আমরা দেখিয়েছি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ার পরে কী হয় ─ওখানে টিকে থাকার গল্প, গ্রীণকার্ড পাওয়ার গল্প। গ্রীণকার্ড জিনিসটা অনেকটা আমাদের দেশের জাতীয় পরিচয়পত্রের মত। যার মাধ্যমে আপনি ওখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পাবেন, বাড়ি-গাড়ি কিনতে পারবেন। যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিক যা সুবিধা পায় মোটামুটি তার সব সুবিধা পাবেন। এর কয়েক বছর পর আপনি তাদের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। সেটা পেলে তখন তাদের পাসপোর্ট পাবেন। তবে এর আগেই ভিসা ছাড়ায় আপনি যুক্তরাষ্ট্রে গ্রীণকার্ডধারী হিসেবে যাওয়া আসা করতে পারবেন যেকোনো সময়।

বিজ্ঞাপন
  • পুরো ছবির শুটিং যুক্তরাষ্ট্রে করেছেন এবং বেশ অনেকদিন ধরেই করেছেন।

আমরা ২০২২ এ শুটিং শুরু করেছিলাম, গেল বছর শেষ করি। মূলত আমাদের সঙ্গে যারা কাজ করেছিল, তাদের বেশিরভাগই সিনেমা করেন না। যদিও তাদের অনেকেই অভিনয়শিল্পী, কিন্তু সেখানে বর্তমানে অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত। তাছাড়া ওখানে ছবি নির্মাণ ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আর সেখানে সময়টা বের করাটা কঠিন।

  • শুটিংও তো বেশ ব্যয়বহুল ছিল?

এখানে রাস্তায় দাঁড়িয়ে এক কাপ চা খেলে খরচ হয় সর্বোচ্চ? ১০ টাকা? ওখানে ১ ডলার। ২০ জনকে নিয়ে খেলে লাগবে ২০ ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় আড়াই হাজার টাকা। তাহলে তো এমনিতেই ব্যয়বহুল।

বিজ্ঞাপন
  • অভিনয়শিল্পী, লাইন প্রোডিউসার ও ক্যামেরা পার্সন ছাড়া বাকি সব টেকনেশিয়ান বাংলাদেশি ছিল না। তাদের সঙ্গে সমন্বয়টা কীভাবে করেছেন?

বেশ সময় লেগেছে। খুঁজতে হয়েছে অনেক। তাদের সঙ্গে অনেক মিটিং করতেছে। গল্প করতেছে হয়েছে। তাদেরকে বিশ্বাস করাতে হয়েছে নানান কিছু।

  • নুশরাত তিশম, নওশীন, হিল্লোল, ডিজে সোহেলসহ অনেক বাংলাদেশি শিল্পী ছবিটিতে অভিনয় করেছেন। ওনারা ছাড়া বাংলাদেশি কমিউনিটির সাহায্য কতটুকু পেয়েছেন?

অনেক পেয়েছি। কিন্তু যদিও আমি ওইভাবে চাইনি। তবে ওখানে সবাই খুব প্রশংসা করছে ছবিটি নিয়ে—‘প্রথমবারের মত কেউ আমাদের কষ্ট নিয়ে ছবি নির্মাণ করছে। যেমন আমাদের একদিনের শুটিংয়ের একটা গাড়ি দরকার ছিল। একজন আমাদেরকে তার গাড়িটা দিয়েছিল। প্রথমে কথা ছিল গাড়িটা মাত্র দুঘণ্টার জন্য লাগবে। কিন্তু আমাদের দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত লেগেছিল। পরবর্তীতে আমরা তাকে এ জন্য আলাদা করে পে করতে চেয়েছিলাম। কোন টাকা নিতে তিনি অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেছিলেন, এটা তো ভাইয়া আপনি আমাদের গল্প বানাচ্ছেন। এটা থেকে কেনো টাকা নিবো?

  • ‘ইতিহাস’ বা ‘অন্য মানুষ’-এর সময় দর্শকরা মারুফকে নিজেদের মধ্যে দেখতে পেত। এ ছবিতে কি সে মারুফকে পাবে দর্শকরা?

ইনশাআল্লাহ্‌ পাবে। দর্শকদের ছবিটি ভালো লাগবে। তবে আগে আমি যে ধরণের ছবি করতাম এটি সেগুলোর চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। মারামারি, কাটাকাটি, লাউড অ্যাক্টিং─এখানে পাবে না। এখানে বাস্তব নির্ভর মারুফকে পাবে। বাস্তবতা মানুষ কতটা নিতে পারবে সেটাই হলো ব্যাপার। নিতে পারা মানে, বাস্তবতা কীভাবে সিনেমায় গ্রহণ করতে পারবে সেটা দেখার বিষয়। কারণ, মানুষ সিনেমাতে মারতেছে কাটতেছে, ধরতেছে, মাটি ফাটতেছে—দেখে অভ্যস্থ। কিন্তু একজন সাধারণ মারুফ হেঁটে কিন্তু মাটি ফেটে যায় না। এটা কীভাবে নিবে সেটাই হলো কথা।

বিজ্ঞাপন

  • এ ছবিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আপনার মেয়ে আরিশা অভিনয় করেছে। বাবা হিসেবে নয়, একজন অভিজ্ঞ অভিনেতা হিসেবে তার অভিনয়ের মূল্যায়ন কীভাবে করবেন?

দেখেন ওতো একটা বাচ্চা মানুষ। ওটা যেটা করেছে ফিল ন্যাচারাল কাজ করেছে। সিনেমা কী জিনিস এখনো বুঝে না। ওর কাছে ব্যাপারটা বেশ কষ্টের ছিল। কিন্তু ওই বলেছিলো, বাবা আমি সিনেমা করবো। আমি তাকে বলেছিলাম, ঠিক আছে তোমার জন্য একটা সিনেমা বানাবো। বানিয়েছি। ওকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিতাম ও শুনতে চাইতো না। এর জন্য ওকে বকা দিলে ও খুব কষ্ট পেতো। পরবর্তীতে গল্প, ‘আমি আর করবো না, আমি আর করবো না।’ দুদিন শুটিং প্যাক করতে হয়েছিল, ও শটই দেয় নাই।

  • সেক্ষেত্রে নিশ্চয় তাকে পরবর্তীতে অনেক আদর-স্নেহ দিয়ে আবার কাজটা করাতে হয়েছিল?

হ্যাঁ, অনেক আদর দিয়ে বুঝিয়ে তারপর কাজটা করাতে হয়েছিল। রাতের বেলা তাকে বুঝিয়ে সকালে শুটিংয়ে নিয়ে যেতাম।

  • ভবিষ্যতে সে অভিনয়শিল্পী হতে চাইলে হতে দিবেন?

আমার তরফ থেকে বাধা থাকবে না। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি তাতে মনে হয় সে নিজেই হতে চাইবে। কারণ ও ভেবেছিল, শুটিং করা অনেক মজার হবে। কিন্তু এত কষ্ট করতে হয়েছে, এখন নামই শুনতে চায় না।

বিজ্ঞাপন
  • কাজী হায়াৎ দেশ থেকে অনলাইনে এবং রওশান আরা নীপা যুক্তরাষ্ট্রে বসে যৌথভাবে ছবিটি পরিচালনা করেছেন। এ বিষয়টির সমন্বয় কীভাবে হয়েছিল?

এটির সমন্বয় আমি করেছিলাম। দুদেশের তো দিন-রাত আলাদা ছিল। যার কারণে সময় মেলানো কঠিন ছিল। আমি ফোন দিয়ে আব্বাকে বলতাম, এটা এটা করবো। তিনি জিজ্ঞেস করতেন, কী কী করছো। কোন শট নিচ্ছো। কোনটা আগে নিচ্ছো, কোনটা পরে নিচ্ছো।

  • এটা নিয়ে কোনো সমস্যা তৈরি হয়নি?

না, তৈরি হয়নি।

  • ঈদ ছাড়া অন্য সময় মুক্তি দিলে কি আর ভালো হতো না আপনাদের জন্য?

মুক্তি তো যখন ইচ্ছে তখন দিতে পারতাম। কিন্তু সাধারণ মানুষ তো এখন আর ঈদ ছাড়া ছবি দেখে না বলে আমার মনে হয়। তা না হলে ঈদ ছাড়া কোন ছবির একটা শো হাউজফুল হয়েছে, দেখাতে পারবেন? আগে কিন্তু ২০১৫ পর্যন্ত দেখেছি, ঈদ ছাড়া হাউজফুল হতে। গতবছর ‘প্রিয়তমা’, ‘সুড়ঙ্গ’-এর পর কোন ছবিটার শো ফুল হয়েছে? এমনকি ‘ডানকি’র শোও পূর্ণ হয়নি। এটাই বাস্তব চিত্র। মানুষের সিনেমা হলের প্রতি আগ্রহ কমে গেছে। কেন আমি জানি না। হতে পারে তাদের হাতে সময় কমে গেছে অথবা অন্য কোন কারণ। তবে উৎসবমুখর সময়ে তারা এখনও হলে যায়। এ জিনিসটাকে মাথায় রেখে আমি ছবিটা ঈদে মুক্তি দিয়েছি।

  • আপনি কি অভিনয়ে আবার নিয়মিত হবেন?

ইচ্ছে তো আছে, কাজ করার। শাবনূর অস্ট্রেলিয়ায় থাকে, সেও কাজে ফিরতে চাইছে। যারাই সিনেমা থেকে চলে যায়, তাদের সবাই কিন্তু এ জায়গাটা মিস করে। দর্শকদের ভালোবাসা, হাততালি মিস করে। কিন্তু আমি একটা বাস্তব কথা বলি, ওই হাততালিটা কি পাবো আর কখনও? চম্মাকলি সিনেমা হল একটা শো ফুল হলে ১৫৫০ জন ছবিটা দেখতো। ১৫৫০ জনের হাততালি আর ২৫০ জনের হাততালি কী এক? সিনেপ্লেক্সে হাততালিও দেয় না। শিসও বাজায়। তাহলে ওই যে অভিজ্ঞতাটা, ওই যে দর্শকদের ভালোবাসাটা─হতে পারে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই বা তাদের আর্থিক সংগতি নেই, অনেক বড়লোক হয়তো তারা না। কিন্তু তারাও মানুষ, তারাও বিনোদন নেওয়ার দাবি রাখে। তাদেরও সুন্দর একটি মন আছে। তাদের সে মনে তুমি যদি আঘাত করতে পারো, তাহলে সে মন দিয়ে তোমাকে ভালোবাসবে।

  • ইন্ডাস্ট্রি আবার ঘুরে দাঁড়াতে হলে কী করতে হবে বলএ আপনি মনে করেন?

প্রথমত সিনেমা হল বাড়াতে হবে। যে যে জায়গায় হল নষ্ট হয়ে গেছে সে সে জায়গায় হল বানাতে হবে। এটাও স্থায়ী সমাধান না। কারণ মানুষের এত সময় নেই সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখার। এফডিসি থেকে একটা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম করতে হবে। এ ঈদে ৫০টা ছবি যদি মুক্তি পেতো অসুবিধা তো হতো না। অনেক দর্শক আছে, হল নেই। সিস্টেমটা হতো ৩০ টাকার টিকেটের বিনিময়ে একবারের জন্য ছবিটা দেখা যাবে। এভাবে ১০ লাখ মানুষ যদি ছবিটা দেখে তাহলে কত টাকা? আর কিছু লাগে?

  • মাঝে বছরখানেক বাদ দিলে প্রায় ১ যুগ ধরে প্রযোজক সমিতি নেই। এটাও কি ইন্ডাস্ট্রির পিছিয়ে পড়াতে ভূমিকা রেখেছে?

ওইসব সমিতি-টমিতি দিয়ে কী হবে আমি জানি না। কিছু হয় না।

সারাবাংলা/এজেডএস

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন