বিজ্ঞাপন

ডিজিটাল ব্যাংক নিয়ে কথোপকথন

April 18, 2024 | 2:40 pm

মো. সাইফুল আলম তালুকদার

‘ডিজিটাল ব্যাংক’ নিয়ে বর্তমানে আমাদের দেশে সবার মধ্যেই বেশ এক ধরনের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ৫০০টির বেশি কোম্পানি থেকে ৫২টি আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। সেখান থেকে প্রাথমিকভাবে দুটি ডিজিটাল ব্যাংককে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এরইমধ্যে ‘ডিজিটাল ব্যাংকিং ইউনিট’ নামে একটি নতুন ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেছে।

বিজ্ঞাপন

পাকিস্তানে ইতোমধ্যে গত বছরের জানুয়ারিতে পাঁচটি ডিজিটাল ব্যাংককে যাত্রা শুরু করার অনুমোদন দিলেও বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করার কার্যক্রম কেবলমাত্র শুরু হয়েছে। তাতে অবশ্য কিছু যায় আসে না, কারণ আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে বেশ খানিকটা পিছিয়ে আছে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির হার পাকিস্তানে যেখানে ২০ শতাংশের কিছু উপরে, সেখানে বাংলাদেশে এই হার ৫২ শতাংশের উপরে।

মজার ব্যাপার হলো ভারতে দৈনিক ৮০ মিলিয়ন ডিজিটাল লেনদেন হচ্ছে এবং তাদের ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার মডেল আগামী পাঁচ বছরে ৫০টি দেশে অনুসৃত হবে। তারপরেও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে তারা ইরানের চেয়ে পিছিয়ে আছে।

ডিজিটাল ব্যাংকিং এবং অনলাইন ব্যাংকিংয়ের পার্থক্য

বিজ্ঞাপন

ডিজিটাল ব্যাংকিং এবং অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মধ্যে বিশাল পার্থক্য থাকলেও প্রধান পার্থক্য হলো— ডিজিটাল ব্যাংকিং বলতে বিস্তৃত প্ল্যাটফর্ম সমাবেশকারীকে বলা যায় যেখানে নানা ধরনের সেবা কম সময়ের মধ্যে প্রদান করা যায়। অন্যদিকে অনলাইন ব্যাংকিং বলতে সাধারণত একটি ব্যাংকের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারী ব্যবহারকে বোঝায়, যেখানে লেনদেন সম্পন্ন, ব্যালেন্স চেক করা, ইউটিলিটি বিল বা ঋণ পরিশোধের মতো কোনো নির্দিষ্ট কাজ করা হয়ে থাকে। অ্যাপের মাধ্যমে সিটি ব্যাংকের ‘সিটি টাচ’, ব্র্যাক ব্যাংকের ‘আস্থা’ এবং ইস্টার্ন ব্যাংকের ‘স্কাই ব্যাংকিং’ যে সেবা দান করছে তাও অনলাইন ব্যাংকিংয়ের উদাহরণ।

মোটা দাগে বলা যায়, অনলাইন ব্যাংকিং ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের একটি অংশ মাত্র। মোবাইল ব্যাংকিং, ডিজিটাল ওয়ালেট, এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ব্যাংকিং, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট, চ্যাটবট, বায়োমেট্রিক্স এবং অন্যান্য বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হয়ে থাকে, যার লক্ষ্য গ্রাহকদের নতুন ও দ্রুত সেবা পাওয়ার অভিজ্ঞতা বাড়ান।

ডিজিটাল ব্যাংক আসলে কী?

বিজ্ঞাপন

সহজ কথায় ডিজিটাল ব্যাংক হবে এমন একটি ব্যাংক যার কোনো শাখা, উপ-শাখা বা এটিএম বুথ থাকবে না। গ্রাহক তার কাঙ্ক্ষিত সেবা ঘরে বসে বা যে কোনো জায়গা থেকেই নিতে পারবেন, হোক সেটা মোবাইল বা কম্পিউটার যে মাধ্যমেই চান না কেন। ব্যাংক একাউন্ট খোলা, চ্যাট পরিষেবা, অর্থ স্থানান্তর, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড, রেমিট্যান্স, ঋণ সুবিধা প্রভৃতি পেতে পারবেন কয়েক মিনিটের মধ্যেই। অর্থাৎ, ব্যাংক চলে আসবে আপনার হাতের মুঠোতে। এমন ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা কি আপনাকে মনে করিয়ে দেবে টু-জি বা ফোর-জির মধ্যে যে পার্থক্য, নাকি হাবল টেলিস্কোপ এবং জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের ব্যবধান। আবার এমনও তো হতে পারে, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং টাকা-পয়সা চোখের নিমিষেই হারিয়ে যেতে পারে। তার উত্তর পেতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে ডিজিটাল ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু করার কয়েক মাস পর্যন্ত।

ডিজিটাল ব্যাংক আগামীতে তাদের ডিজিটাল এজেন্ডাকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে

১) ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে প্রাথমিক ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ধরা হয়েছে মাত্র ১২৫ কোটি টাকা। সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশরুর আরেফিন সাহেব এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, প্রযুক্তি অবকাঠামো স্থাপন যেমন: কোর ব্যাংকিং, কার্ড ম্যানেজমেন্ট, ডিজিটাল অন-বোর্ডিং, লোন অরিজিনেশন, ক্রেডিট স্কোরিং ইঞ্জিন, গ্রাহক সম্পর্ক পরিচালনার ইঞ্জিন, এআই ক্ষমতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডিজিটাল ইন্টারফেস প্রভৃতি এবং গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে শেষ পর্যন্ত প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হতে পারে। শুধু তাই নয়, মুনাফা অর্জন করার জন্য ওই ব্যাংককে ন্যূনতম ৩-৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ পোর্টফোলিও গঠন করতে হবে। আর অবশ্যই এই ঋণ দেওয়ার জন্য ক্যাপিটাল এডেকোয়েশি অনুপাত এবং ঋণ-আমানত অনুপাত বজায় রেখে আমানত সংগ্রহ করতে হবে।

২) মাশরুর আরেফিন যে ধারনা দিয়েছেন তাতে ডিজিটাল ব্যাংককে মুনাফা অর্জন করার জন্য ন্যূনতম তিন বছর অপেক্ষা করতে হবে। তবে বিশ্বব্যাপী নিও ব্যাংকের ৯০ শতাংশের বেশি এখনও মুনাফা করতে পারেনি আর অনেক ব্যাংককেই ব্রেক-ইভেন পয়েন্টে আসতে ৬-১০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

৩) অন্যান্য দেশের ডিজিটাল ব্যাংকগুলোর ব্রেক-ইভেন পয়েন্টে আসতে সময় লাগলেও বিদেশি বিনিয়োগ বা ঋণ সহজে পাওয়ার কারণে তাদের কোম্পানিগুলোর মূল্যায়ন বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে আমাদের বিদেশি বিনিয়োগ বা ঋণ পাওয়া মোটেও সহজ কাজ হবে না। আবার আমাদের দেশে শেয়ার বাজারের অবস্থা ভালো না থাকার কারণে ভারতের অনেক ডিজিটাল ব্যাংকের মতো শেয়ার মার্কেটে আইপিও ছেড়ে নিজস্ব বিনিয়োগ বেশি দামে বিক্রি করাও সম্ভব হবে না।

৪) গ্রাহকের অন-বোর্ডিং পদ্ধতি সহজ সরল হতে হবে, কেননা গবেষণায় দেখা গিয়েছে ৯০ শতাংশ গ্রাহক পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে অনেক সময় ব্যাংকে একাউন্ট খোলা থেকে বিরত থাকেন।

৫) এপিআই শেয়ারিং ব্যবস্থায় বিভিন্ন সেবাকে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসবে এবং তথ্য ব্যবস্থাপনা হবে ব্যাংকের মূল চালিকাশক্তি।

৬) ব্যাংকগুলোকে এফএমসিজি এবং অন্যান্য মার্চেন্টদের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের তথ্য ব্যাংক তৈরি করতে হবে। পরবর্তীতে তথ্যের ভিত্তিতে ওই সমস্ত ব্যবসায়ীদের স্বল্প মেয়াদে ঋণ প্রদান করতে হবে।

৭) ক্রেডিট স্কোরিং প্রণয়নের মাধ্যমে ঋণ প্রদান করতে হবে, যা ব্যাংকের ঝুঁকি কমানোর মূল শর্ত হিসেবে কাজ করবে।

৮) ন্যানো/ক্ষুদ্র ভোক্তা ঋণ সীমা দুই লাখ টাকার মধ্যে থাকতে পারে। যেহেতু ডিজিটাল ব্যাংক কম সংখ্যক জনবল নিয়ে কাজ করবে তাই কু-ঋণ থেকে রক্ষা পেতে শুরুর দিকে দুই লাখ টাকার উপরে ঋণ নাও দিতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী (বিআরপিডি সার্কুলার নং ০১; তারিখ: ৬ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯) দুই লাখ টাকা সীমার মধ্যে ঋণগুলো ব্যাংক প্রয়োজন মাফিক আইনানুগ প্রক্রিয়ার বাইরে অবলোপন করতে পারে।

৯) আয়ের উৎস হিসেবে তাদের ন্যানো ঋণের রাজস্ব, সাবস্ক্রিপশন, এপিআই শেয়ারিং ফি এরকম অল্প কয়েকটি আয়ের উপর নির্ভর করতে হবে। মনে রাখতে হবে আমাদের দেশেই ‘ডিবিএইচ’ নামক একটি নন-ব্যাংক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা শুধুমাত্র গৃহ-ঋণ প্রদান করে ১০০ কোটি টাকার উপর মুনাফা অর্জন করছে। যদিও তাদের ঋণ পোর্টফোলিও মাত্র চার হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। তাদের এই সাফল্যের রহস্য হচ্ছে গৃহ-ঋণ প্রদানে তারা স্পেশালিস্ট, কেননা দেশের সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে তারাই ঋণ প্রসেস করে থাকে এবং কু-ঋণের পরিমাণ এক শতাংশের চেয়েও অনেক কম। কোভিডের পূর্বে তাদের কু-ঋণের পরিমাণ ছিল ০. ৪০ শতাংশের মতো। অর্থাৎ, আইন কানুন সঠিকভাবে পরিপালন করে দ্রুততম সময়ে ঋণ প্রদান করা গেলে সর্বনিম্ন কু-ঋণ বজায় রেখে ডিজিটাল ব্যাংকের পক্ষে ডিবিএইচের মতো যথেষ্ট পরিমাণে মুনাফা অর্জন সম্ভব।

১০) বিকাশের মতো ডিজিটাল ব্যাংকগুলো সাড়া ফেলতে পারলে প্রথাগত ব্যাংকগুলো তাদের সঙ্গে চুক্তি করার জন্য তৎপর হয়ে উঠবে। ডিজিটাল ব্যাংকগুলো রিটেইল এবং সিএসএমইতে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করলে প্রথাগত ব্যাংকগুলো তাদের সঙ্গে পার্টনারশিপে আসতে বাধ্য হবে, কেননা অল্প কয়েকটি প্রথাগত ব্যাংক ছাড়া অন্যান্য ব্যাংক এই দুটি সেক্টরে তেমন তৎপর নয়।

১১) সুশাসন ও নিরাপত্তার উপর জোর দিতে হবে শুরু থেকেই। কর্পোরেট গভর্নেন্সের কোড মেনে সু-শাসনের চর্চা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অনুশীলন, অপারেশনাল প্রক্রিয়ার উপর অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা, সঠিকভাবে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি এবং বিশেষ করে গ্রাহক তথ্যের গোপনীয়তা ও সুরক্ষা বজায় রাখার কোনো বিকল্প নেই।

১২) শরিয়াসম্মত ডিজিটাল ব্যাংকিং উল্লেখযোগ্য চালক হতে পারে। পাকিস্তান ইতোমধ্যে প্রাথমিক অনুমোদন (আইপিএ) অনুযায়ী পাঁচটি ডিজিটাল ব্যাংকের মধ্যে একটি ডিজিটাল ইসলামী ব্যাংককে আসার অনুমতি দিয়েছে।

১৩) ‘ক্যাশব্যাক-ভিত্তিক ওয়ালেট’-এর বিপরীতে গ্রাহকে একটি ভালো তহবিল বজায় রাখতে সাহায্য করবে এবং তাদের এই পরামর্শ দিতে হবে যে, মুদ্রাস্ফীতি ও আর্থিক মন্দার সময় তা বুঝেশুনে ব্যবহার করতে হবে। ‘এখন কিনুন পরে পেমেন্ট করুন’ (বিএনপিএল) পণ্যের ক্ষেত্রেও গ্রাহককে এই পরামর্শ দিতে হবে যে, অন্যান্য দেশের মতো অবারিতভাবে এই সুযোগের অপব্যবহার করে নিজে যেন ঋণ খেলাপি না হন বা তার ক্রেডিট স্কোরিংকে নিচে নামিয়ে না আনেন।

১৪) ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী, যুবক জনগোষ্ঠী, নারী গ্রাহক, ফ্রিল্যান্সার, রেমিটেন্স যোদ্ধা, কৃষকদের সহযোগী হিসেবে ডিজিটাল ব্যাংককে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

১৫) শিক্ষিত ও কিছুটা বেশি আয়ের জনগোষ্ঠীকে সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সঠিক পরামর্শ প্রদান করতে হবে। শেয়ারবাজার ব্যবস্থা ভঙ্গুর হওয়ার কারণে এই জনগোষ্ঠীর বিনিয়োগ ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মতো করে শহর ও গ্রামগঞ্জে ব্যবসা সম্প্রসারণে কাজে লাগাতে হবে। এজেন্ট ব্যাংকিং যদি গ্রামগঞ্জের আমানত শহরে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়ে থাকে তবে ডিজিটাল ব্যাংক ঠিক তার বিপরীত কাজটাই করবে, এই আশা করাটা আমাদের মোটেও অন্যায় হবে না। আর সেটা করতে পারলে শহর ও গ্রামের পার্থক্য অনেকটাই মিটে যাবে।

ডিজিটাল ব্যাংকিং কী জনপ্রিয়তা পাচ্ছে?

ডিজিটাল ব্যাংকিং গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠীর কাছে দারুণভাবে গৃহীত হয়েছে। ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, ব্যবহারের সহজলভ্যতা, দ্রুত সেবা গ্রহণ, মহামারির মধ্যে মানবকেন্দ্রিক ব্যাংকের শাখাগুলোতে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া এবং তরুণ গ্রাহকদের প্রযুক্তি ব্যবহারে চটপটে ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করা।

ডিজিটাল ব্যাংকিং ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। যার মূল কারণে রয়েছে তরুণদের কাছে এর জনপ্রিয়তা। ১৫-২০ বছর বয়সের তরুণরাই হবে আগামী দিনের ব্যাংকের গ্রাহক, ফলে যে ব্যাংক ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের পিছিয়ে থাকবে তারা কয়েক বছর পর এই সমস্ত গ্রাহক অন-বোর্ডিং করতে ব্যর্থ হবে। বর্তমান বিশ্বে ৬০% মিলেনিয়াল (যাদের বয়স ২৮ থেকে ৪৩ বছরের মধ্যে), ৫৭% জেড প্রজন্ম (যাদের বয়স ১২ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে), ৫২% এক্স প্রজন্ম (যাদের বয়স ৪৪ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে) ব্যাংকে না গিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপসের মাধ্যমে তাদের প্রাথমিক ব্যাংকিংয়ের কাজগুলো সেরে নিচ্ছে।

তারপরেও অনেকেই মনে করেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং মানব-কেন্দ্রিক গ্রাহক মিথষ্ক্রিয়াকে একত্রিত করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতিতে এগিয়ে যাওয়া সেরা উপায় হতে পারে। যেমন বন্ধকী ঋণের জন্য আবেদন এবং অন্যান্য বড় ব্যবসায়িক সংক্রান্ত কাজ পরিচালনা করার জন্য গ্রাহক ব্যক্তিগতভাবে ব্যাংকে উপস্থিত থেকে ব্যাংক অফিসারের কাছ থেকে সরাসরি সেবা নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয়তা বোধ করে। তাই পুরোপুরি মানব এবং শাখাবিহীন ব্যাংকিং পদ্ধতি চালু করার আগে গ্রাহকদের পছন্দের কথা ভাবতে হবে।

তবে আশার কথা এই যে, মানুষ ধীরে ধীরে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। কয়েকটি উদাহরণে তা পরিষ্কার হয়ে উঠবে: ৯৭% গ্রাহক ডিজিটাল ব্যাংকিং পরিষেবা গ্রহণে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছে। বিশ্বব্যাপী ৯৮% ব্যাংক কোনো না কোনোভাবে মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করছে। উদাহরণস্বরূপ, ৮৯% প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ডিপোজিট সংগ্রহ করছে (যদিও বাংলাদেশ এই হার অনেক কম), ৮০% গ্রাহক অনলাইনে বিল পরিশোধ করতে সক্ষম হচ্ছে এবং ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়াতে ৫৬% অনলাইন লেনদেনের জন্য ইলেকট্রনিক সিগনেচার (স্বয়ংক্রিয় স্বাক্ষর) যাচাইকরণ গ্রহণ করা হচ্ছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে ডিজিটাল ব্যাংক কী ধরনের সেবা দিচ্ছে

চীন, ভারত, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়াতে বেশ কয়েক বছর ধরে সুপ্রতিষ্ঠিত ডিজিটাল ব্যাংকিং ইকোসিস্টেম থাকার পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়াতে ২০২২ সালে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেক্টরে উল্লেখযোগ্য হারে অগ্রগতি হয়েছে। আকুলাকু, গোজেক, গ্র্যাব এবং সি গ্রুপ (চীনের আলিবাবা ও টেনসেন্ট গ্রুপ সমর্থিত প্রতিষ্ঠানও রয়েছে) পুরনো ধারার ব্যাংকগুলোকে অধিগ্রহণ করে তাদের ‘ব্যাংক জাগো’, ‘সিব্যাংক ইন্দোনেশিয়া’ এবং ‘ব্যাংক নিও কমার্স’ নামক ডিজিটাল ব্যাংকে রূপান্তরিত করেছে। শুধু তাই নয়, ২০২২ সালে টেকক্রাঞ্চ জানিয়েছিল, ইন্দোনেশিয়ার গ্রাহকরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে ৫.৭৫ ঘণ্টা ব্যয় করে অ্যাপস বা সুপার অ্যাপস দিয়ে কেনাকাটা বা পেমেন্ট করার স্বার্থে। তার ঠিক পরের অবস্থানে ছিল সিঙ্গাপুর এবং ব্রাজিল।

এসএমই খাত বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ দেশেই ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে থেকে যাওয়ার কারণে ডিজিটাল ব্যাংক এই ফাঁকা জায়গা পূরণে এগিয়ে এসেছে। এসএমই ব্যবসার সুবিধার্থে তারা তাৎক্ষণিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, সরলীকৃত ঋণ প্রক্রিয়া, নমনীয় ক্রেডিট বিকল্প, ডিজিটাল চালান, আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উপযোগী অর্থ আদান-প্রদানে সমাধান, হিসাবরক্ষণ এবং সরাসরি ট্যাক্স প্রদান উপযোগী পরিষেবা প্রদান করে আসছে।

ব্রাজিলের ‘নুব্যাংক’, রাশিয়ার ‘টিংকফ’, চীনের ‘উইব্যাংক’, দক্ষিণ কোরিয়ার ‘কাকাওব্যাংক’, অস্ট্রেলিয়ার ‘জুডো ব্যাংক’, যুক্তরাজ্যের ‘স্টারলিং’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘লেন্ডিং ক্লাবের’ মতো ক্রেডিট কেন্দ্রিক ডিজিটাল ব্যাংকগুলি প্রবৃদ্ধি এবং মুনাফা বজায় রাখার জন্য তাদের বিশাল সংখ্যক গ্রাহকদেরকে সফলভাবে ঋণ প্রদান করে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, নুব্যাংক ভোক্তা এবং ব্যবসায়িক, টিংকফ ক্রেডিট কার্ড এবং ব্যক্তিগত, উইব্যাংক বন্ধকী, ব্যক্তিগত এবং স্বয়ংক্রিয়, কাকাওব্যাংক ওভারড্রাফট, ছোট ব্যবসার জন্য এবং বাড়ি বন্ধক, জুডো ব্যাংক এসএমই, স্টারলিং ব্যাংক বন্ধকী এবং এসএমই এবং লেন্ডিং ক্লাব ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক ঋণের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে।

প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে বড় বড় ব্যাংকগুলো ডিজিটাল ব্যাংকের সঙ্গে নানা রকম চুক্তি সম্পাদন করছে। ব্যাংকিং-এজ-এ-সার্ভিস (BaaS) সলিউশন বিক্রির মাধ্যমে ডিজিটাল ব্যাংকগুলো লাভবান হয়ে উঠছে। স্টারলিং ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের সঙ্গে শোল ব্র্যান্ডের অধীনে ডিজিটাল ব্যাংকিং পরিষেবা অফার করার জন্য অংশীদারিত্ব করেছে। অন্যদিকে ‘ওকনর্থ ডিজিটাল ব্যাংক’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথাগত ব্যাংক, যেমন ক্যাপিটাল ওয়ান, ফিফথ থার্ড, পিএনসি এবং এসএমবিসি ব্যাংকের সঙ্গে অংশীদারিত্ব চুক্তি সম্পাদন করেছে তাদের বাণিজ্যিক ঋণ ব্যবসাকে শক্তিশালী করতে।

এছাড়াও কিছু ডিজিটাল ব্যাংক অ-প্রথাগত রাজস্ব আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করছে। ফলে প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন, ক্রিপ্টো পরিষেবা এবং মার্কেটপ্লেস অফারগুলো ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক ডিজিটাল ব্যাংক, ‘বাংক’ তার গ্রাহকদের বিভিন্ন সাবস্ক্রিপশন প্ল্যানগুলোর মাধ্যমে রাজস্ব আয় করে থাকে, যেগুলো হচ্ছে: উচ্চ সুদের হারে ঋণ নেওয়া, কেনাকাটায় ক্যাশব্যাক, ভ্রমণ বিমা এবং বিমানবন্দর লাউঞ্জে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা প্রদান করা। যুক্তরাজ্যের ‘রেভুলাত’ গ্রাহকদের ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনতে, বিক্রি করতে এবং ধরে রাখার অনুমতি দিয়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি পরিষেবার একটি পরিসীমা চালু রেখেছে। উপরন্তু, স্টারলিং এবং নুব্যাংক ক্রমবর্ধমানভাবে মার্কেটপ্লেসগুলো অফার করছে যেখানে গ্রাহকরা বিনিয়োগ এবং বিমার মতো তৃতীয় পক্ষের আর্থিক পরিষেবাগুলোর একটি পরিসীমা সুবিধা গ্রহণ করতে পারে, যা অতিরিক্ত মুনাফা সৃষ্টি করতে সহায়তা করছে।

ডিজিটাল ব্যাংকের উত্থান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আর্থিক পরিষেবা শিল্পে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রবণতাগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে ধরা হচ্ছে। ডিজিটাল ব্যাংক আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রাখছে। তবে এর মাঝেও চরম সত্য হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে বিশ্বব্যাপী হাতে গোনা কয়েকটি ডিজিটাল ব্যাংক মুনাফা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।

অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জনের পরেও কেন ডিজিটাল ব্যাংক প্রত্যাশামাফিক মুনাফা অর্জন করতে পারছে না?

ডিজিটাল ব্যাংকের উত্থান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আর্থিক পরিষেবা শিল্পে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রবণতাগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে ধরা হচ্ছে। ডিজিটাল ব্যাংক আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রেখে চলছে। তবে এর মাঝেও চরম সত্য হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে বিশ্বব্যাপী হাতে গোনা কয়েকটি ডিজিটাল ব্যাংক মুনাফা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।

∗ প্রথমত, বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও উচ্চ সুদের হার জমানায় ডিজিটাল ব্যাংকগুলো কম মার্জিনে ব্যবসা করতে বাধ্য হচ্ছে, কারণ তাদের মূলধন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং ঋণের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। প্রথম কারণটি গতানুগতিক ব্যাংকের জন্যও প্রযোজ্য।

∗ দ্বিতীয়ত, তাদের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ডিং হ্রাস পেয়েছে, যা প্রবৃদ্ধি এবং মুনাফা ব্যহত করছে।

∗ তৃতীয়ত, ডিজিটাল ব্যাংকগুলোর পরিচালনা এবং লাভের উপর নিয়ন্ত্রক সংস্থার যাচাইবাছাই ও নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ তারা একটি টেকসই ব্যবসায়িক মডেল দেখতে চায়, যাতে করে এসকল প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘ মেয়াদে জনগণের সেবা দেওয়ার প্রয়াসে লাভজনকভাবে টিকে থাকতে পারে।

ডিজিটাল ব্যাংককে লাভজনক হতে যে সময় লাগে তা নির্ভর করে মালিকানা কাঠামো, নিয়ন্ত্রক পরিবেশসহ বিভিন্ন কারণের উপর। এশিয়ায় কনসোর্টিয়ামভিত্তিক ডিজিটাল ব্যাংকগুলোর লাভজনক হওয়ার গড় সময় ইউরোপের ডিজিটাল ব্যাংকগুলোর তুলনায় কম লেগেছে কারণ কনসোর্টিয়াম মালিকানাধীন ডিজিটাল ব্যাংকগুলো তাদের মূল সংস্থাগুলোর সংস্থান, দক্ষতা এবং নেটওয়ার্কগুলোর পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক এবং প্রতিযোগিতামূলক ল্যান্ডস্কেপগুলোকে দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগাতে পারে৷ এশিয়াতে তাদের সাফল্য এসেছে কৌশলগত শেয়ারহোল্ডারদের পাশাপাশি শক্তিশালী ডিজিটাল সক্ষমতা এবং গ্রাহক সংখ্যার উপস্থিতির কারণে।‌

চ্যালেঞ্জের ব্যাংক কি আসলেই ঐতিহ্যবাহী ব্যাংকগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পেরেছে?

চ্যালেঞ্জার ব্যাংক হলো ছোট আকারের স্পেশালাইজড ব্যাংক, যেগুলো প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্ভাবনী পরিষেবা এবং ভালো গ্রাহক অভিজ্ঞতা প্রদানের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী এবং বড় ব্যাংকগুলোকে চ্যালেঞ্জ প্রদান করে।

৯০ দশকের দিকে প্রতিষ্ঠিত সেইনসবারি ব্যাংক বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছে, টেসকো বার্কলেসের কাছে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যে। মেট্রো ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে আচ্ছন্ন এবং সবেমাত্র নেশনওয়াইড প্রায় তিন বিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের চুক্তিতে ভার্জিন মানি কিনতে একটি চুক্তি করেছে।

তাহলে কি চ্যালেঞ্জার ব্যাংকের দিন শেষ? দেখা যাচ্ছে বড় ব্যাংকগুলো প্রযুক্তির কল্যাণে তাদের শাখাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে, তহবিল খরচ কমিয়ে আনছে, সেই সঙ্গে প্রযুক্তি ও অ্যাপ তৈরিতে বিনিয়োগ বাড়াতে পারছে এবং দেশজুড়ে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে সক্ষম হচ্ছে। আমানতের জন্য প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খারাপ অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বড় ব্যাংকগুলো এবং তাদের বিশাল ব্যালেন্স শিটগুলোর পক্ষে কাজ করে। তারা জালিয়াতিবিরোধী এবং অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং প্রবিধানের সঙ্গে যুক্ত ক্রমবর্ধমান খরচগুলো ভালোভাবে নির্বাহ করতে পারে। সুতরাং এর অর্থ হলো ছোট এবং মাঝারি আকারের ব্যাংকের পক্ষে অর্থপূর্ণ অর্জন করা কঠিন।

কিন্তু আসল সত্য হচ্ছে, ৯০ দশকের চ্যালেঞ্জার ব্যাংকগুলো প্রযুক্তির দ্বারা ব্যাপকভাবে চ্যালেঞ্জ করার কারণেই নতুন প্রজন্মের চ্যালেঞ্জার ব্যাংকগুলো ব্যাপকভাবে সফল হচ্ছে। ‘মনজো’ অধুনা ৪৩০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ সংগ্রহ করে তাদের কোম্পানির মূল্য পাঁচ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে এবং এটি গ্রাহক সংখ্যার ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের সপ্তম বৃহত্তম খুচরা ব্যাংক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।। ‘রেভুলাত’ মাত্র ৯ বছরের মধ্যে চার কোটি গ্রাহক বেস তৈরি করেছে। ব্রাজিলিয়ান নুব্যাংক ২০২২ সালে নিট লোকসান থেকে ২০২৩ সালে এক বিলিয়ন ডলার নেট লাভে পৌঁছে যায় এবং রাজস্ব অর্জিত হয়েছিল আট বিলিয়ন ডলারের বেশি। নুব্যাংক ২০২৩ সালে প্রায় দুই কোটি গ্রাহক যোগ করেছে, ফলে মোট গ্রাহক সংখ্যা ৯ কোটি ৪০ লাখে পৌঁছেছে। মাত্র দুই বছর আগে গ্রাহক সংখ্যা ছিল পাঁচ কোটি ৪০ লাখ।

বড় পার্থক্য হলো সময় এবং কাঠামো। আগেকার চ্যালেঞ্জার ব্যাংকগুলো পরিচালিত হতো শাখার মাধ্যমে। আর এই প্রজন্মের রেভুলাত, মনজো, স্টারর্লিং, চাইম, নুব্যাংক, উইব্যাংক প্রভৃতি সব চ্যালেঞ্জার ব্যাংকই ক্লাউড, এপিআই, এআই এবং অ্যাপ ভিত্তিক নেটওয়ার্ক বিপ্লবের উপর প্রতিষ্ঠিত। বড় বড় ব্যাংকগুলো দ্রুত স্কেলিং করতে পারে না কারণ তাদের কোর ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্মগুলো প্রতিটি দেশে আলাদা হয় ফলে তারা প্রায়শই আউটসোর্সিংয়ের সাহায্য নিয়ে থাকে। যেখানে চ্যালেঞ্জার ব্যাংক রেভুলাত ব্যতিক্রম, কারণ তারা একটি কোর প্লাটফর্ম দ্বারাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিচালিত হচ্ছে, যার কারণে নতুন পণ্য প্রচলন এবং বিভিন্ন দেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে না।

আমরা অনেকেই এটা বিশ্বাস করি, ব্যাংকিং এখনও তার রূপান্তরের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং চ্যালেঞ্জার ব্যাংকগুলোকে বহিরাগত ভাবা হলেও শেষ পর্যন্ত প্রযুক্তির দৌড়ে তারাই জয়ী হবে।

ব্যাংকিং আজ প্রযুক্তির মাধ্যমে রূপান্তরিত হচ্ছে। টেসকো, সেইনসবারি, মেট্রো ব্যাংক এবং ভার্জিন মানির সমস্যা ছিল যে, তারা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের পরিবর্তে শাখার মাধ্যমে পরিচালিত হত এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির নানা পরিবর্তনে তারা পুরনো হয়ে গিয়েছিল। ৯০ দশকের শেষের দিকে ক্রেডিট মার্কেট ক্রমবর্ধমান গতিতে বাড়ছিল, কিন্তু ২০০৭ সালে আর্থিক সংকটে পড়ার সময় থেকে নাটকীয়ভাবে নিম্নগামী হয়েছিল। তখন তারা যে লাভের কথা কল্পনা করেছিল তা চ্যালেঞ্জার ব্যাংকগুলোর জন্য কখনও বাস্তবায়িত হয়নি। যা ব্যাংকিংকে আরও বেশি পুঁজি নিবিড় এবং ব্যয়বহুল করে তুলেছে। এছাড়া, সুদের হার এক দশক আগে ঐতিহাসিক সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

আজকের বিশ্ব এমন একটি স্থানে দাঁড়িয়ে আছে যেখানে একটি অ্যাপ, এপিআই, ডাটা বিশ্লেষণ, এআই, প্ল্যাটফর্ম, অংশীদারিত্ব ভিত্তিক ব্যাংকিং এবং ইকোসিস্টেমের পরিবর্তন নতুন প্রজন্মের চ্যালেঞ্জার ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে নিতে দারুণভাবে সাহায্য করছে।

লেখক: ব্যাংকার, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/আইই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন