বিজ্ঞাপন

মেয়েকে নিয়ে দেশত্যাগ জাপানি মায়ের, আদালত অবমাননার অভিযোগ

April 15, 2024 | 11:17 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বড় কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছেড়ে গেছেন জাপানি মা এরিকো নাকানো। তার দেশ ত্যাগের ঘটনায় আপিল বিভাগে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই শিশুর বাবা ইমরান শরীফ।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৫ এপ্রিল) আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের চেম্বার জজ এই বিষয়ের আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন। একইসঙ্গে এ বিষয়ে আগামী ২১ এপ্রিল আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন ধার্য করে দিয়েছেন। পাশাপাশি হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২১ এপ্রিল দু’পক্ষের আপিল (লিভ টু আপিল) শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আখতার ইমাম ও আইনজীবী রাশনা ইমাম। আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করে রাশনা ইমাম বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে বড় মেয়েকে নিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছেন তার মা এরিকো নাকানো। এ কারণে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়।’

তিনি জানান, আজ চেম্বার জজ আদালত এ বিষয়ে আগামী ২১ এপ্রিল আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়েছেন। এ ছাড়া, ওই দিন হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দু’পক্ষের সিপিএল শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, গত ৯ এপ্রিল বিকেলে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে বড় কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ ছাড়েন জাপানি মা এরিকো নাকানো। জাপানি শিশুদের বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফ এমন অভিযোগ করেছেন। শিশুদের বাবা ইমরান শরীফ জানান, আদালতের স্থিতাবস্থা থাকার পরও এরিকো নাকানো আদেশ অমান্য করে বড় মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে গেছেন।

এর আগে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট দুই কন্যার বিষয়ে রায় ঘোষণা করেন। রায়ে জাপানি বড় মেয়ে ও ছোট মেয়ে তাদের জাপানি মা এরিকোর কাছে থাকবে। মেজ মেয়ে বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফের কাছে থাকবে। তবে গত ৯ এপ্রিল আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন।

একইসঙ্গে চেম্বার জজ আদালতে এ বিষয়ে পরবর্তীতে (আজ) শুনানির জন্য (১৫ এপ্রিল) দিন ঠিক করেন। কিন্তু গত ৯ এপ্রিল এরিকো বড় কন্যাকে নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যান।

বিজ্ঞাপন

ইমরান শরীফের আইনজীবী রাশনা ইমাম বলেন, ‘সন্তানদের দেশের বাইরে যেতে আদালতের স্থিতাবস্থা ছিল। তার পরও বড় সন্তানকে নিয়ে এরিকো নাকানো চলে গেছেন। এ কারণে আমরা আদালত অবমাননার আবেদন করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওইদিন (২১ এপ্রিল) সন্তানদের নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে উভয়ে (কন্যাদের মা এবং বাবা) যে সিভিল আপিল দায়ের করেছেন। ওই বিষয়েও আপিল বিভাগে নিয়মিত বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।’

এর আগে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জাপানি মায়ের দুই শিশু (ছোট ও বড় মেয়ে) মায়ের কাছে এবং এক শিশু (মেজমেয়ে) তাদের বাবার কাছে থাকবে বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

দুই মেয়ে শিশুর হেফাজত নিয়ে (কার জিম্মায় থাকবে) ঢাকার পারিবারিব আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে শিশুদের বাবার করা রিভিশন আবেদন আংশিক যথাযথ ঘোষণা করে এমন রায় দেন বিচারপতি মামনুন রহমানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ।

বিজ্ঞাপন

আদালতে ইমরান শরীফের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আখতার ইমাম, আইনজীবী রাশনা ইমাম, আইনজীবী নাসিমা আক্তার লাভলী। এরিকো নাকানোর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কেসি, আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

এরপর গত ২৫ মার্চ ৩২ পৃষ্ঠার ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। রায়ে উভয়পক্ষকে নিজেদেরই শিশুদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের অধিকার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। রায়ে আদালত বলেছেন, বড় মেয়ের সঙ্গে তার পিতা ইমরান শরীফকে দেখা-সাক্ষাতের পূর্ণ অধিকার দেওয়া মায়ের দায়িত্ব এবং মেজ মেয়ের সঙ্গে তার মা এরিকো নাকানোকে দেখা-সাক্ষাতের পূর্ণ অধিকার দেওয়া পিতার কর্তব্য।

রায়ে আদালত বলেছেন, বড় মেয়েকে মায়ের হেফাজতে রাখার পক্ষে সিদ্ধান্ত দেওয়া হলেও বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনা করে ছোট মেয়ে বয়সপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত বাবার হেফাজতে থাকবে।

এর আগে, বাংলাদেশে থাকা জাপানি দুই শিশু জাপানি মায়ের কাছে থাকবে বলে রায় দেন ঢাকার জেলা জজ আদালত। তারও আগে ২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান শিশুদের জিম্মা চেয়ে বাবা ইমরান শরীফের মামলা খারিজ করে রায় দেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে ইমরান শরীফ জেলা জজ আদালতে আপিল করেন।

এরপর একই বছরের ১২ জুলাই জেলা জজ আদালতেও ইমরান শরীফের আবেদন খারিজ করে দেন। তারপর জেলা জজ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন শিশুদের বাবা ইমরান শরীফ। এর ধারাবাহিকতায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রিভিশন আবেদন আংশিক যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন শিশুদের মা এরিকো নাকানো। যা এখন বিচারাধীন।

আইনজীবীদের তথ্যানুযায়ী, জাপানের নাগরিক এরিকো নাকানো ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইমরান শরীফের ২০০৮ সালের ১১ জুলাই বিয়ে হয়। তাদের তিনটি মেয়েসন্তান আছে। ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি এরিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন ইমরান। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়েকে (বড় ও মেজ) নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি। তার ছোট মেয়ে জাপানে আছে।

ইমরানের কাছ থেকে দুই মেয়েকে ফিরে পেতে ঢাকায় এসে ২০২১ সালের আগস্টে হাইকোর্টে রিট করেন এরিকো। অন্যদিকে, ছোট মেয়েকে ফিরে পেতে পৃথক একটি রিট করেন ইমরান। এ ছাড়া একই বছর শিশুদের ফিরে পেতে ঢাকার পারিবারিক আদালতে মামলা করেন ইমরান শরীফ।

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন