বিজ্ঞাপন

রাণীনগরে মিটার-ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক, পাহারা দিতে বলছে পবিস

April 16, 2024 | 8:11 am

আব্দুর রউফ পাভেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

নওগাঁ: নওগাঁর রাণীনগরে বৈদ্যুতিক মিটার ও ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা বেড়েই চলেছে। গত ছয় মাসে মিটার-ট্রান্সফরমার মিলিয়ে চুরি হয়েছে মোট ১৭টি, যার দাম প্রায় ১০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চুরির ঘটনা ঘটেছে গত ফেব্রুয়ারি মাসে। চিরকুট লিখে বিকাশে লেনদেনের আহ্বান জানিয়ে চুরির ঘটনাও রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গভীর নলকূপের সেচ গ্রাহকরা। আর উপজেলার কৃষিসংশ্লিষ্ট সবার মধ্যেই চুরি নিয়ে কাজ করছে আতঙ্ক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও চোর চক্রকে শনাক্ত করতে পারছে না। অন্যদিকে নিজ দায়িত্বে পাহারার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছে পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস)।

নওগাঁ পবিস-১ রাণীনগর আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে থ্রি-ফেজ মিটার চুরি হয়েছে সাতটি, যেগুলোর দাম প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। একই সময়ে ১০-কেভি ট্রান্সফরমারও চুরি হয়েছে সাতটি। এগুলোর দাম ছয় লাখ ৬৯ হাজার টাকারও বেশি। অন্যদিকে ৫-কেভি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে তিনটি, যেগুলোর দাম প্রায় এক লাখ ২৩ হাজার টাকা।

সব মিলিয়ে এই ১৭টি বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের দাম প্রায় ৯ লাখ ৩০ হাজার টাকারও বেশি। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি চারটি মিটার ও ছয়টি ১০-কেভি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এ ছাড়া গত নভেম্বরে তিনটি ৫-কেভি ও একটি ১০-কেভি ট্রান্সফরমার এবং দুটি মিটার চুরি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

উপজেলার মিরাট গ্রামের মৃত চাঁন আকন্দের ছেলে আ. রহিম আকন্দ জানান, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে তার গভীর নলকূপের ১০-কেভিএ তিনটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। চোর চক্র ট্রান্সফরমারের ভেতরে থাকা মূল্যবান কোর ও কয়েল চুরি করে নিয়ে যায়, যার দাম দুই লাখ টাকার বেশি।

‘অফ সিজনে’ চুরির ঘটনা বেশি ঘটে জানিয়ে আ. রহিম আকন্দ বলেন, এই সময়ে মাঠ শুকনা থাকে। গভীর নলকূপের ঘরেও অধিকাংশ সময়ে কেউ থাকে না। তাই এরকম সময়ে চুরি বেশি হয়। তবে গত কয়েক মাসে অনেকগুলো চুরির ঘটনা ঘটলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসন চুরিতে জড়িতদের কাউকে আটক বা শনাক্ত করতে পারেনি।

আ. রহিম আরও বলেন, এমন চুরির কারণে আমাদের সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। আগে ট্রান্সফরমার চুরি হলে সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দেওয়া হতো। নতুন আইনে ট্রান্সফরমার চুরি হলে তার সম্পূর্ণ অর্থই গ্রাহককে পরিশোধ করতে হচ্ছে। এমন আইনে আমরা গ্রাহকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

উপজেলার জগৎপুর গ্রামের রমজানের ছেলে শহিদুল ইসলামের মাছের খামার থেকে থ্রি-ফেজ মিটার চুরি হয় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি। মিটারটির দাম প্রায় ১৫ হাজার টাকা। চোর চক্র চিরকুট লিখে রেখে যায়। চিরকুটে লেখা নম্বরে চোরদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা বিকাশ করে তারপর মিটার ফেরত পান তিনি।

শহিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমান ডিজিটাল সময়ে বিভিন্ন বাহিনী আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে বড় বড় অপরাধীদের আটক করতে সক্ষম হচ্ছে। অথচ মিটার চোরদের আটক করতে পারছে না। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। মাঝখান থেকে আমরা সুবিধাভোগীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সরকারকেও লোকসান গুনতে হচ্ছে। আমরা এ চোর সিন্ডিকেটের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

জানতে চাইলে রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ওবায়েদ বলেন, মিটার চুরিসহ বিভিন্ন চুরি ও ছিনতাইয়ে জড়িতদের আটকে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি কয়েকজন সক্রিয় আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্যদের আটক করেছি। আগামীতেও পুলিশের এমন তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।

মিটার ও ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ পবিস-১ রাণীনগর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. আকিয়াব হোসেন বলেন, চিরকুট লিখে মিটার চুরির ঘটনা নওগাঁ, জয়পুরহাট, বগুড়া ও গাইবান্ধায় বেশি ঘটছে। দেশের অন্য এলাকায় এরকম ঠিক শুনতে পাওয়া যায় না। এমন চুরির ঘটনা প্রতিরোধে ট্রান্সফরমার পাহারা দিতে গ্রাহকদের আহ্বান জানিয়ে পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিলেও এ সংক্রান্ত বার্তা দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠক করেও গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর চেস্টা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

গ্রাহকদেরই পাহারার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়ে পবিসের এই কর্মকর্তা বলেন, একসময় এমন চুরি ঠেকাতে গ্রামে গ্রামে পাহারার ব্যবস্থা ছিল। তখন এ রকম চুরির ঘটনা অনেকাংশে কমে গিয়েছিল। আবার কিছুদিন হলো চুরির উপদ্রব বেড়েছে। তাই মিটার বা ট্রান্সফরমার সুরক্ষিত রাখতে গ্রাহকদের সচেতন হতে হবে। গ্রাহকরা পাহারার ব্যবস্থা করলে এমন ঘটনা অনেকটাই কমে আসবে। এ ছাড়া মাঝে মধ্যে এই চুরির সঙ্গে জড়িত যারা ধরা পড়ছে, আইন সংশোধনের মাধ্যমে তাদের দীর্ঘ শাস্তির আওতায় আনা গেলে এমন ঘটনা অনেকটাই কমানো সম্ভব।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন