বিজ্ঞাপন

বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে কমবে ঋণ, লক্ষ্যমাত্রা ১৬ হাজার কোটি টাকা

May 15, 2024 | 10:02 am

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মূল্যম্ফীতি আর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ‘সংকোচনমূলক’ বাজেট করলেও ঘাটতি আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি। এই বাজেট ঘাটতি পূরণে সরকার বিভিন্ন খাত নিয়ে ঋণ নিয়ে থাকে, যার বড় একটি উৎসব সঞ্চয়পত্রও। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের জন্য দেওয়া শর্ত অনুযায়ী সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। রাতারাতি সেই পরিমণ শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব না হলেও বাজেটে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে এর পরিমাণ কমানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় দুই হাজার কোটি টাকা কম। চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা রয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানাচ্ছে, বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার জন্য আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছিল তার মধ্যে সরকারকে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ কমিয়ে আনার কথাও ছিল। আইএমএফের শর্ত, আগামী কয়েক বছরে এ খাত থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে।

এদিকে সঞ্চয়পত্রে উচ্চ সুদের হারও এই খাত থেকে ঋণ নিতে সরকারকে নিরুসাহিত করছে। বর্তমানে সঞ্চয়পত্র খাতের ঋণে সুদের হার ১২ শতাংশের বেশি, যা অন্যান্য খাতের তুলনায় অনেক বেশি। এ কারণেও সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে কমিয়ে আনার চেষ্টা করছিল। এ খাতে সুদ ব্যয় কমাতেও সরকারের পক্ষ থেকে সঞ্চয়পত্র কেনায় নানা শর্ত আরোপ করা হয়েছে। যেমন— এখন কেউ এ খাতে পাঁচ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করতে চাইলে তাকে অবশ্যই ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেক বিনিয়োগকারী সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে ফেলছেন। এ অর্থ তারা সংসারের কাজে ব্যয় করছেন। ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বলতে গেলে অর্ধেকে নেমে এসেছে। এসব কারণে সঞ্চয়পত্রের নিট (প্রকৃত) বিক্রিতেও দেখা গেছে নেতিবাচক হার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাস (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির ঋণাত্মক পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে নিট বিক্রির ঋণাত্মক পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৫১০ কোটি টাকা।

ঋণাত্মক হওয়ার অর্থ হচ্ছে এখন আর সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারকে ঋণ নিতে হচ্ছে না। ফলে এ খাতে সরকারকে নতুন ঋণের সুদ গুনতে হচ্ছে না। তবে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধের বিপরীতে সরকারকে এখনো বাজেটে বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ রাখতে হচ্ছে। যেমন— চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪০ হাজার ২০ কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ২০২৩ এপ্রিলে সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৬০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি এপ্রিলে এই ঋণের পরিমাণ ২১৪ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৬০ হাজার ৭১৪ কোটি টাকায়। এর আগে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে সব মিলিয়ে এক লাখ আট হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে গ্রাহকদের মূল টাকা (বিনিয়োগ) ও মুনাফা (সুদ) বাবদ পরিশোধ করা হয় ৮৮ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা।

হিসাব বলছে, অর্থবছর শেষে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর এ খাতে সরকারের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৫২ দশমিক ৪৪ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরেছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব হিসাবে দেখা যায়, গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এ খাত থেকে ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ কম ঋণ নিয়েছিল সরকার। ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট এক লাখ ১২ হাজার ১৮৮ কোটি ২৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৭০ হাজার ২২৯ কোটি টাকা গ্রাহকদের পরিশোধ করা হয়। সে হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছিল ২০১৬-১৭ অর্থবছরে— ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।

নতুন সব লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সংকোচনমূলক এই বাজেট আগামী ৬ জুন (বৃহস্পতিবার) জাতীয় সংসদে পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এটি অর্থমন্ত্রীর প্রথম হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদের প্রথম বাজেট। এই বাজেটের সম্ভাব্য আকার হতে পারে সাত লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা টাকা। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। ফলে আগামী বাজেট চলতি বাজেট থেকে ৩৫ হাজার ১১৫ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি।

বিজ্ঞাপন

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, আগামী বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা (অনুদান ছাড়া)। রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হতে পারে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল পাঁচ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে চার লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করা হয়।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন