বিজ্ঞাপন

ঈদযাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ভয়াবহ দুর্ভোগের আশঙ্কা

May 29, 2018 | 8:46 am

।। মহিউদ্দিন সুমন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

টাঙ্গাইল: মাত্র ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার কাজ। কিন্তু এরই মধ্যে বৃষ্টিপাত চলতে থাকায় রাস্তাঘাটের এখানে-ওখানে উঠে গেছে পিচের ঢালাই, তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। ফলে গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার সড়কে প্রতিদিনই যানজটে আটকা পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। তারা এই মহাসড়কে যাত্রার কথা শুনলেই যেন অনেকটা আঁতকে উঠছেন।

আসছে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে যাত্রীদের এই শঙ্কা চরম আকার ধারণ করেছে। ঈদযাত্রায় যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকলে এবং ঈদের আগেই রাস্তার খানাখন্দ ঠিক করা না গেলে ঈদযাত্রায় দুর্ভোগের মাত্রা সীমা ছাড়াবে। আর এর ধকল পোহাতে হবে গোটা উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলাসহ মোট ২১ জেলার মানুষকে। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের আগেই রাস্তার কাজ অন্তত এমন পর্যায় পর্যন্ত শেষ করা হবে যেন ঈদযাত্রায় কোনো ভোগান্তি না হয় যাত্রীদের।

সরেজমিনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে দেখা গেছে, গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়ে প্রতিদিনই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীসহ বাস ও ট্রাকের চালকদের। বর্ষা আসার আগেই টানা বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে যাওয়ায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে ছোটবড় খানাখন্দ ও গর্ত।

বিজ্ঞাপন

চালক ও যাত্রীরা বলছেন, এই মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার অংশটির অবস্থা সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্থান হলো কদিমধল্যা, পাকুল্যা, জামুর্কি, নাটিয়াপাড়া, করটিয়া, টাঙ্গাইল বাইপাস, দেওহাটা, ধেরুয়া, সোহাগপাড়া ও ক্যাডেট কলেজ, ঘারিন্দা বাইপাস, রসুলপুর ও এলেঙ্গাসহ এলাকা।

যাত্রীদের অভিযোগ, অধিকাংশ সড়কের দুই পাশে কাঁচা মাটি ফেলায় এবং ব্রিজ নির্মাণের কাজ করায় প্রতিনিয়তই এসব স্থানে তৈরি হচ্ছে যানজট। আর ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ছে বাস-ট্রাক, তাতে যানজটের অবস্থা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। পর্যাপ্ত হাইওয়ে পুলিশ, থানা পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় রেকারের অভাবে বিকল হয়ে বা অন্য কোনোভাবে আটকে যাওয়া বাস বা ট্রাকও সময়মতো উঠানো যাচ্ছে না। ফলে একবার যানজট শুরু হলে তা সময়ের সাথে সাথে আরো তীব্র হয়ে উঠছে।

বিজ্ঞাপন

পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের আশঙ্কা, গত কয়েক বছরের মতো এবারো ঈদযাত্রায় উত্তরবঙ্গমুখী যাত্রীদের আতঙ্কের নাম হতে পারে এই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, চার লেন প্রকল্পের সড়কের কাজ চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত এগিয়ে গেছে। কিন্তু বেশ কয়েকটি সেতুর কাজ এখনো শেষ হয়নি। আবার মির্জাপুরের ধেরুয়াতে রেলক্রসিংয়ের ওপর ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ চলায় সেখানে যান চলাচল স্বাভাবিক গতিতে হচ্ছে না।

গোড়াই হাইওয়ে থানা পুলিশ জানায়, মির্জাপুরের ধেরুয়া রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ, কোণাবাড়ি ও চন্দ্রা এলাকায় দু’টি ওভারব্রিজ নির্মাণের কাজ চলছে। ফলে দুই দিক থেকে আসা ও যাওয়ার পথে যানবাহন ঠিকমতো পারাপার হতে পারছে না। একদিকে প্রবল বর্ষণ, অন্যদিকে তীব্র যানজটের কারণে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে বলে স্বীকার করে নিয়েছে হাইওয়ে পুলিশও।

বিজ্ঞাপন

এ পরিস্থিতিতে ঈদযাত্রায় যাত্রীদের ভোগান্তি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টাঙ্গাইল সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আমিমুল এহসান সারাবাংলাকে বলেন, সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ৮ জুনের মধ্যে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংস্কারসহ যানজট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তাই ঈদযাত্রায় যাত্রীদের চরম যানজট ও ভোগান্তির হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

চার লেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক জিকরুল হাসান বলেন, চার লেন প্রকল্পের প্রায় ৬৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২৬টি সেতুর মধ্যে ২৪টি সেতু ঈদের আগেই চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ফলে যানবাহনগুলো চার লেনেই চলাচল করতে পারবে। ফলে চার লেন প্রকল্পের কারণে যানজটের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

এদিকে, মির্জাপুরের ধেরুয়া রেলক্রসিং, কালিহাতীর পুংলী সেতু, টাঙ্গাইল শহর বাইপাসের রাবনা মোড়সহ যেসব স্থানে যানজটের আশঙ্কা বেশি, সেসব এলাকায় বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানালেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়। এ ছাড়া, দুর্ঘটনা কবলিত এবং রাস্তায় বিকল হওয়া যানবাহন দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার জন্য কয়েকটি স্থানে রেকার প্রস্তুত রাখা হবে বলেও জানান তিনি।

পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, ঈদের তিন দিন আগ থেকে মহাসড়কে যানচলাচলের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কমিটির প্রধান হিসেবে রাখা হয়েছে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়রকে। সব মিলিয়ে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব, ঈদের সময় অন্তত যেন মহাসড়কে কোনো যানজট না হয়।

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন