বিজ্ঞাপন

শ্রমিকের অধিকার দিতে হবে– মিছিল-স্লোগানে সরব বন্দরনগরী

May 1, 2024 | 9:09 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বন্দরনগরী চট্টগ্রামে মে দিবসে মিছিল, সভা-সমাবেশ, সেমিনারসহ আরও নানা আয়োজনে শ্রমিকের অধিকারের দাবি তুলে ধরেছে বিভিন্ন সংগঠন। মাথায় লালপট্টি, হাতে লাল পতাকা আর বিভিন্ন দাবিসম্বলিত ব্যানার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে শ্রমিক-মেহনতি জনতা মিছিল-স্লোগানে প্রকম্পিত করে তুলে রাজপথ।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১ মে) সকাল থেকে তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে হাজারো শ্রমিক-জনতা রাজপথে নেমে আসার পর মিছিল-সমাবেশের নগরীতে পরিণত হয় চট্টগ্রাম। এসব আয়োজন থেকে শ্রমিকের স্বার্থবিরোধী কালাকানুন বাতিল, অবাধে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেয়া, ন্যায্য মজুরির দাবির পাশাপাশি ভাত-কাপড়ের সংগ্রাম অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।

ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি)

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি) চট্টগ্রাম জেলা কমিটি সকালে নগরীর রেলস্টেশন চত্বরে সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে লাল পতাকা মিছিল নিয়ে শ্রমিকরা নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

বিজ্ঞাপন

সমাবেশে সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি মৃণাল চৌধুরী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে এ দেশে প্রথম আইএলও কনভেনশন সই এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে মে দিবস পালন শুরু হয়। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকেই এদেশের শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত, এখন শ্রমিকদের ওপর দমনপীড়ন-জুলুম শুরু হয়েছে। দেশের বাজারে দ্রব্যমুল্য আকাশছোঁয়া। অথচ মজুরি চাইতে গিয়ে গুলিতে প্রাণ দিতে হচ্ছে শ্রমিকদের। মালিকরা বেতন বকেয়া রাখে। বেআইনিভাবে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে দেয়। বদলি-ছাঁটাইসহ নানা হয়রানি চলছে প্রশাসনের মদদে।’

তিনি বলেন, ‘শিল্প মালিকদের পাহারা দিতে শিল্পপুলিশ গঠন করা হয়েছে। শিল্পের পাহারার নামে তারা মালিকের জুলুমের পাহারা দেয়। শ্রমিকদের সভা-সমাবেশের অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সরকারকে বলব, জুলুম বন্ধ করুন। শ্রমিকের অধিকার দিতে হবে। অন্যথায় বাঁচার তাগিদে শ্রমিকরা মে দিবসের মতো আবারও ইতিহাস সৃষ্টি করবে।’

বিজ্ঞাপন

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. মছিউদদৌলা, সাংগঠনিক সম্পাদক রাহাতউল্লাহ্ জাহিদ, চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক শ্রমিক নেতা নুরুচ্ছাফা ভুঁইয়া, সিইউএফএল’র প্রাক্তন নেতা আব্দুস সালাম বাবু, মাহাবুবুর রহমান, নাভানা ব্যাটারিজ শ্রমিক ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি আবু তাহের, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশের (ইনসাব) মহানগর সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম, আকতার মিয়া, আশরাফ আলী, এইচ এম বাদশা, গার্মেন্ট টিইউসির নেতা পূর্ণ চন্দ্র দাশ, আদিবাসী শ্রমজীবী কল্যাণ সমিতির মহানগর সভাপতি নিখিল চাকমা এবং জ্ঞান বকুল চাকমা।

এদিকে, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আরেক অংশ সকালে নগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুলের সামনে সমাবেশ করে। সংগঠনের জেলা সভাপতি তপন দত্তের সভাপতিত্বে সমাবেশে জেলার যুগ্ম সম্পাদক ইফতেখার কামাল খান, কেন্দ্রীয় সংগঠক ফজলুল কবির মিন্টু, হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. হানিফ, বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুর রহিম ও সাধারণ সম্পাদক মো. মিজান, চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর কমিউনিটি সেন্টার ও ডেকোরেটার্স শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম এবং যুগ্ম সম্পাদক মো. পারভেজ, ইমারত নির্মান শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা সভাপতি আব্দুর শুক্কুর, কার্যকরী সভাপতি আব্দুল হালিম, সাধারণ সম্পাদক মহিন উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. দেলোয়ার, চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা প্রদীপ দাশ, বাঁশখালি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফ, হোটেল সেন্টমার্টিন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. মিজান এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বক্তব্য দেন।

সমাবেশে তপন দত্ত বলেন, ‘বিশ্বে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগ চলছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সৃষ্ট উৎপাদনযন্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে শিল্প, কৃষি, সেবাসহ বিভিন্ন খাতে কায়িক শ্রমের অবসান হতে চলেছে। আমাদের দেশসহ বিভিন্ন জনবহুল দেশে কর্মহীন জনবল সৃষ্টি হচ্ছে। বিপ্লবের অগ্রগতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই শ্রমজীবী মানুষকে যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে।’

সমাবেশ শেষে লাল পতাকা মিছিল নিয়ে শ্রমিকরা নগরীর নিউমার্কেট থেকে জিইসি মোড়ে গিয়ে শ্রম অধিদফতরের মে দিবসের সভায় যোগ দেন।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন

মে দিবস উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে থেকে র‌্যালি বের করে। পরে প্রেসক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক মিলনতায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সিইউজের সভাপতি তপন চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএফইউজের সহ-সভাপতি শহীদ উল আলম, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আলী আব্বাস, সিইউজের সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমদ ও মোহাম্মদ আলী, বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ রুবেল খান, প্রেসক্লাবের সভাপতি সালাহ্উদ্দিন মো. রেজা, সিনিয়র সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ, সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, সিইউজের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক অনুপ খাস্তগীর বক্তৃতা করেন।

সভায় সাংবাদিক নেতারা বলেন, শ্রমিক শ্রেণির সংগ্রাম চলবেই। শ্রমিকদের মধ্যে বিভাজন করতে পারলেই মালিকপক্ষ সফল। শ্রমিক শেণি যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তাহলে মালিকপক্ষ বিভাজন তৈরি করতে পারবে না। যুগে যুগে সাংবাদিকরা তাদের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করে আসছে। ঐক্যের মধ্যে আলাদা শক্তি আছে। ঐক্য, সহমর্মিতা অধিকার আদায়ের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।

‘এখন গরু দিয়ে হালচাষ হয় না’

মে দিবস উপলক্ষ্যে নগরীর জিইসি মোড়ে কে স্কয়ার কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রম দফতর, শিল্প সম্পর্ক শিক্ষায়তন ও সমাজকল্যাণ কেন্দ্র এবং শ্রম অধিদফতরের যৌথ উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম বলেন, ‘শ্রমিক বাঁচলে মালিক বাঁচবে, মালিক বাঁচলে শ্রমিক বাঁচবে। মালিক ও শ্রমিক উভয়ে বাঁচলে অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে, দেশ এগিয়ে যাবে। এখন গরু দিয়ে আর হাল চাষ করা হয় না, শ্রমিক দিয়ে মাটি কাটা হয় না, নির্মাণ শ্রমিক দিয়ে ইমারতে নির্মাণ সামগ্রী ওঠানো-নামানো হয় না। কলের লাঙ্গল ট্রাক্টর, এস্কেভেটর মেশিন কিংবা ক্রেন দখল করে নিয়েছে। তবে শ্রমিক বেকার হয়ে যায়নি। তারা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নিজেদের কর্মক্ষেত্রে সম্পৃক্ত রেখেছে। সুতরাং নিজেদের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

বিভাগীয় শ্রম দফতরের পরিচালক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, বিজিএমইএর ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বিকেএমইএর পরিচালক ফাইজুল ইমরান খাঁন, চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ্ এবং শ্রমিক নেতা তপন দত্ত ও শফি বাঙালি বক্তব্য দেন।

আলোচনা সভার আগে বের হওয়া র‌্যালি নগরীর ওয়াসা মোড় থেকে জিইসি মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

গণতান্ত্রিক গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের

মহান মে দিবস উপলক্ষ্যে নগরীতে গণর‌্যালি ও শ্রমিক সমাবেশ করেছে চতুর্থ আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ সেকশন ও গণতান্ত্রিক গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। এতে পোশাক শ্রমিকদের ১০টি সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশে গণতান্ত্রিক মজুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, গণতান্ত্রিক গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্বাস উদ্দিন, বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি মোরশেদ আলম বক্তব্য দেন। শ্রমিক নেতারা গণবান্ধব শ্রমনীতি প্রণয়ণের দাবিতে এবং শ্রমিকের শোষণমুক্তির আন্দোলন অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

জাতীয় শ্রমিক লীগ

জাতীয় শ্রমিক লীগ সিবিএ-নন সিবিএ সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে বিকেল ৪টায় নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামসংলগ্ন জিমনেশিয়াম চত্বর থেকে র‌্যালি বের হয়। এতে নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সদস্য সচিব আবুল হোসেন আবু।

সমবেত শ্রমিকদের উদ্দেশে আবুল হোসেন আবু বলেন, ‘মালিক-শ্রমিকের যৌথ উদ্যোগে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। কোনো ধরনের বিভাজন থাকলে, শ্রমিকদের অধিকার বঞ্চিত করা হলে দেশের উন্নয়ন যে গতিতে এগোচ্ছে, জননেত্রী শেখ হাসিনার সেই প্রয়াস বাধাগ্রস্ত হবে। তাই মালিক-শ্রমিক ভাই ভাই হয়ে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হবে।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন