বিজ্ঞাপন

ধীর গতি জলযান ক্রয় প্রকল্পে 

May 11, 2024 | 11:21 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ধীর গতি বিরাজ করছে আকারের জলযান ক্রয় প্রকল্পে। প্রায় ৬ বছর  হলেও বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮০ শতাংশ। ২০২৩ সাল পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ৪৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে বাড়ছে ব্যয় ও মেয়াদ দুটোই। সর্বশেষ নির্ধারিত সময় ২০২৫ সালের জুনে শেষ করা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। ‘আকারের জলযান ক্রয়’ প্রকল্পে বিরাজ করছে এমন চিত্র।

বিজ্ঞাপন

প্রস্তাবটি নিয়ে ৬ মে অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মুল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। সেখানে নানা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) আব্দুল বাকী। সভায় প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে জানায়, করোনা মহামারির ধাক্কা সামলিয়ে না উঠতেই ডলার সংকটের কারণে প্রকল্পটি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত সময় যাচ্ছে।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড দেশের পানি সম্পদের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সেচ প্রকল্প, নদী খনন, নদী শাসন, বাঁধ ও স্লুইসসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ করেছে। বাপাউবোর বিভিন্ন স্থাপনাগুলো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত। সকল প্রকল্পে সড়ক পথে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত নয়। ফলে অনেক স্থানেই নৌ-পথে যাওয়ার প্রয়োজন হয়।

বিজ্ঞাপন

বিশেষভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে বিভিন্ন পোল্ডার তৈরি, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ মনিটরিংয়ের জন্য প্রায়ই বাপাউবোর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রকল্প চলাকালে এবং সমাপ্ত প্রকল্প তদারকিতে যেতে হয়। এ জন্য বাপাউবোর আধুনিক জলযান, লঞ্চ স্পিডবোটের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ ছাড়াও হাইড্রোলজিক্যাল জরিপ ও অনুসন্ধান কাজে ইকুইপমেন্টসহ সার্ভে বোর্ট এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিদর্শনে যাওয়ার জন্য স্ডিবোটের অভাব রয়েছে। ফলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদী শাসন, জল নিষ্কাশন কাজের পাশাপাশি পানিতত্ত্ব জরিপ অনুসন্ধান ও সার্ভে কাজে সার্ভেবোট, স্পিডবোট ইত্যাদি জলযান সংগ্রহ করা দরকার।

সূত্র জানায়, মূল প্রকল্পটি সরকারি অর্থায়নে মোট ৪৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালে বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়। পরবর্তীতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রকল্পের কিছু কাজের পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস বা বৃদ্ধি করে প্রথম সংশোধনী এবং মেয়াদ এক বছর অর্থাৎ ২০২২ সারের জুন পর্যন্ত অনুমোদিত হয়। পরে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ এক বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত এবং পরিকল্পনা কমিশন এক বছর অর্থাৎ ২০২৪ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। এক্ষেত্রে প্রকল্পের কিছু কাজের ব্যয় হ্রাস বা বৃদ্ধি করে সর্বশেষ অনুমোদিত প্রথম সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ব্যয় থেকে ১৮ দশমিক ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনীতে মোট ৬৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা সংস্থানের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে, যা প্রথম সংশোধিত ডিপিপি হতে ১০ কোটি ১৪ লাখ টাকা বেশি।

প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি: প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে ৪টি পরিদর্শন কাম সার্ভে বোর্ট তৈরি করে সরবরাহ অর্পিত ক্রয় কাজটির অনুমোদন লাভের পর ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অর্পিত ক্রয় কাজের নির্বাহক এজেন্সি হিসাবে খুলনা শিপইয়ার্ডেও সঙ্গে প্রকল্পভুক্ত এই কাজের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সে অনুসারে কাজ শেষের সময় ছিল ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু করোনা মহামারীর সার্ভে বোট তৈরিতে অস্বাভাবিক দেরি হয় এবং একাধিকবার এ কাজের সময় বৃদ্ধি করতে হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেডের নিজস্ব ইয়ার্ডে চারটি বোটের টুইন-হাল গুলো নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। বোট নির্মাণের অন্যান্য সরঞ্জাম, ইঞ্জিন, জেনারেটর, রাডার ও রেডিও কমিউনিকেশন সরঞ্জাম ইত্যাদি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে এলসি খোলা হলেও করোনা মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিদেশ থেকে আমদানি প্রয়োজন। এরকম যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জামের আমদানিতে দেরি হয়েছে।

পরবর্তী সময়ে ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে যন্ত্রপাতির মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ জন্য প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ১০ কোটি ১৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের মতামত: পরিকল্পনা কমিশন থেকে বলা হয়েছে, প্রকল্পভুক্ত চারটি সার্ভে ও ইন্সপেকশন বোট তৈরি করে সরবরাহ এবং হাইড্রোলিক ইক্যুইপমেন্ট সরবরাহ কাজের ব্যয় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা যুক্তিসঙ্গত নয় বলে প্রতীয়মান হয়। শুধু আমদানি করা যন্ত্রপাতির ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির যে পরিমাণ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান ডলারের বিনিময় হার অনুযায়ী এই অঙ্গ দুটির ব্যয় সে পরিমাণ বৃদ্ধি করা সমীচীন হবে।

সর্বশেষ অনুমোদিত আরডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ৬ বছরে ৩২৪৩১০১ কোডে পেট্রোল ও লুব্রিকেন্ট খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ৬০ লাখ টাকা, অর্থাৎ প্রতিবছর ১২ লাখ টাকা।

বিজ্ঞাপন

প্রস্তাবিত আরডিপিপিতে দেখা যায়, প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। পেট্রোল ও লুব্রিকেন্ট খাতে এক বছরে ২৯ লাখ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অত্যধিক বলে প্রতীয়মান হয়।

এ ছাড়া অনুমোদিত আরডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প মেয়াদে অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ৬ বছরে জলযান মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ১০ লাখ টাকা অর্থাৎ প্রতিবছর ২ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে এবং জলযান মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে এক বছরে ৮ লাখ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে,যা অত্যধিক বলে মনে হয়।

সারাবাংলা/জেজে/একে

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন