বিজ্ঞাপন

বিশ্বব্যাংক ছাড়াই চলবে স্মাট কার্ড প্রকল্প

May 29, 2018 | 1:07 pm

।। জোসনা জামান, স্টাফ করসপনডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায়  সংস্থাটি সহযোগিতা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাই সরকারের নিজস্ব অর্থায়নেই প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রকল্পটি দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

এ পর্যায়ে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১ হাজার ৮৮৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে প্রথম সংশোধনী ব্যয় ছিল ১ হাজার ৬৩৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। সেখান থেকে বৃদ্ধি পাচ্ছে ২৪৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা। তবে এ প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ১ হাজার ৩৭৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এরইমধ্যে প্রক্রিয়াকরণ শেষ করা হয়েছে। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন না করার কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব ও বিশ্বব্যাংক উইং এর প্রধান মাহমুদা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সহযোগিতা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পটির গতি কম হওয়ায় অর্থ ব্যয় করতে না পারায় সহায়তা বাতিল হয়ে গেছে।’

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে পরিকল্পনা কমিশনের একটি সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় ৯০ মিলিয়ন স্মার্ট কার্ড পারসোনালাইজেশন, মুদ্রণ ও বিতরণ এর জন্য ফরাসী প্রতিষ্ঠান ও বারথার টেকনোলজিস এর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। কিন্তু ওবারথার টেকনোলজিস চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময় অর্থ্যাৎ ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৯০ মিলিয়ন স্মার্ট জাতীয় পরিচয় পত্র উৎপাদন, পারসোনালাইজেশন ও উপজেলা পর্যায়ে প্রেরণের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাত্র ১০ দশমিক ৯ মিলিয়ন স্মার্ট কার্ড বিতরণ করায় তাদের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির শর্ত অনুযায়ী চুক্তিটি বাতিল করে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব জনবল স্মার্ট কার্ড পারসোনালাইজেশন ও বিতরণ করা হচ্ছে।

এছাড়া প্রকল্পের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বিশ্বব্যাংক (আইডিএ) ২০১৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির পর প্রকল্পে অর্থায়ন করছে না তাই অবশিষ্ট মেয়াদে প্রকল্পের বাকি কাজ সম্পাদনের জন্য প্রকল্প সাহায্যের পরিবর্তে সরকারি অর্থ সংস্থানের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে সরকারি খাতে ব্যয় বেড়েছে। তাই প্রকল্পটি সংশোধন করতে হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুর সারাবাংলাকে বলেন, মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তাই পরবর্তীতে আর সহায়তার বিষয়টি এক্সটেনশন করা হয়নি। এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে গেলে কাগজপত্র দেখেই বলতে হবে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়,একটি পূর্ণাঙ্গ এনআইডি সিস্টেম বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচির আওতায় সরকারি সুবিধা দেওয়াসহ উপযুক্ত সুবিধাভোগী শনাক্তকরণে সহায়ক ভুমিকা পালন করে। সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গে বেসরকারি কর্মসূচি বাস্তবায়নেও ন্যাশনাল আইডি সিস্টেম গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে। বিশেষ করে এ সিস্টেম ব্যবহারের ফলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ট্রানজেকসন ব্যয় হ্রাস পাবে। বিদ্যমান কাগজের তৈরি ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সফলতার প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা সংবলিত ন্যাশনাল আইডি সিস্টেম সঠিক কাজে সঠিক টার্গেট গ্রুপ নির্বাচনে সুদূরপ্রসারী ভুমিকা পালন করবে যার ফলে রাষ্ট্র এবং নাগরিক একের প্রতি অন্যের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।

এ প্রেক্ষাপটে একটি পূর্ণাঙ্গ এনআইডি সিস্টেম স্থাপনসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সংবলিত বিশ্বমানের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার জন্য উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক ও সরকারি  অর্থায়নে মোট ১ হাজার ৩৭৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য মূল প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০১১ সালের ৪ অক্টোবর অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে প্রকল্পটির মোট ব্যয় অপরিবর্তিত রেখে বাস্তবায়নকাল দেড় বছর বৃদ্ধি করে ২০১১ সালের জুলাই হতে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।

পরবর্তীতে প্রকল্পের বিভিন্ন অংশের ব্যয় বৃদ্ধি বা  কম এবং একটি নতুন অংশ অন্তর্ভুক্তি করে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন ১ হাজার ৬৩৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১১ সালের জুলাই হতে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী ২০১৬ সালের ২৯ জুন অনুমোদন দেন। আবারও প্রকল্পের মোট ব্যয় অপরিবর্তিত রেখে ২ দফায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাস্তবায়ন ২০১১ সালের জুলাই হতে ২০১৭ সালের পরিবর্তে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে পর্যন্ত ১ বছর বৃদ্ধি করা হয়। বর্তমানে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি এবং বাস্তবায়ন মেয়াদ অপরিবর্তিত রেখে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে, ৯০ মিলিয়ন স্মার্ট কার্ড পারসোনালাইজেশন, মুদ্রণ ও বিতরণ, ১০ মিলিয়ন লেমিনেটিং আইডি কার্ড মুদ্রণ ও বিতরণ, সকল উপজেলায় ইন্টারনেট সংযোগ ও ম্যানেজমেন্ট চার্জ, ডাটা সেন্টার (ডিসি) ও ডিজাস্টার রিকভারি সিস্টেম (ডিআরএস) এর সফটওয়ার ও সাপোর্ট সার্ভিস ব্যয়, কম্পিউটার ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ব্যয়, পরামর্শক সেবা ক্রয় এবং জনবলের বেতন ভাতা বাড়ানো হবে।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন,প্রকল্পটির মাধ্যমে নিরাপদ, সঠিক ও নির্ভরযোগ্য জাতীয় পরিচয় পত্র দেয়ার মাধ্যমে অধিকতর দক্ষ ও স্বচ্ছ সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র উৎপাদন,পারসোনালাইজেশন ও বিতরণের জন্য চুক্তিবদ্ধ ফরাসি প্রতিষ্ঠান ওভারথার টেকনোলজিস এর সাথে চুক্তি বাতিল করে নিজস্ব জনবল দ্বারা স্মার্ট আইডি কার্ড বিতরণ এবং পারসোনালাইজেশন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নতুনভাবে ১৬৫ জন জনবল প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনে ২০১০ সালে স্থাপিত ডাটা সেন্টার (ডিসি) এবং ডিজাস্টার রিকভারি সিস্টেম (ডিআরএস) এর অটোমডেড, ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম এবং বাংলাদেশ ভোটার রেজিস্টারি সিস্টেম (বিভিআরিএস) এর মান উন্নয়ন ও সহায়তা সেবার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সারাবাংলা/জেজে/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন