বিজ্ঞাপন

আত্মহত্যা সমাধান নয়, নিজেকে ভালোবাসুন

May 2, 2024 | 4:01 pm

তৌহিদ-উল বারী

মৃত্যু অপরিহার্য। চিরন্তন সত্য এই যে, প্রত্যেক মানুষকে মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে। আজ নতুবা কাল। মালাকুল মউত যেকোনো সময়ে এসে আমাদের জান কবছ করবেন তা নিঃসন্দেহে মাথায় রাখতে হবে। মেনে নিতে হবে মৃত্যুকে যেভাবেই হোক। তবে এই মৃত্যুর ফয়সালা আমাদের হাতে নয়। বরঞ্চ এটি আল্লাহর হুকুমে। তবে ভিন্ন ধরনের মৃত্যু নিজেই নিজেকে হত্যা করা। বলা হয়ে থাকে নির্মমভাবে নিজেকে হত্যার নামই আত্মহত্যা।

বিজ্ঞাপন

সুখ-দুঃখ মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। মানুষ অতি সুখে উৎফুল্লতায় যেমন বেড়ে উঠে তেমনি অতি দুঃখে হতাশাগ্রস্থ জীবন পরিচালনা করে। যেকোনো মানুষের বেলায় এটি চরম সত্য। কিন্তু ভাবনার আর চিন্তার বিষয় হচ্ছে সুখের দিনে নয় বরং চরম থেকে চরম দুঃসহনীয় দিনে। যেদিনে একটা মানুষ নিজেকে নিজেই হত্যা করার মতো বিষয় বেছে নেয়। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো পরিস্থিতি তার আয়ত্তে থাকে না। সে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে আর মোটেও প্রস্তুত নয়। শুধুই মাথায় ঘুরপাক কিভাবে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়। কিভাবে নিজেকে দশ জনের থেকে আড়াল করা যায়। খালি চিন্তা, নিজেকে শেষ করতে পারলেই বুঝি বাঁচা গেলো। এমন কষ্টের আর দুর্দিনের পরিস্থিতিতেই মানুষ আত্মহত্যার মতো নিকৃষ্ট পথ বেঁচে নেয়।

আত্মহত্যা যে কত নির্মম, আত্মহত্যা যে কত নিষ্ঠুর-তা যদি একজন আত্মহত্যাকারী তার মৃত্যুর আগে সুস্থ মস্তিষ্কে বুঝতে পারতো! হয়তো, মৃত্যুর ওপারের জীবন কেমন আমাদের জানার সুযোগ নেই। তাই হয়তো বেঁচে থাকার এপারের জীবনে মানুষ এমন কিছু ঘটনার সম্মুখীন হয় যে ঘটনায় তার জীবন হয়ে ওঠে অতি তুচ্ছ। যা হননে একজন মানুষ একটি মুহূর্তের জন্য এই মায়াবী পৃথিবীটাকে ভুলে যায়। সিদ্ধান্ত নেঢ নিজেকে হত্যার মতো জঘন্যতম ঘটনা। এই নিষ্ঠুর ঘটনা হতে পারে একটি পরিবারের স্বপ্ন ভঙ্গের অন্যতম কারণ। যেটি পরে রূপ নেয় ভয়ংকর বিষণ্নতায় মোড়া এক অলীক পরিণতির।

কেন এই আত্মহত্যার প্রতি মানুষের এতো ঝুঁক? কেন এই সিদ্ধান্ত নিতে মানুষ একটা মুহুর্তের জন্যও ভেবে উঠে না? কি বলছে বিশিষ্টজনরা-প্রতিবছর প্রায় দশ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতি বছর সারা বিশ্বে যে সব কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটে তার মধ্যে আত্মহত্যা ত্রয়োদশতম প্রধান কারণ। কিশোর-কিশোরী আর যাদের বয়স পঁয়ত্রিশ বছরের নিচে, তাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে আত্মহত্যা। নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার অনেক বেশি। পুরুষদের আত্মহত্যা করার প্রবণতা নারীদের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ বেশি।

বিজ্ঞাপন

উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, প্রায় ২৭% থেকে ৯০% এরও বেশি সময় আত্মহত্যার সাথে মানসিক অসুখের সম্পর্ক থাকে । এশিয়াতে, মানসিক রোগের হার পশ্চিমা দেশের চেয়ে অনেক কম । যাদেরকে সাইকিয়াট্রিক ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে তাদের পূর্ণ আত্মহত্যার ঝুঁকি রয়েছে ৮.৬%। আত্মহত্যার মাধ্যমে মারা যায় তাদের প্রায় অর্ধেকের মধ্যে জটিল ডিপ্রেশন থাকতে পারে; এই বা অন্য কোনও মানসিক রোগ যেমন বাইপোলার ডিসঅর্ডার আত্মহত্যার জন্য ২০ গুণের বেশি ঝুঁকি বাড়ায়। অন্যান্য অবস্থার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত সিজোফ্রেনিয়া (১৪%), ব্যক্তিত্বের রোগ (৮%), দ্বিপক্ষীয় ব্যাধি, মোটা হওয়া জনিত ব্যাধি, এবং ট্রোমাউত্তর স্ট্রেস ডিসঅর্ডার।

অন্যরা অনুমান করে যে প্রায় অর্ধেক যারা আত্মহত্যা করে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে একটি স্বতন্ত্র রোগের আবির্ভাব ঘটতে পারে যাকে সীমানাগ্রাহ্য ব্যক্তিত্বের ব্যাধি হিসাবে দেখা হয়। সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৫% মানুষ আত্মহত্যা করেন। ঝুঁকির পরিমাণ বেশি থাকে এমন রোগ হল অতিরিক্ত খাওয়া জনিত রোগ।

প্রায় ৮০% আত্মহত্যা করেছেন যারা মৃত্যুর আগে এক বছরের মধ্যে ডাক্তার দেখিয়েছেন, এবং যারা আগের মাসে ডাক্তার দেখিয়েছেন তাদের প্রায় ৪৫% আত্মহত্যা করেছেন । যারা আত্মহত্যা করেছিলেন তাদের প্রায় ২৫-৪০% আগের বছর মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলির সাথে যোগাযোগ করেছিল। SSRI টাইপের এন্টিডিপ্রেসেন্ট শিশুদের মধ্যে আত্মহত্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে কিন্তু প্রাপ্তবয়স্কদের ঝুঁকি পরিবর্তন করে না।

বিজ্ঞাপন

তবে ইসলাম ধর্মে বলা আছে যে, এক কথায় আত্মহত্যা করা কবিরা গুনাহ বা বড় গুনাহ। যা তাওবা ছাড়া মাপ হওয়া সম্ভব না। একমাত্র তাওবার মাধ্যমেই এ গুনাহ থেকে মাফ পাওয়া যায়। কিন্তু আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির তাওবার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু তাওবা না করলেও আল্লাহ তাআলা ইচ্ছে করলেই ওই ব্যক্তিকে নিজ রহমতে মাফ করে দিতে পারেন। কিংবা তাকে দীর্ঘস্থায়ী শাস্তি দিতে পারেন।

আমাদের বিষন্ন লাগতেই পারে। মন খারাপ হতে পারে, হতাশ থাকতে পারে। এগুলো কোনো বড় বিষয় নয়। শরীরের রোগের মতো মনের রোগের চিকিৎসার বিষয়টি নিয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। আমাদের মনের যত্ন নিতে হবে। আত্মবিশ্বাসী হতে হবে, এ জায়গায় নিজেকে কঠোর থাকতে হবে।

মনে রাখতে হবে যে, জীবনে আঘাত, দুঃখ, বেদনা, কষ্ট আসে জীবনকে শক্ত করার জন্য; মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য নয়। মৃত্যু আমাদের জীবনের লক্ষ্য নয়, বেঁচে থাকাটাই আমাদের জীবনের লক্ষ্য। আমরা চাই, মানুষ নিজেকে ভালবেসে বেঁচে থাকুক, আত্মহত্যার মতো পাপ নিয়ে না ঘটাক জীবনের ইতি।

লেখক: শিক্ষার্থী

বিজ্ঞাপন
প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন