বিজ্ঞাপন

ঈদের পর প্রথম কর্মদিবসেও ফাঁকা ঢাকা, ছুটির আমেজ

April 15, 2024 | 11:55 pm

রাজনীন ফারজানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষের সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে ছিল টানা ছয় দিনের ছুটি। সেই ছুটি শেষ হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও খুলেছে অফিস-আদালত। তবে ছুটি কাটিয়ে সবাই এখনো যোগ দেননি কর্মস্থলে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বন্ধ রয়েছে অনেক বিপণি বিতানও। রাজধানী ঢাকা তাই এখনো ফাঁকা, এখনো বিরাজ করছে ছুটির আমেজ।

বিজ্ঞাপন

ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটি শুরু হয় গত বুধবার (১০ এপ্রিল)। তিন দিনের সেই ছুটির পর শনিবার (১৩ এপ্রিল) ছিল সাপ্তাহিক বন্ধ। পরদিন রোববার (১৪ এপ্রিল) ছিল বাংলা নববর্ষের ছুটি। ছয় দিনের টানা ছুটি শেষে অফিস-আদালত খুলেছে আজ সোমবার (১৫ এপ্রিল)। কিন্তু এ দিনও রাজধানীর অধিকাংশ সড়ক ছিল ফাঁকা।

সোমবার রাজধানী ঘুরে দেখা যায়, তীব্র গরম উপেক্ষা করে পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপনের পরদিনই যেন ঢাকা অনেকটাই প্রাণহীন। এ দিনও তীব্র রোদে পুড়েছে পথঘাট। দুপুর পর্যন্ত তাই খুব বেশি মানুষকে দেখা যায়নি রাস্তায়। বিকেলে গিয়ে কিছুটা ভিড় বাড়তে থাকে, অনেকেই ঘুরতে বের হন ঈদের আমেজে। ব্যক্তিগত দাওয়াত ছাড়াও হাতিরঝিল, টিএসসি, পূর্বাচলের ৩০০ ফুট সড়কে এলাকায় ঘুরতে যাচ্ছেন অনেকে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বৈশাখের আল্পনা দেখতেও যাচ্ছেন অনেকে। রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে এ দিনও গণপরিবহণের তুলনায় রিকশার প্রাধান্য বেশি দেখা গেছে।

এদিকে বিপণি বিতান বা অনেক দোকানপাট বন্ধ থাকলেও অফিস-আদালত ঠিকই খুলেছে সোমবার। সব অফিসেই রমজানের মাসের পরিবর্তিত সময়সূচির বদলে শুরু হয়েছে স্বাভাবিক সময়সূচি। স্বাভাবিক লেনদেনে ফিরেছে ব্যাংকগুলোও। খুলেছে সরকারের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়। তবে কোনো অফিসেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল না শতভাগ। কার্যক্রমও চলেছে ঢিলেঢালাভাবে।

বিজ্ঞাপন

ঈদ-নববর্ষের ছুটির পর প্রথম কার্যদিবসে শুরু হয়েছে ব্যাংকিং কার্যক্রমও। তবে ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি সব অফিসেই কর্মী উপস্থিতি ছিল কিছুটা কম। ছবি: সারাবাংলা

সোমবার রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে অবশ্য দেখা গেছে কর্মচাঞ্চল্য। ঈদ ও নববর্ষের ছুটি শেষে এসব পথ দিয়ে মানুষ দলে দলে ঢাকা প্রবেশ করছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। গাবতলী, মহাখালী ও সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল ছাড়াও কলাপুর রেল স্টেশন ও সদরঘাট লঞ্চ ঘাটেও দেখা গেছে ভিড়। তবে ঈদের আগ মুহূর্তে ঢাকা ছাড়ার যে ভিড় দেখা গেছে, ততটা ভিড় ছিল না এ দিন।

রাজধানীর ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তারাও বলছেন, এখনো চাপমুক্ত পরিবেশেই কাজ করছেন তারা। মানুষ ভেঙে ভেঙে ফেরায় ঢাকার প্রবেশপথগুলোতেও এখনো তেমন ভিড় নেই। তবে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পুলিশ।

রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগের প্রধান পথ যাত্রাবাড়ী। ঢাকা বিভাগের কয়েকটি জেলা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের যানবাহনের মূল প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল। আশপাশের জেলা নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ ছাড়াও ডেমরা, ধোলাইখাল এলাকা থেকে এই পথেই প্রতিদিন লাখো মানুষের যাতায়াত। পদ্মা সেতুগামী যানবাহনের চাপও যুক্ত হয়েছে এই পথে। এই এলাকা তাই সারাবছরই থাকে সরগরম এবং এখানে যানজট সামালাতেও হিমশিম খেতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে।

বিজ্ঞাপন

ঈদের ছুটির আমেজ থাকায় এখনো এই পথে খুব একটা ভিড় শুরু হয়নি বলে জানালেন ট্রাফিক পুলিশ ওয়ারি বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ আশরাফ ইমাম। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, মানুষ ভেঙে ভেঙে ফেরায় এখনো ভিড় শুরু হয়নি। মাঝারি চাপ রয়েছে রাস্তায়। মাওয়াগামী যানবাহনের লাইনটি মূলত টোলের জন্য। অন্য কোথাও সেরকম ট্রাফিকের চাপ নেই। এ ছাড়া ডেমরা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ থেকে যারা নানা কাজে ঢাকায় আসেন, তারা সন্ধ্যার পর ফিরতে শুরু করায় দিনের থেকে সন্ধ্যার পর কিছুটা চাপ বেশি।

ফিরতি ঈদযাত্রায় ঢাকা ফিরতে শুরু করেছেন মানুষ। কমলাপুর রেল স্টেশনে তাই ছিল ভিড়। ছবি: সারাবাংলা

আশরাফ ইমাম আরও বলেন, এখন রাস্তায় আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ দুর্ঘটনা প্রতিরোধ। ঢাকা-মাওয়া রুটে যানবাহনের অতিরিক্ত গতি ঠেকাতেও হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে কাজ করছি আমরা। ঢাকার ভেতরে যেন কিছুতেই নসিমন, করিমন বা অন্য ব্যাটারিচালিত যানবাহন ঢুকতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করতে আমরা কঠোর অবস্থান নিয়েছি। হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধেও নিয়মিত অভিযান চলছে। গতকালই ২০০ থেকে ২৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছি।

এদিকে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের একাংশের যাতায়াতের প্রধান পথ আব্দুল্লাহপুর ও গাবতলী। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর গণপরিবহণগুলোর প্রবেশপথ মূলত গাবতলী। পদ্মা সেতু হওয়ায় এ পথে এসব জেলার যানবাহনের চাপ কিছুটা কমেছে। তারপরও ঈদ বা বড় ছুটির সময় ঠিকই চাপ পড়ে।

ফিরতি ঈদযাত্রায় এখনো সে চাপ শুরু হয়নি জানিয়ে ট্রাফিক পুলিশ মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মো. জসিম উদ্দীন সারাবাংলাকে বলেন, এখনো রাস্তাঘাট ফাঁকা। গাবতলীতেও তেমন ভিড় নেই। কারণ মানুষ ভেঙে ভেঙে ঢাকায় ফিরছেন। মিরপুরে চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন থাকায় সেসব এলাকায় কিছুটা ভিড় দেখা যাচ্ছে। বাকি এলাকা মোটামুটি ফাঁকা।

বিজ্ঞাপন

ঢাকার আরেক প্রবেশমুখ আবদুল্লাপুর। একদিকে উত্তরবঙ্গ থেকে আশুলিয়া বাইপাস, অন্যদিকে টঙ্গী দিয়ে আসা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এসে মিশেছে এখানে। এ ছাড়াও রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগগামী যেসব যানবাহনের গন্তব্য মহাখালী বাসস্ট্যান্ড বা উত্তরা, সেগুলোকেও আব্দুল্লাহপুর আসতে হয়। রয়েছে গাজীপুরের সব গাড়ির চাপও। ফলে আব্দুল্লাহপুরও ব্যস্ত সারা বছরই।

ঢাকায় ফিরে আসা মানুষের ভিড় দেখা গেছে সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনালেও। ছবি: সারাবাংলা

সোমবার সেই আব্দুল্লাহপুরও দেখা গেল শান্ত। ঈদের পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো ছুটির আমেজ রয়েছে বলে জানালেন ট্রাফিক পুলিশ উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার নাবিদ কামাল শৈবাল। তিনি বলেন, ‘এখনো তেমন চাপ নেই। ধীরে ধীরে বাড়বে। এদিকে দিয়াবাড়ি ও অন্যান্য বিনোদনকেন্দ্রে মানুষের চলাচল আছে। আমরা গতি নিয়ন্ত্রণে জোর দিচ্ছি।’

এদিকে পোশাক কর্মীরা ঈদের এক-দুই দিন আগে ছুটি পাওয়ায় তারা এখনো ফিরতে শুরু করেননি। পোশাক কর্মীরা ফিরতে শুরু করলে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে চাপ পড়বে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তারা।

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন