বিজ্ঞাপন

চৈত্রের খরতাপে দু’দণ্ড শান্তি দিল সী-ওয়ার্ল্ডের ওয়েভপুল

April 12, 2024 | 8:48 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিনে ছিল সূর্যের চোখ রাঙানি। তাপদাহে অতীষ্ঠ জনজীবন। প্রখর রোদে তীব্র গরমের অস্বস্তি দিয়ে বিদায় নিচ্ছে চৈত্র। কিন্তু তাপদাহ আর ভ্যাপসা গরম কি ঈদের আনন্দে বাধা হতে পারে! অস্বস্তিকর আবহাওয়া মানুষকে ঘরে বেঁধে রাখতে পারেনি। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মানুষ দলে দলে ছুটেছে বিনোদন কেন্দ্রের দিকে।

বিজ্ঞাপন

চৈত্রের খরতাপে অনেককেই দু’দণ্ড শান্তি দিয়েছে ফয়’সলেকের সী-ওয়ার্ল্ডের কৃত্রিম সমুদ্র সৈকত বা ওয়েভপুল। কেউ বা আবার পতেঙ্গায় সমুদ্র সৈকতে হাওয়ায় ভাসিয়েছেন নিজেকে। চিড়িয়াখানায় তো রীতি মতো মানুষের ঢল নেমেছিল!

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সকালে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের পর বিকেলের দিকে কিছু মানুষ ছুটেছিল বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে। তবে তুলনামূলক বেশি ভিড় ছিল না। অনেকেই পারিবারিক আবহে স্বজনের সঙ্গে দিনটি কাটিয়েছেন। কিন্তু ঈদের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার (১২ এপ্রিল) সকাল থেকেই মানুষের আনাগোণা শুরু হয় বিনোদন কেন্দ্রে।

বিজ্ঞাপন

পাহাড়ঘেরা ৩৩৬ একরের ফয়’সলেক কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্কে শুক্রবার বিপুল জনসমাগম হয়। পার্ক কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, দূর-দূরান্ত থেকে আসা অন্তত ছয় হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে, যার মধ্যে বিদেশিরাও ছিলেন।

পাহাড়ের বুক চিড়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের আঁকাবাঁকা লেক, ওয়াটার পার্ক সী-ওয়ার্ল্ডের কৃত্রিম সমুদ্র, বেসক্যাম্প, অ্যামিউজমেন্ট পার্কের রাইড- উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না কোথাও। তবে সবচেয়ে বেশি সমাগম হয়েছে কৃত্রিম সমুদ্রে, যেখানে হাজারো নারী, পুরুষ, শিশু আনন্দে মেতেছিলেন। ডিজে গানের সঙ্গে তরুণ-তরুণীদের পানিতে দাপাদাপি, হইহুল্লোড়ে অন্যরকম আবহ তৈরি হয়।

 

বিজ্ঞাপন

সী-ওয়ার্ল্ডে সীতাকুণ্ড থেকে ১৩ বন্ধুর একটি দল আসে। তাদের একজন ফয়সাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখানে এসে আমাদের অনেক ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে কক্সবাজার বিচে এসেছি।’

কাপ্তাই থেকে স্বামী-সন্তান নিয়ে সী-ওয়ার্ল্ডে যাওয়া জান্নাতুল ফেরদৌস সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার ছেলে সিয়াম, তার বয়স এখন চার বছর। সে প্রথমবারের মতো সী-ওয়ার্ল্ড দেখছে। সে খুব খুশি। আমরাও খুব এনজয় করছি।’

অ্যামিউজমেন্ট পার্ক পরিচালনাকারী কনকর্ডের উপ-ব্যবস্থাপক (বিপণন) বিশ্বজিৎ ঘোষ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার গরম বেশি। এজন্য সী-ওয়ার্ল্ডে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি হয়েছে। সকাল থেকে প্রায় চার হাজার দর্শনার্থী সেখানে প্রবেশ করেছেন। গরমে পানিতে দাপাদাপি করে প্রশান্তি পেয়েছেন এবং নিজেদের আনন্দ উদযাপন করেছেন। লেক, ড্যান্সিং জোন, ফ্যামিলি পুলেও আড়াই হাজারের মতো দর্শনার্থী হয়েছে। বেসক্যাম্পে সাধারণত লোকজন কম হয়। আজ (শুক্রবার) ৩২ জন বিদেশি পর্যটক এবং ২০ জনের মতো দেশি পর্যটক সেখানে গেছেন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘ঈদুল ফিতরের দিন আধাবেলা আমরা পার্ক খোলা রেখেছিলাম। তবে প্রথমদিন আশানুরূপ সমাগম হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে সকাল ৯টায় খুলে দেওয়ার পর থেকে প্রচুর দর্শনার্থী এসেছে। সী-ওয়ার্ল্ড ৭টায় বন্ধ হয়েছে। ৮টায় পার্ক বন্ধ করা হয়েছে। তবে আমাদের রিসোর্ট এবং রেস্টুরেন্ট ২৪ ঘণ্টা খোলা আছে।’

টানা ১০দিন ধরে ফয়’সলেকে দর্শনার্থীর আসবে এবং অন্তত ৫০ হাজার সমাগম হবে বলে আশা করছেন বিশ্বজিৎ ঘোষ।

এদিকে, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা খুলে দেওয়া হয় সকাল ৮টায়। এর আগ থেকেই সেখানে দর্শনার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। দিনভর হাজার, হাজার মানুষের পদচারণায় মুখর ছিল পশুপাখিদের বিশাল আবাসটি।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সন্ধ্যা ৬টায় আমরা গেট বন্ধ করেছি। এ সময় পর্যন্ত ১৮ হাজার ২০০ দর্শনার্থী ভেতরে ঢুকেছিল। বেশি আগ্রহ দেখা গেছে বাঘশাবক, জলহস্তি ও সিংহের খাঁচার সামনে। এবার ব্যাপক দর্শনার্থী হবে, এটা আমরা আগেই ধারণা করেছিলাম। সেজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুরো চিড়িয়াখানা সিসি ক্যামেরায় মোড়ানো হয়েছে।’

স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় যাওয়া ব্যাংক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসমাইল সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদ, পহেলা বৈশাখ মিলিয়ে এবার ছুটি বেশি। এমনিতে তো সময় হয় না, ছুটিতে এসেছি। আমার বাচ্চারা চিড়িয়াখানার পশুপাখি দেখতে বেশি পছন্দ করে। কাল (শনিবার) দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছে আছে।’

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত পতেঙ্গায়ও সকাল থেকেই শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সী লোকজনের আনাগোণা শুরু হয়। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসে চড়ে লোকজন জড়ো হতে থাকেন সৈকতে। দুপুর গড়াতেই জনসমাগম বাড়তে থাকে। সৈকতে বসে গলা ছেড়ে গান গাওয়া, গরম পিঁয়াজু-কাঁকড়া ভাজি, ডাব, আনন্দের কমতি নেই !

উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্রের মধ্যে পারকি সমুদ্র সৈকত, মেরিড ড্রাইভ সড়কে জেলা প্রশাসনের ফ্লাওয়ার পার্ক, নগরীর পতেঙ্গায় বাটারফ্লাই পার্ক, কর্ণফুলী নদীর অভয়মিত্র ঘাট, নেভাল-টু, বহদ্দারহাট স্বাধীনতা পার্ক, আগ্রাবাদে কর্ণফুলী শিশু পার্ক, হালিশহর ও সীতাকুণ্ডে গুলিয়াখালী সাগরতীর, মীরসরাইয়ে মহামায়া লেক, ফটিকছড়ি চা বাগানেও গেছেন অনেক দর্শনার্থী। শাহ আমানত সেতু, সেতুর বাকলিয়া প্রান্তের দক্ষিণে নদীতীরে বাঁধ দিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তৈরি করা সড়কেও দর্শনার্থীর আনাগোণা দেখা গেছে। এ ছাড়া, নৌকায় চড়ে কর্ণফুলী ভ্রমণে বের হয়েছিলেন অনেকে।

নগরীর ১৩টি দর্শনীয় স্থান ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে নগর পুলিশ। এগুলো হলো- কোতোয়ালি থানা এলাকায় নেভাল-টু, সিআরবি ও ডিসি হিল, বাকলিয়ায় শাহ আমানত সেতু, চান্দগাঁওয়ে স্বাধীনতা পার্ক, ডবলমুরিংয়ে আগ্রাবাদ জাম্বুরি পার্ক ও শিশুপার্ক, পাহাড়তলীতে সাগরতীরে নিঝুম পার্ক, আকবর শাহ থানা এলাকায় ফয়’সলেক কনকর্ড পার্ক, বন্দরে আনন্দবাজার বেড়িবাঁধ এবং পতেঙ্গায় সমুদ্র সৈকত, নেভাল এবং বাটারফ্লাই পার্ক।

সিএমপির এডিসি-অপারেশন মো. জাহাঙ্গীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘দর্শনীয় স্থানগুলোতে বিপুল জনসমাগমের কারণে চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিংয়ের মতো অপরাধ যাতে না ঘটে, সেজন্য আমরা সজাগ আছি। সবগুলো বিনোদন কেন্দ্রে পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন আছে। এ ছাড়া, থানার পুলিশ ও টহল টিমও আছে। গোয়েন্দা টিমও আছে।’

কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে ট্রিপল নাইনে ফোন করে কিংবা নিকটস্থ পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতা নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

ছবি: শ্যামল নন্দী, স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন