বিজ্ঞাপন

তাপপ্রবাহে গলছে পিচ, প্রকৌশলী নিয়ে সড়ক পরিদর্শনে দুদক

May 3, 2024 | 12:28 am

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

যশোর: যশোরে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের মধ্যে সড়কের পিচ গলে যাওয়ার ঘটনায় কারণ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সড়কগুলো নির্মাণে কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি বা অবহেলা ছিল না, সেসব বিষয় নিয়েও তারা তদন্ত করবে। এ উদ্দেশে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের প্রকৌশলীদের নিয়ে যশোর-নড়াইল মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট পরিদর্শন করেন দুদক কর্মকর্তারা।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২ মে) দুপুর ২টার দিকে যশোর-নড়াইল মহাসড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে সড়কের গলা পিচ পরীক্ষার পাশাপাশি সড়কের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করেন দুদক ও সওজ কর্মকর্তারা। তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে যশোরের বিভিন্ন সড়কের পিচ গলে যাচ্ছে— এমন খবরের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক এ পদক্ষেপ নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার সড়ক পরিদর্শনের সময় দুদক যশোরের সহকারী পরিচালক চিরঞ্জন নিয়োগী ও সহকারী পরিদর্শক সাফিউল্লাহসহ সড়ক বিভাগের দুজন সহকারী প্রকৌশলী উপস্থিত ছিলেন।

যশোর সমন্বিত জেলা কার্যাল দুদকের উপপরিচালক আল আমিন বলেন, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নির্দেশে যশোর নড়াইল সড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে সড়কের গলা পিচ পরীক্ষা করেছি। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত লিপিবদ্ধ করে আমরা প্রধান কার্যালয়ে পাঠাব। তদন্তের স্বার্থে আমরা এর বেশি বলতে পারছি না।

বিজ্ঞাপন

সড়ক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চার মাস আগে যশোর-নড়াইল আঞ্চলিক মহাসড়কে পাথর কার্পেটিংয়ের কাজ করা হয়। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ কোটি ৫৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।

সরেজমিনে যশোর-নড়াইল সড়কের যশোর অংশের ঝুমঝুমপুর এলাকায় দেখা গেছে, বৃহস্পতিবারও সড়কের পিচ গলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সড়কে যান চলাচলের সময় পিচ চাকায় লেগে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও যানবাহনের চাকার দাগ বসে যাচ্ছে সড়কে। যশোর-নড়াইল সড়ক ব্যবহারকারীরা বলছেন, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে এই সড়ক সংস্কারের সময়। এ সড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকার অধিকাংশ জায়গার পিচ গলে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

এদিকে তাপপ্রবাহে সড়কের পিচ গলে যাওয়ায় নির্মাণসংশ্লিষ্টদের দায়ী করছেন স্থানীয়রা। নির্মাণ কাজ নিয়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন দুদক ও সওজ কর্মকর্তাদের সামনে। মুরাদ হোসেন নামে স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, রোদ গরমে দুপুর থেকে রাস্তার পিচ গলতে শুরু করে। দুপুর গড়ানোর পর রাস্তার পিচ যেন কাদায় পরিণত হয়। রিকশার চাকা রাস্তায় আটকে যায়। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। রাস্তাও নষ্ট হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

নিরব হোসেন নামে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, যশোর-নড়াইল মহাসড়ক নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। যেভাবে নির্মাণ করছে, এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন সড়ক ব্যবহারকারীরা। সড়কে হেঁটে চললে জুতা পিচের সঙ্গে আটকে যাচ্ছে। এর দায় সওজ বিভাগের।

আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, সরকার সড়কের জন্য সঠিক বরাদ্দ দিয়েছে। কিছু ঠিকাদার ও সরকারি কর্তকর্তাদের অনিয়ম দায়সারা কাজের জন্য সরকারের বদনাম হচ্ছে।

সওজের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সড়কে সাধারণত ৬০ থেকে ৭০ গ্রেডের পিচ ব্যবহার করা হয়। এর গলনাঙ্ক ৪৮ থেকে ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে এই পিচ গলার কথা। কিন্তু তার অনেক আগেই পিচ গলে যাচ্ছে।

এর কারণ হিসেবে সওজ সূত্র বলছে, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলেও বাতাসের আর্দ্রতার কারণে অনুভূতির পরিমাণ আরও কয়েক ডিগ্রি বেশি হতে পারে। সড়কের পিচের ওপরে এই তাপমাত্রা আরও প্রায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকে। আর কালো হওয়ায় এই পিচ সূর্যের তাপও শোষণ করে বেশি। এ ছাড়া সড়কে চাকার ঘর্ষণের ফলে উৎপাদিত তাপও এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় পিচ গলে যেতে পারে। তবে এর বাইরে সড়কের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে সওজ অধিদফতর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, যশোর-নড়াইল সড়কের যেসব স্থানে বিটুমিনের পরিমাণ বেশি পড়েছে, গরমে সেখানে বিটুমিন গলে যাচ্ছে। এ জন্য গলে যাওয়া স্থানগুলোতে বালি ও নুড়িপাথর দেওয়া হচ্ছে, যেন গলে যাওয়া পিচ আগের অবস্থায় ফিরে আসে। সড়কে নিম্ন মানের কোনো সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি। দুদক তদন্ত করছে। অনিয়ম হলে তাদের তদন্তে জানা যাবে।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন