বিজ্ঞাপন

রাজধানীর ১০ থানায় কিশোর গ্যাংয়ের উপদ্রব বেশি: ডিএমপি কমিশনার

April 27, 2024 | 2:52 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর ৫০টি থানার মধ্যে ১০টি থানায় কিশোর গ্যাংয়ের উপদ্রব বেশি বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ‘কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সামাজিক আন্দোলন নিয়ে ছায়া সংসদ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমরা অনেকগুলো কিশোর গ্যাং চিহ্নিত করেছি কিন্তু সরাসরি কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদার ধরা যাচ্ছে না। আইনের মারপ্যাঁচে তাদের পৃষ্ঠপোষকরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকছেন। তবে কিশোর গ্যাং নির্মূলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো গাফিলতি নেই। কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা প্রতিরোধে পুলিশের ওপর কোনো রাজনৈতিক চাপ না থাকলেও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাপ রয়েছে। যারা অনেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

তিনি বলেন, রাজধানীতে ২১ জন কাউন্সিলরের কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ থাকলেও তার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। তবে কিশোর অপরাধে পরিবার ও সমাজকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। খেলাধুলা, শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার অভাবে কিশোররা অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। ঢাকা শহরে শিশু কিশোরদের সামান্য খেলার মাঠের জন্য আন্দোলন করতে হয়। আজকের শিশুরাই আগামীর বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে অপরাধমুক্ত সোনার মানুষ গড়ে তুলতে হবে।

বিজ্ঞাপন

সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িতরা বেশিরভাগই অপরাজনীতির শিকার। অভিযোগ রয়েছে কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতা ও ‘বড় ভাই’রা শিশু-কিশোরদের তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করছে। অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। রাজনৈতিক ও ব্যক্তিস্বার্থে অর্থের বিনিময়ে অপরাধ করাচ্ছে। জমিজমা, ঘরবাড়ি দখল করাচ্ছে। আবার পুলিশ আটক করলে তাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনছে, প্রয়োজনে জামিনের ব্যবস্থাও করছে। ফলে এসব শিশু কিশোররা কিশোর গ্যাং কালচারে সম্পৃক্ত হয়ে বড় ভাইদের পক্ষে ভাড়ায় খাটছে।

তিনি বলেন, বড়ভাই নামধারী এসব প্রভাবশালীরা যাতে শিশু কিশোরদের চাঁদাবাজি, মিছিল-মিটিং, দখলবাজি, দলবাজিতে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে। তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া কোনোভাবেই কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। সুশাসনের অভাব এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতিও কিশোর গ্যাং কালচার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সর্বস্তরে কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সব শ্রেণি পেশার মানুষকে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ভয়েস রেইস করতে হবে।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের নেপথ্যের মদদদাতাদের তালিকা করে আইনের আওতায় আনতে হবে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কোনো চাপ থাকলে প্রয়োজনে প্রশ্রয়দাতাদের তালিকা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে প্রেরণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। প্রয়োজনে কিশোর গ্যাংয়ের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতাদের নামের তালিকা প্রকাশ করে এসব বড়ভাইদের মুখোশ উন্মোচন করা উচিৎ।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলররা নিজ উদ্যোগে কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িতদের সম্ভাব্য তালিকা তৈরি করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে কিশোর গ্যাং নির্মূলে সহযোগিতা করতে হবে। আমি প্রশ্ন রাখতে চাই, সরকারের এতো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসন তৎপর থাকার পরও কেন আমাদের কিশোর গ্যাং নিয়ে আতংকিত থাকতে হয়? তবে আশার দিক হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে কিশোর গ্যাং মোকাবিলায় স্বরাষ্ট্র ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। যা কিশোর গ্যাং কালচার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে ঢাকা কমার্স কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক জি এম তসলিম, সাংবাদিক জিয়া খান, সাংবাদিক অনিমেষ কর, সাংবাদিক কাওসার সোহেলী। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।

সারাবাংলা/এনইউ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন