বিজ্ঞাপন

রমনার বটমূলে হামলা: ২ যুগেও শেষ হয়নি বিচার

April 14, 2024 | 10:27 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানীর রমনা বটমূলে ২৩ বছর আগে পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে জঙ্গি হামলায় ১০ জন নিহত হয়। আহত হয় বেশ কয়েকজন। ঘটনার পর হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলাও হয়। এর মধ্যে বিচারিক আদালতে হত্যা মামলার বিচার শেষ হলেও উচ্চ আদালতে আটকে আছে। অন্যদিকে, বিস্ফোরক আইনে (বোমা হামলা) করা মামলাটি ২৩ বছরেও বিচারিক আদালতের গণ্ডিও পেরোতে পারেনি।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর রমনা বটমূলে ২০০১ সালে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি)। এ ঘটনায় হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনকে আসামি করে ওইদিনই রমনা থানায় নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা করেন।

দুই মামলার তদন্ত ও বিচারকাজ একসঙ্গে শুরু হলেও ২৩ বছরেও বিস্ফোরক মামলাটি বিচারিক আদালতেই ঘুরপাক খাচ্ছে। কারণ হিসেবে সাক্ষী হাজির না হওয়া, প্রতি বছর এই একই যুক্তি দিয়ে আসছেন রাষ্ট্রপক্ষ। অপরদিকে, রমনা বটমূলে হামলার ঘটনার প্রায় আট বছর পর দুই মামলায় ১৪ জনকে আসামি করে ২০০৮ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকার আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দায়রা জজ রুহুল আমিন প্রধান আসামি মুফতি হান্নানসহ আটজনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন। এ ছাড়া মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডও দেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

এর পর আসামিরা খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন। অন্যদিকে, মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) জন্য নিয়ম অনুযায়ী মামলাটি হাইকোর্টে যায়। যা এখন বিচারাধীন। আর বিস্ফোরক আইনের মামলাটি এখন ঢাকা মহানগর ১৫ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালে রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে।

হত্যা মামলায় বিভিন্ন সময়ে হাইকোর্টে আপিল শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা কারণে তা থেমে আছে। হত্যা মামলাটি অবশ্য বিচারের প্রথম ধাপ পেরিয়েছে ১০ বছর আগে। এরপর হাইকোর্টে এসে আটকে গেছে। ফলে গত ১০ বছরেও আসামিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অনুমোদন মেলেনি। বিভিন্ন সময়ে আদালতে উঠলেও অন্তত কয়েকশো বার শুনানি পিছিয়েছে।

এই মামলার দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে বিএনপি সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ চার আসামি এখনও পলাতক। তবে হুজি নেতা মুফতি হান্নানের ফাঁসি অন্য এক মামলায় কার্যকর করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আসামিপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির সারাবাংলাকে জানান, হত্যা মামলাটির আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্টে এসেছিল। এখন পর্যন্ত তিনটি কোর্টে মামলার শুনানি শুরু হয়েছিল। এমনকি আংশিক শুনানিও হয়েছিল। তবে রাষ্ট্রপক্ষ বারবার সময় আবেদন করেছে, তাই শুনানি শুরু হয়নি।

তবে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘হত্যা মামলাটি শুনানির জন্য হাইকোর্টের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে রয়েছে। আগামী মাসে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ মামলার আপিল শুনানির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওই বেঞ্চের একজন বিচারক আগে আইনজীবী হিসেবে এ মামলার কাজে যুক্ত ছিলেন। তাই তিনি শুনানি করতে পারেননি। এ কারণে হয়তো কিছুটা সময় লেগেছে। তবে এবার শুনানি হবে।’

বিস্ফোরক আইনের মামলা

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন।

এর মধ্যে সাবেক ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলায় করা মামলার রায় অনুযায়ী ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল রাতে মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ফলে রমনা বটমূলের বিস্ফোরক আইনের মামলা থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়।

এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মাওলানা তাজউদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান, মাওলানা আবু বকর, হাফেজ সেলিম হাওলাদার, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা আকবর হোসাইন, মাওলানা শাহাদাৎ উল্লাহ জুয়েল, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির ও মাওলানা শওকত ওসমান। এর মধ্যে তাজউদ্দিন, আবদুল হাই ও জাহাঙ্গীর পলাতক রয়েছেন।

তবে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের কারণে দীর্ঘদিন বিস্ফোরক মামলার বিচারকাজ থমকে ছিল। ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর ২০২১ সালে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষের তৎপরতায় ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ ওই ট্রাইব্যুনালেই সম্পন্ন হয়েছে। তবে দ্রুত বিচার আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বেশি থাকায় গত বছরের মার্চে বিস্ফোরক মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর সপ্তম আদালতে পাঠানো হয়। বর্তমানে ওই আদালতে মামলার বিচার থেমে আছে।

জানা গেছে, মামলাটি বর্তমানে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারা অনুযায়ী আসামি পরীক্ষা করার জন্য দিন ধার্য রয়েছে। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে আসামিদের আদালতে হাজির করা হচ্ছে না। ফলে এ মামলার বিচার কার্যক্রম স্থবির।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. মাহাবুবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাক্ষী না আসায় মামলার শুনানি হচ্ছে না। আরও দুই/তিন জন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। নয় তো আসামিরা এর সুযোগ নিতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিগগিরই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করার পাশাপাশি আসামিদের ৩৪২ ধারা পরীক্ষার জন্য রাষ্ট্রপক্ষ উদ্যোগ নেবে।’

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি (পাবলিক প্রসিকিউটর-পিপি) আব্দুলাহ আবু সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ মামলায় সাক্ষীরা একবার সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন। কিন্তু পরে ওই সাক্ষীদের সহজে পাওয়া যায়নি। দীর্ঘদিন হয়ে গেছে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিচারকাজ শেষ হওয়া উচিত।’

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন