বিজ্ঞাপন

ন্যাপ বাস্তবায়নের জন্য চাই রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আইনি ভিত্তি

April 23, 2024 | 11:29 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাহায্য দিতে ২০১৪ সালে ন্যাপ গ্লোবাল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। এরই আওতায় ২০২২ সালে বাংলাদেশ সরকার ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্ল্যান (জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা) গ্রহণ করে। এর আওতায় ২০২৩-২০৫০ সালের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ৫৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ৩৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশ ব্যয় করে, বাকি টাকা প্রয়োজন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে। ঢাকায় আয়োজিত চার দিনের ন্যাপ এক্সপোর মাধ্যমে সেটির যৌক্তিকতাই তুলে ধরা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন ন্যাপ অত্যন্ত চমৎকার উদ্যোগ। তবে এর কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য যা যা করা দরকার তা নিয়ে আরও কাজ করার আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় প্রয়োজন, সেটির অগ্রাধিকার নিশ্চিতের জন্য দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা আর সমন্বয়ের জন্য চাই আইনি ভিত্তি।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) মঙ্গলবার বাংলাদেশের জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনার অগ্রগতির ওপর গুরুত্বারোপ করে ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্ল্যান এক্সপো ২০২৪-এর একটি সেশন ও সেশন পরবর্তী কথোপকথনে এসব কথা উঠে আসে।

সেশনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। তাই জলবায়ু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তা অপরিহার্য।

বিজ্ঞাপন

সাবের হোসেন চৌধুরী আরও বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু সহনশীলতা গড়ে তুলতে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একইসঙ্গে জলবায়ু অভিযোজন প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নেওয়া এবং সব নাগরিকের জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।

মন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্রিয় পদক্ষেপ, সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা ও উদ্ভাবনী সমাধানের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি তার বক্তব্যে জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনা উন্নয়ন ও বাস্তবায়নে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি তুলে ধরেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু অভিযোজনে দেশটির নেতৃত্ব প্রদানের কথা উল্লেখ করেন।

সেশন শেষে কথোপকথনে সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কিং ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. এম আসাদুজ্জামান বলেন, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্টাডি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান কোভিডের কারণে পিছিয়ে যায়। দুই বছর আগে আমরা এটি তৈরি করে সরকারের কাছে দিয়েছিলামও। কিন্তু সেটি অনুমোদন পায়নি। এর মধ্যে তারা ন্যাপ তৈরি করেছেন। কিন্তু এর মাধ্যমে কী করছেন, তা নিয়ে তারা এখনো নিশ্চিত নয়।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, আমাদের দুর্বলতা ভালো করে না বুঝলে কোথায় কাজ করতে হবে তা বোঝা যাবে না। একই জিনিসের অ্যাডাপ্টেশন নানা উপায়ে হতে পারে। কিন্তু কোন পদ্ধতি সবচেয়ে ভালো হবে, কম খরচে তাড়াতাড়ি বেশি কাজ পাওয়া যাবে, সেটি বুঝতে হবে। আমাদের অ্যাকশন প্ল্যানে এগুলো বিস্তারিত ছিল। ন্যাপে এগুলো নেই। ন্যাপে বলা আছে কী কী করা যাবে, কী কী ভালো আছে, কী কী খারাপ আছে। কিন্তু সেটি অপারেশনাল কিছু নয়।

ন্যাপকে অপারেশনাল অর্থাৎ কার্যকর করতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার উল্লেখ করে এম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘কারণ এটি শুধু পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের একার কাজ নয়। এর সঙ্গে কৃষি, প্রাণিসম্পদ, মৎস মন্ত্রণালয় যুক্ত আছে। এখন কোন ক্ষেত্রটিকে প্রাধান্য দিতে হবে তার জন্য দরকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, সমন্বয়ের জন্য দরকার আইনি ভিত্তি। এতদিন আমরা কী কী করেছি, তার কোনো মূল্যায়ন নেই। আমাদের বুঝতে হবে কী করা যাবে আর কী করা যাবে না। ন্যাপে এত টাকা আনার কথা বলছি, কিন্তু এই টাকা কোথায় কীভাবে খরচ করতে হবে তা স্পষ্ট নয়। কেন, কোথায়, কীভাবে ও কতটুকু কাজ করতে হবে, তা ঠিক না করলে টাকা এনে কোনো লাভ নাই।’

সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা এ খান বলেন, ন্যাপ এক্সপোর উদ্দেশ্য ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন ফান্ডের যৌক্তিকতা তুলে ধরা, যা আমরা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরছি। ২০১৩ সাল থেকে ক্ষতির পরিমাণ তুলে ধরা ও ডেভেলপমেন্ট পার্টনারদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়ার জন্য এটিই সবচেয়ে ভালো প্ল্যাটফর্ম।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ২০২৩ থেকে ২০৫০ সালের জন্য ২৩০ বিলিয়ন ডলার চায়। আটটি সেক্টরে ১১৩টির মতো ইন্টারভেনশন খুঁজে বের করা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত সবগুলো সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে এটি ঠিক করা হয়েছে। এর আগে টাকা চাওয়ার জন্য আমাদের হাতে কোনো ডক্যুমেন্টস ছিল না। এখন ন্যাপের মাধ্যমে আমাদের হাতে একটি বেজ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে ২৫টি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ খাতে ৩৫০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। বাকি টাকা আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে চাইছি।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা সম্পর্কে ফিদা এ খান বলেন, এতদিন যত পরিকল্পনা হয়েছে তার সবগুলোই পাবলিক সেক্টরকে প্রাধান্য দিয়ে। আমরা ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্ল্যানে প্রাইভেট সেক্টরকে উৎসাহ দিয়েছি। পিপিপির আন্ডারে হোক বা অ্যাডাপ্টেশনের কোন কোন এলাকাগুলোতে তারা ইনভেস্ট করতে পারে, সেটি নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। আমরা দেখেছি প্রায় ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১২ বিলিয়ন ডলারের মতো এই অ্যাডাপ্টেশন ফান্ডে প্রাইভেট সেক্টর আসতে পারে। কোন কোন সেক্টরে তারা কাজ করতে পারে সেটি ঠিক করতে আমরা একটি বিজনেস মডেল তৈরি করেছি। প্রাইভেট সেক্টরকে লাভবান করার চিন্তা করেই আমরা তাদের যুক্ত করার কথা বলছি।

সেশনে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ। আরও উপস্থিত ছিলেন ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ও ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট ফাইন্যান্স সেলের চেয়ার এ কে এম সোহেল, আইটিএপি সদস্য ড. কেনেল ডেলুসকা। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ধরিত্রী কুমার সরকার ও পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মির্জা শওকত আলী বাংলাদেশের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা ২০২৩-২০৫০ উপস্থাপন করেন।

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন