বিজ্ঞাপন

মানুষের সেবায় আইনজীবীদের এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধান বিচারপতির

May 15, 2024 | 1:18 am

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মানুষের সেবায় কাজ করার মানসিকতা নিয়ে আইনজীবীদের এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, স্মার্ট লিগ্যাল এইডের জন্য আপনাদের তৈরি হতে হবে। আপনারা যদি এগিয়ে না আসেন তাহলে স্মার্ট লিগ্যাল এইড অপূর্ণ থেকে যাবে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৪ মে) সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস-২০২৪ উপলক্ষে ‘স্মার্ট লিগ্যাল এইড, স্মার্ট দেশ— বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ এবং ‘উচ্চ আদালতে আইনি সেবার প্রসার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, একটি দেশের শাসন বিভাগ স্মার্ট হলে সেই দেশের সরকার স্মার্ট হবে। দেশটিও স্মার্ট হবে। লিগ্যাল এইডকে (আইনি সহায়তা) স্মার্ট করতে গেলে যেসব আইনজীবীরা এই সহায়তা দেবেন, তাদের স্মার্ট হতে হবে। আইনের জ্ঞানে স্মার্ট হতে হবে। বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। তখনই আপনি একজন স্মার্ট আইনজীবী হিসেবে স্মার্ট লিগ্যাল এইড দিতে পারবেন। আর আইনজীবী হিসেবে আপনারা যারা আছেন, মানুষের সেবায় আপনারা যদি এগিয়ে না আসেন তাহলে স্মার্ট লিগ্যাল এইড অপূর্ণ থেকে যাবে।

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, আমাদের সংবিধানে আইনের দৃষ্টিতে সবার সমতাকে মৌলিক অধিকারের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৫-এ বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে যেসব বিধান সন্নিবেশিত হয়েছে তা মূলত মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারেরই নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। আমাদের পবিত্র সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে বর্ণিত ‘আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার’, ‘আইনের চোখে সমতা’ ও ‘ন্যায় বিচারের অধিকার’ এগুলোর দেশের প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার।

বিজ্ঞাপন

লিগ্যাল এইডের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচার পেতে অভিগম্যতায় একাধিক আর্থসামাজিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যেমন— মামলার খরচ বহন করার সঙ্গতি নেই বলে অনেক বিচারপ্রার্থীই আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন না। এ কারণে কেবল আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে নাগরিকের এই সাংবিধানিক অধিকার যেন লঙ্ঘিত না হয় সে লক্ষ্যে সরকার লিগ্যাল এইড কার্যক্রমের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মামলা সম্পৃক্ত বিভিন্ন খরচ বহন করছে। ফলে দেশের একজন নাগরিক যত অস্বচ্ছলই হোন না কেন, আর্থিক অসঙ্গতি এখন তার ন্যায় বিচার পাওয়ার অভিগম্যতায় আর কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়।

দেশের প্রান্তিক মানুষকে বিনামূল্যে আইনি সেবা দিয়ে আসছে লিগ্যাল এইড। ছবি: সারাবাংলা

ওবায়দুল হাসান বলেন, সরকার লিগ্যাল এইড কার্যক্রমকে তৃণমূল পর্যায়ে কার্যকর করার জন্য জেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত লিগ্যাল এইড কমিটি তৈরি করেছে। এই কমিটিগুলোর মাধ্যমে দেশের গণমানুষের মধ্যে আইনি সচেতনতা তৈরির পদক্ষেপ নিতে হবে। আমি অবগত আছি, দেশের লিগ্যাল এইড অফিসাররা তাদের বিভিন্ন উদ্ভাবনী পদক্ষেপ দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের মধ্যে লিগ্যাল এইডের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন, মানুষকে তাদের আইনি অধিকার সম্পর্কে সচেতন করছেন।

কারাগারে দীর্ঘদিন ধরে আটক রয়েছে, অথচ নিযুক্ত কোনো আইনজীবী নেই— এমন অনেক কারাবন্দি লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে আইনজীবী পাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি। বলেন, সারা দেশের লিগ্যাল এইড অফিসে মিডিয়েশনের (মধ্যস্ততা, মীমাংসা) মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির সংখ্যাও বেড়ে চলছে। আমি আশাবাদী, আমাদের দেশের লিগ্যাল এইড অফিসারদের পরিচালিত মিডিয়েশনের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তির এই অভূতপূর্ব সাফল্য লিগ্যাল এইড কার্যক্রমকে প্রচলিত বিচার প্রক্রিয়ার কার্যকর পরিপূরক হিসেবে গড়ে তুলবে।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের প্রতিটি বেঞ্চ যদি মাসে কমপক্ষে একটি করে এবং আপিল বিভাগ যদি মাসে কমপক্ষে দুটি করে লিগ্যাল এইডের মামলা নিষ্পত্তি করে, তাহলে সুপ্রিম কোর্টের লিগ্যাল এইডের মামলা খুব দ্রুত নিষ্পত্তি হবে।

আপিল বিভাগের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু তার জীবনে ক্ষমতা নয়, সমতা চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুই একমাত্র ব্যক্তি যিনি আমাদের দেখিয়ে গেছেন সমতা কাকে বলে। আমরা সেই সমতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি। কিন্তু আজও আমরা সেই সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজের জায়গা থেকে সমতার মধ্যে থাকার চেষ্টা করা। আমাদের মধ্যে মোরালিটির যে অভাব সেটাকে উন্নত করতে হবে।

আলোচনা সভায় সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি নাইমা হায়দার স্মার্ট লিগ্যাল এইড প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আইনজীবীদের মন-মানসিকতার পরিবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক। এ ছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী এবং জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক (সিনিয়র জেলা জজ) মোহাম্মদ আল মামুন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

বিজ্ঞাপন

সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি নাইমা হায়দারের সভাপতিত্বে এবং সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসার ফারাহ মামুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্য সচিব অবন্তি নুরুল। এ সময় সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তা এবং শতাধিক সাধারণ আইনজীবী ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন