বিজ্ঞাপন

জলাবদ্ধতা নিরসনে ‘আশার বাণী’ নেই তিন সংস্থার প্রধানের কাছে

May 13, 2024 | 9:40 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সামনের বর্ষায় চট্টগ্রাম নগরীকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করার উপায় খুঁজতে এক টেবিলে বসেছিলেন তিন সংস্থার তিন শীর্ষ কর্মকর্তা। তবে কেউই জলাবদ্ধতা থেকে নগরীকে মুক্ত রাখার কোনো আশার বাণী শোনাতে পারেননি। বরং সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, বৃষ্টি হলে পানি উঠবেই।

বিজ্ঞাপন

এ অবস্থায় আপদকালীন ব্যবস্থা হিসেবে মেয়র একটি কুইক রেসপন্স টিম গঠনের প্রস্তাব তুললে সেটি সভায় সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তবে তিন শীর্ষ কর্মকর্তা জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসীকে রক্ষায় ‘কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে’ কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সোমবার (১৩ মে) বিকেলে নগরীর টাইগারপাসে অস্থায়ী নগর ভবনে চসিকের সম্মেলন কক্ষে জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ছিলেন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ এবং ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ।

সভায় চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই নগরীতে পানি ওঠে। এবারও উঠেছে। শুধু কিছু মাটি তুললে হবে না। সিডিএর যে প্রকল্পে সেনাবাহিনীর প্রকৌশলী বিভাগ কাজ করছে তারা কতটুকু মাটি তুলেছে, কি পরিমাণ গভীর আছে এসব জানাতে হবে। কারণ খালগুলো যদি গভীর না হয় পানি উঠবেই।’

বিজ্ঞাপন

‘পানি উঠবে, কেউ বলতে পারবে না পানি উঠবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক পরিবর্তন আসছে। দুবাই শহর, নিউইয়র্ক শহরে পানি উঠছে। আমাদের খাল গভীর করতে হবে। মাটি উত্তোলন করা গেলে জনগণ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে। শুধু কিছু মাটি তুললে হবে না। ময়লা পরিষ্কার করে যদি খাল গভীর করতে পারি তাহলে মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে মানুষ মুক্তি পাবে।’

ভূমিদস্যুরা পাহাড় শেষ করেছে অভিযোগ করে মেয়র বলেন, ‘পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। পাহাড় শেষ করছে ভূমিদস্যুরা। গতবার লালখান বাজারে একটি পাহাড় কাটার মাটি জিইসি মোড় পর্যন্ত চলে যায়। সেটা পরিষ্কার করতে করপোরেশনের টাকা খরচ হচ্ছে। পাহাড় কাটা মাটি যেখান থেকে নামে সেখানে সিলট্র্যাপ দিতে হবে। মূল খালের মাটি অপসারণ ও উপখালের মুখ মুক্ত করতে হবে। নালা আমরা পরিষ্কার করব। এসব কাজ করতে না পারলে কতটা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে পারব সেটা নিয়ে সন্দিহান।’

রেজাউল বলেন, ‘৩৬ টি খালের কাজ চলছে। বাকি ২১টা খালের অবস্থা খুব খারাপ। এগুলো নিয়ে ডিপিপি প্রক্রিয়াধীন আছে। যদি আগে ওয়াসা ফিজিবিলিটি করে থাকে তাহলে আর দরকার নেই। খালের মাটি স্পেসিফিকেশন অনুসারে উত্তোলন করতে হবে। এখন বে টার্মিনালের জন্য কিছু ওয়াল দেওয়া হয়। এটার প্রতিবাদ করি, সরাতে বলেছি। সেখানে খালের দুই পাশই বন্ধ। স্লুইস গেট থেকে ১০০ ফুটের একটি খাল না করলে আটটি ওয়ার্ড জলাবদ্ধতার শিকার হবে। সবকিছু সমন্বয় করে করব। সবাই তো চট্টগ্রামের মানুষের জন্য কাজ করছেন। হয়ত নিজেরা চিন্তা করে প্রকল্প নিয়েছেন। কিন্তু কাজের আগে আলোচনা করা উচিত।’

বিজ্ঞাপন

‘বিমান বন্দর সড়কে ম্যুরাল করেছি। যে দৃশ্যর জন্য করা হয়েছে, সেখানে একটা দেয়াল করা হয়েছে, যার ফলে সাগরের দৃশ্যটা আর দেখা যাচ্ছে না। বে-টার্মিনালে যদি উঁচু দেওয়াল দেয়া হয়, তাহলে আর সাগর আর দেখা যাবে না। সৈকত এলাকা অন্ধকার হয়ে পড়বে।’

জলাবদ্ধতা নিরসনে চসিক, সিডিএ, ওয়াসা, পাউবো, বন্দরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নিয়ে একটি শক্তিশালী কুইক রেসপন্স টিম গঠনের প্রস্তাব দেন মেয়র। সভায় উপস্থিত অন্য সংস্থার কর্মকর্তারা এ প্রস্তাব গ্রহণ করেন।

সভায় সিডিএ চেয়ারম্যান মো. ইউনুছ বলেন, ‘চট্টগ্রামের ইতিহাসে আমার জানা নেই সিডিএ ও সিটি করপোরেশনের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা এভাবে বসে কখনও সভা করেছেন কি না। আমরা দুই মুক্তিযোদ্ধা, হাতে হাত ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চট্টগ্রামে উন্নয়ন কাজ করে যাব। এটা আমাদের শপথ। আগে দেখতাম সিডিএ আর চসিকের একটি ধাক্কাধাক্কি লাগত। কার ফান্ড কে নিয়ে যাচ্ছে এটা নিয়ে মাথাব্যাথা থাকত।আমরা উন্নয়নের জন্য একসঙ্গে ফান্ড আনার চেষ্টা করব। তাহলে ফান্ডও বেশি আসবে। চসিক ও সিডিএ আমরা দুই ভাই মিলে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা দূর করব।’

বিজ্ঞাপন

বিএনপির পাপের প্রায়শ্চিত্ত এখনও করতে হচ্ছে উল্লেখ করে ইউনুছ বলেন, ‘কিছু পাপের অভিশাপ নিয়ে এখনও আমরা ঘুরছি। সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সারাজীবন চিৎকার করেছেন কর্ণফুলী নদীতে ঝুলন্ত সেতু করতে। কিন্তু বিএনপি সরকার করেছে পিলার সেতু। সে অভিশাপে কর্ণফুলীতে এখন পলি জমছে।’

‘বিশ্বব্যাংকের টাকা নিয়ে আগ্রাবাদে সড়কের নিচে এক বিশাল নালা করা করেছে। বালি এসে সেটা ভরে গেছে। পানি পাম্প করে নদীতে ফেলতে হয়। কার পাপের প্রায়শ্চিত আমরা করছি? জনগণ গালি দিলে মেয়রকে, আমাকে বা ওয়াসাকে দেবে। এখানে জলাবদ্ধতা না শুধু জলোচ্ছ্বাস হত। অমাবস্যা পূর্ণিমায় জোয়ারের পানি ঢুকে এটা হয়। এখন অনেক স্লুইচ গেট করা হয়েছে। কিন্তু পাম্প করার সময় যদি পলিথিন বা আবর্জনা চলে আসে তাহলে কিভাবে নামবে? সিটি করপোরেশনের কাজ বলে আমরা বসে থাকবো না। একসঙ্গে কাজ করব।’

ওয়াসার এমডিকে উদ্দেশ্য করে সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘ওয়াসার অনেক পাইপ চট্টগ্রামের নালার ভেতরে আছে। কোথায় পাইপলাইন আছে সেগুলো চিহ্নিত করে দেন। এসব পাইপের কারণে অনেক সময় পানি যেতে পারে না। আপনারা চিহ্নিত করে দিলে আমি বসে এগুলো নিয়ে কাজ করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছু খাল থেকে তোলা মাটি রয়ে গেছে, সরিয়ে নেব। এবার যাতে পানি না উঠে সে চেষ্টা করব অবশ্যই। না হলে প্রধানমন্ত্রী বলবেন, তোমরা আমার কর্মী, তোমাদের কাজ দেওয়ার পরও কেন চট্টগ্রাবাসী পানিতে ডুবছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ মনে হয় একটু ধীরে এগুচ্ছে। সেটা যেন দ্রুত হয়। পলিথিন বন্ধে একসঙ্গে কাজ করব। পাহাড় কাটা বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু তাই নয়, যাদের সক্ষমতা আছে সেসব প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিয়ে পাহাড় কাটা বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে।’

ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘আগে খাল ছিল ৭৬ টা। এখন ৫৭টা। বাকিগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই। আমাদের মাস্টারপ্ল্যানে সব ডিটেইল আছে, কোন খাল কত গভীরকরতে হবে। কত মাটি তুলতে হবে। কত সিলট্র্যাপ করতে হবে – সব ডিটেইল দেয়া আছে। খালগুলোতে চারশ-পাঁচশ ফুট পরপর নেট বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। কেন এগুলো বসানো হচ্ছে না জানি না। বহু জায়গায় কর্ণফুলী নদীতে চর উঠে গেছে। অনেক জায়গায় যেমন দুবাইতেও স্টাডি করে প্ল্যান করার পরেও ডুবে গেছে। আবহাওয়া পরিবর্তন একটা বড় প্রভাব ফেলছে। কাপ্তাইতে আগে সারা বছর বৃষ্টি হত। এখন হচ্ছে না। ভবিষ্যতে এমনভাবে পরিকল্পনা করতে হবে যেন নদীর পানি প্রবাহ কমে গেলে পানি সরবরাহ কিভাবে করবে সেটি চিন্তা করা হয়।’

সভায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সিডিএর প্রধান প্রকৌশনী কাজী হাসান বিন শামস, জেলা প্রশানের সিনিয়র সহকারি কমিশনার এস এম আলমগীর ও জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর রকিবুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/আইসি/একে

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন