বিজ্ঞাপন

আমনের ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

December 20, 2017 | 9:13 am

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

চলতি আমন মৌসুমে দেশে ধানের উৎপাদন বেশ ভালো হয়েছে। এখন পর্যন্ত পুরোদমে কাটাই-মাড়াই শেষ না হলেও হেক্টরে প্রায় ৩ টন করে ধানের ফলন পাওয়ার তথ্য মিলছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্যমতে, ৫৪ লাখ হেক্টর জমির মধ্যে ৪৪ লাখ হেক্টর জমিতে, অর্থাৎ ৮২ শতাংশ জমির ধানকাটা শেষ হয়েছে। ধানকাটা সম্পন্ন ওই জমিতে আমনের উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ২৬ লাখ ৯৪ হাজার টন। অবশ্য শীতের সময় হটাৎ বৃষ্টিতে মাঠে কেটে রাখা ধানও কোথাও-কোথাও তলিয়ে যায়। এতে ওই ধান মাড়াইয়ে বেগ পোহাতে হয় কৃষকের।

এবার ধানের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে জানিয়েছেন কৃষকেরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে ১১০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ১৩০০ টাকা মনে আমন বিক্রি হচ্ছে। আমনের দাম পেয়ে শেষ সময়ের দুর্ভোগের কথা ভুলে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি।

এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল আজীজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি গত বছরের চেয়ে এবার ফলন ভালো হবে। মাঠপর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্যও তা বলছে।’

বিজ্ঞাপন

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘শেষের দিকে যে বৃষ্টি হয়েছে তাতে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। চাষী খুব সচেতন ছিল। তারা নর্দমা কেটে মাঠ থেকে দ্রুত পানি নামাতে সক্ষম হয়। ফলে তেমন একটা ক্ষতি হয়নি।’

আর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক ড. আলহাজ উদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখনো আমনের পুরো কাটা শেষ হয়নি। ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি গড়ে ২ দশমিক ৮৭ টন করে ফলন হয়েছে, যা গতবারের চেয়ে অনেক ভালো।’

বিজ্ঞাপন

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর সারাদেশে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৩ লাখ হেক্টর। তবে রোপণ হয়েছিল ৫৪ লাখ হেক্টর জমিতে। সর্বশেষ তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ৪৪ লাখ হেক্টর জমির আমন কাটা শেষ হয়েছে। এ হিসাবে শতকরা ৮২ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে।  এতে আমনের উৎপাদন ১ কোটি ২৬ লাখ ৯৪ হাজার টন। এক্ষেত্রে হেক্টরে গড় ফলন ২ দশমিক ৮৭ টন। আর চলতি বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ৩৭ লাখ টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিফতর সূত্রে আরও জানা যায়, এবার আগাম আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। দেশের ৬ জেলায় ৭৮ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে গড়ে ৩ টন করে ফলন পাওয়া গেছে। সেই হিসেবে ওই ৬ জেলায় আমনের উৎপাদন হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টন। ফলে আগাম আমনের বাম্পার উৎপাদনে রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও মানিকগঞ্জের কৃষকের মুখে ছিল হাসির আভা।

নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার চন্দনপুর গ্রামের কৃষক মো. শহীদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ফলন ভালো হয়েছে। শেষের দিকের বৃষ্টিতে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে যেমন ভাবা হচ্ছিল, তেমন নষ্ট হয়নি। কিন্তু মাঠে থাকা ধান ঘরে উঠাতে কষ্ট হয়েছে।’

ধানের দাম প্রসঙ্গে এই কৃষক বলেন, আমাদের এলাকায় ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা মনে ধান বিক্রি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পশ্চিমখণ্ড গ্রামের কৃষক আলম মুক্তার। ৩৩ শতক জমিতে এবার তিনি আমন ধান করেছিলেন। তিনি  সারাবাংলাকে বলেন, ‘অন্য বারের তুলনায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। আর বর্তমানে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা মনে ধান বিক্রি হচ্ছে।’

তবে একই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম জানান, মৌসুমের শেষের দিকের বৃষ্টিতে তার ফসলের বেশ ক্ষতি হয়েছে।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত মো. মোস্তফা। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, মাঠে বেশ ভালো ফসল দেখা গেলেও ফলন তেমন ভালো হয়নি। কাঠায় (৭ শতাংশ) ২ মণ করেও ধান হয়নি। ধানের দাম প্রসঙ্গে তিনি জানান, ১১০০ থেকে ১১৫০ টাকা মনে ধান বিক্রি হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার হরশী গ্রামের কৃষক হিমেল কবির সারাবাংলাকে বলেন, এবার ধানের উৎপাদন বেশ ভালো হয়েছে। তবে শেষের দিকে জমিতে কেটে রেখে দেয়া ধান বৃষ্টির পানিতে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আর দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১১৫০ টাকা মণে ধান বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদ ড. এম আসাদুজ্জামান এ বিষয়ে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমনের ফলন যতটা ভালো মনে করা হয়েছিল হয়তো ততটা ভালো হয়নি। তবে শেষের দিকে বৃষ্টিতে যে ক্ষতি হয়েছে এটা তেমন কোনো ক্ষতি নয়। কারণ আমনে প্রায়ই এমন ক্ষতি হয়ে থাকে।’

ধান কাটা শেষে শীতকালীন সবজি-উৎপাদন করা সম্ভব এমন এলাকায় আরও অধিক হারে আগাম আমন চাষ করা যেতে পারে বলে মত এই কৃষি বিশেষজ্ঞের।

সারাবাংলা/ইএইচটি/আইজেকে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন