বিজ্ঞাপন

৪০ ডিগ্রি ছাড়াল রাজশাহীতে, বাড়তে পারে আরও

April 17, 2024 | 10:55 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাজশাহী: রাজশাহীতে প্রতিদিন বাড়ছে তাপমাত্রা। ঈদুল ফিতরের আগে-পরে মৃদু ও মাঝারি তাপপ্রবাহ থাকলেও এখন তা তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, আগামী কয়েকদিনে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।

বিজ্ঞাপন

তীব্র এই গরমে হাসপাতালে বাড়ছে রোগী, যার বেশির ভাগই শিশু। ডায়ারিয়াসহ বিভিন্ন রোগে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে তারা। একই সঙ্গে প্রভাব পড়ছে কৃষিতেও।

রাজশাহী আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, বুধবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ৬টায় রাজশাহীর তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৪৫ শতাংশ। এ দিন বিকেল ৩টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩০ শতাংশ।

এর আগে ১ এপ্রিল থেকে রাজশাহী অঞ্চলে মৃদু তাপপ্রবাহ শুরু হয়। এর মধ্যে ৪ এপ্রিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। এরপর থেকেই মূলত মৃদু তাপপ্রবাহ রূপ নেয় মাঝারি তাপপ্রবাহে।

বিজ্ঞাপন

এর মধ্যে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সোমবার (১৫ এপ্রিল) ছিল ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে মাঝারি তাপপ্রবাহ বুধবার তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে।

রাজশাহীতে এমন তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি সাধারণত বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে দেখা যায়। কিন্তু এবার শীত এসেছিল দেরিতে। এরপর চৈত্রের শেষ ও বৈশাখের শুরুতেই চোখ রাঙাচ্ছে আগুনমুখো সূর্য। এ সময় সাধারণত ঝড়-ঝঞ্ঝা লেগেই থাকে। কিন্তু রাজশাহী অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টি কিছুরই দেখা মিলছে না। খরতাপে বিবর্ণ হয়ে উঠেছে রাজশাহী।

বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকের বোরো ধান চাষের সেচ খরচ বাড়ছে। শুকিয়ে যাচ্ছে আম-লিচুর গুটি। বৃষ্টির পানি না পেয়ে প্রায় সব এলাকাতেই আম ও লিচুর গুটি ঝরে পড়তে শুরু করেছে।

বিজ্ঞাপন

টানা তাপপ্রবাহে স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও অচল হয়ে পড়েছে। বাড়ছে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুদিন থেকে রাজশাহীতে তাপপ্রবাহ নিয়ে সতর্ক থাকতে মাইকিং শুরু করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। এই গরমে হিট স্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচতে সতর্কতামূলক পরামর্শ দিচ্ছে সংস্থাটি।

এ অবস্থাতেও রাজশাহীবাসীর জন্য সুখবর নেই বলেই জানাচ্ছেন রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাজীব খান। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী কয়েকদিন রাজশাহী অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। শুধু তাই নয়, এ সময় তাপমাত্রা আরও বাড়তেও পারে।’

আবহাওয়া অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে ধরা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে। সে অনুযায়ী বুধবার রাজশাহীতে তীব্র তাপপ্রবাহই ছিল। এই তীব্র দাবদাহে হাঁসফাঁস করছে নগরজীবন।

অস্বস্তিকর আবহাওয়ায় জ্বর, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০, ২৪ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, গরমে অনেক শিশু ডায়রিয়া, হাঁপানি, জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগেও এসব রোগে আক্রান্তদের ভিড় বাড়ছে।

বিজ্ঞাপন

গত এক সপ্তাহের মধ্যে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি মাত্রায় বাড়তে শুরু করেছে বলে জানাচ্ছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে রোগীর চাপে এই হাসপাতালের ওয়ার্ডে ডায়রিয়া রোগীদের জায়গা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। ফলে ওয়ার্ডের বাইরে মানুষের চলাচলরত রাস্তার মেঝেতেও থাকতে হচ্ছে রোগীদের।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ৪৭ জন গরমজনিত রোগী ভর্তি রয়েছে রামেক হাসপাতালে। এর মধ্যে ৩২টিই শিশু। তাদের আবার অধিকাংশেই ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে এ রোগ হয়। সাধারণত দিনে তিন বা এর চেয়ে বেশি বার পাতলা পায়খানা হতে শুরু করলে তার ডায়রিয়া হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। গরম এলেই ডায়রিয়ার সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিশেষ করে শিশু-কিশোররা এই রোগে বেশি ভুক্তভোগী হয়।

রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের (ইএমও) ইনচার্জ ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেন, এখনো আমাদের হাসপাতালে রোগীর পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে আছে। তবে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে গরম এসেছে। এখন গরম যত বাড়ছে, ডায়রিয়া রোগীও তত বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে পানি ও তরল জাতীয় খাবার খওয়ার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন