বিজ্ঞাপন

বাই নাউ পে লেটার—এসএমই ব্যবসায় গতি ত্বরান্বিত করতে পারে

May 15, 2024 | 2:31 pm

মো. সাইফুল আলম তালুকদার

বাই নাউ পে লেটার (বিএনপিএল) বা এখন কিনুন পরে পরিশোধ করুন— এসএমই ব্যবসায় গতি ত্বরান্বিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

বিজ্ঞাপন

বাই নাউ পে লেটার (বিএনপিএল) সম্প্রতি অন্যতম প্রধান আর্থিক পণ্য হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। প্রচলিত ক্রেডিট পণ্যের বিপরীতে বিএনপিএল জনপ্রিয় ভোক্তা মার্কেটপ্লেস‌ অ্যামাজনেও ছোট টিকিট আকারে সেবা প্রদান করেছে।

বিএনপিএল মডেলে একজন ক্রেতা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ছোট ছোট কিস্তিতে ক্রয় মূল্য পরিশোধ করতে পারেন। অন্যদিকে বিক্রেতা ক্রেতার অর্থদাতার কাছ থেকে মোট বিক্রয়মূল্যের অগ্রিম অর্থ পেয়ে থাকেন। এভাবে, বিএনপিএল বিক্রেতাদের গড় বিক্রয়ের সংখ্যা এবং মোট বিক্রয় মূল্য বাড়াতে সাহায্য করে।

এসএমই ব্যবসায়ীদের যেহেতু বিক্রয় মার্জিন অনেক কম হয়ে থাকে এবং সেইসঙ্গে বিক্রয় মূল্য যদি কয়েকদিন পরে ক্রেতার কাছ থেকে পেয়ে থাকেন তাহলে তাতে তাদের নিট মুনাফার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।‌ আর‌‌ এ থেকে উদ্ধার করতে পারে বিএনপিএল, কেননা এটি ক্রেতা, বিক্রেতা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান সবাইকেই একটি সুবিধাজনক লেনদেন ও মুনাফা লাভে সহায়তা করে।

বিজ্ঞাপন

তার মানে দাঁড়াচ্ছে, এই সেবাটি দ্বারা সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনুন্নত এসএমই ব্যবসায়ীদের অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা সম্ভব।

এছাড়াও সাম্প্রতিক মুদ্রাস্ফীতির যুগে এসএমই খরচ কমানোর প্রক্রিয়া হিসেবে এই মাধ্যমে বি-টু-বি (ব্যবসা থেকে ব্যবসা) বাজার ধরতে সক্ষম হবে।

আর এই বি-টু-বি ব্যবসা সম্পাদনে ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে ইনভয়েস একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে ইনভয়েস সংক্রান্ত লেনদেন নিষ্পত্তিতে যদি ঋণের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে সেটা ক্রেতা-বিক্রেতার জন্য সুবিধাজনক হয়। শুধু তাই নয়, যে কোনো ব্যবসায় পণ্য খোঁজা, ক্রয়, গুদামজাতকরণ, দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, বিক্রি এবং ধারে বিক্রি করা পণ্যের অর্থ সংগ্রহ প্রভৃতি কাজে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল লোনের প্রয়োজন হয়।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের দেশের ৯০ শতাংশ এসএমই ব্যবসায়ী ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ পান না। ফলশ্রুতিতে তারা পরবর্তীতে উচ্চ সুদে বিভিন্ন সূত্র থেকে অর্থ ধার করেন এবং আজীবন ঋণের চক্রে ঘুরপাক খান।

তাই বিএনপিএল হলো এমন একটি স্বল্পমেয়াদী অর্থায়ন পণ্য যা ছোট ব্যবসায়ীদের নগদ প্রবাহ স্বল্পতা, কার্যকরী মূলধনের সীমাবদ্ধতা এবং ব্যবসায়ের বিভিন্ন চক্রাকার চাহিদা মেটাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

বৈশ্বিক বিএনপিএল বাজারের আকার ২০২২ সালের তুলনায় ২০৩২ সালে বৃদ্ধি পাবে প্রায় ৫৩৩ শতাংশ। অর্থাৎ, ২০২২ সালে এই বাজারের আকার যেখানে ছিল ২৫.৪ বিলিয়ন ডলার তা বৃদ্ধি পেয়ে ২০৩২ সালে উন্নীত হবে ১৬০.৭ বিলিয়ন ডলারে। কিন্তু ডাবলিনভিত্তিক একটি রিসার্চ কোম্পানির গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে বিএনপিএল ব্যবসা ২০২৪ থেকে ২০২৯ সালের মধ্যে বৃদ্ধি পাবে মাত্র ১০.৭ শতাংশ হারে।

গ্ৰস মার্চেন্ডাইজ ভ্যালু হিসেবে বিএনপিএল ব্যবসার আকার ২০২৯ সালে আমাদের দেশে দাঁড়াবে ২.১৪ বিলিয়ন ডলার বা ২৫ হাজার কোটি টাকা। ফিনটেক ফিউচার ম্যাগাজিনের তথ্য অনুসারে, বিএনপিএল ঋণ ব্যবসায় স্বাস্থ্য খাত সবচেয়ে বেশি মুনাফা অর্জনে সহায়তা করেছে।

বিজ্ঞাপন

আমাদের দেশে গার্মেন্টস শ্রমিকের সংখ্যা ৪০ থেকে ৪৫ লাখ। এই শ্রমিকদের নিয়ে গত কয়েক বছর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি জরিপে দেখা গেছে, শ্রমিকরা বছরে গড়ে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত খাতে ব্যয় করে। এর অর্থ হচ্ছে ৪০ লাখ শ্রমিকের স্বাস্থ্য সেবায় বছরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হয়। তবে সামগ্রিকভাবে আমাদের দেশের স্বাস্থ্য খাতের বাজারের আকার ২০২৩ সালে ছিল প্রায় ১.৫ লাখ কোটি টাকার ওপরে।

আমাদের দেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ছিল মাত্র ২৩ লাখ ৩৭ হাজার এবং লেনদেনের পরিমাণ ছিল মাত্র দুই হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। উপরের উদাহরণ থেকে বোঝা যায়, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বিএনপিএল ভালো ভূমিকা রাখতে পারে, যেহেতু এই ঋণের সুদের হার ক্রেডিট কার্ডের চেয়ে কম। আবার যারা ব্যাংক সেবার বাইরে রয়েছে তাদের অন্তর্ভুক্তিকরণ পর্যায়ে বিএনপিএল সেবার মাধ্যমে কেনাকাটা করার জন্য সহজে ঋণ প্রদান করলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধির হার সহজ হবে।

লেখক: ব্যাংকার

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/আইই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন