বিজ্ঞাপন

তেল ছাড়া ইফতারির দোকান

May 29, 2018 | 5:05 pm

।। মাকসুদা আজীজ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ইফতারের ছোলা, পেঁয়াজু, চপের চাপে ইফতার শেষে সারারাত পেটে চেপে বসে গ্যাস, তার উপরে তেলে ভাজা খাবার খেলে শরীরের ক্ষতি তো আছেই। ধমনীতে চর্বি জমে রক্ত চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যায়, শরীর স্থুল হয়ে যায়, চলা ফেরায় কষ্ট, শ্বাস নিতে কষ্ট আরও কত কী!

তবুও সেই ছোলা, পেঁয়াজু আর চপের প্রতি আকর্ষণ এড়ানো প্রায় অসম্ভব। ডাক্তাররা তাদের কথা বলতে থাকেন আর রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় নানান লোভনীয় পদ। ব্যাস আর কী, সেই খাওয়া সেই রোগ বালাই আর সেই ভোগান্তি

সাওল হার্ট সেন্টার, সাওল শব্দের অর্থ সায়েন্স অ্যান্ড লিভিং। এই হার্ট সেন্টার শুধু হৃদয়ের চিকিৎসাই করে না, হৃদয়কে সুরক্ষার আরও ১৭টি উপায়ের সন্ধান দেয়, যেন হৃদয় থাকে সব সময়ের জন্য সুস্থ। এর মধ্যে আছে প্রতিদিন ৩৫ মিনিট হাঁটা, আছে যোগ ব্যায়াম করা, ফল খাওয়া, সবজি খাওয়া, পরিমিত খাবার খাওয়া আর সবচেয়ে জরুরি তেল যুক্ত খাওয়া না খাওয়া। এখন কথা হচ্ছে এই খাওয়া কোথায় পাওয়া যাবে? কীভাবেই বা বানানো যায় এমন খাবার? আর তেল ছাড়া বানানো হলে সুস্বাদু হবে তার নিশ্চয়তাই বা কী? এমন সাত পাঁচ ভেবে অবশেষে রান্নার দায়িত্বটাও নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে সাওল হার্ট সেন্টার। রাজধানীর ইস্কাটনে গার্ডেন রোডে নৌবাহিনীর অফিসটির ঠিক পেছনে ছোট্ট করে শামিয়ানা খাটিয়ে তাতে বিক্রি করছে তেল বিহীন ইফতারির পদ।

বিজ্ঞাপন

বিকাল চারটা থেকে শুরু হয় ইফতারি বিক্রি করা। মোট ১৮টা পদ দিয়ে শুরু হয় ইফতারের বেচা-কেনা। এখানে থাকে বিফ ও চিকেনের হালিম, চিকেন গ্রিল, সাসলিক, চিকেন চপ, মাছের চপ, মাছের চিপস, ডিম চপ, পেঁয়াজু, ছোলা, লাউ পায়েস। শুধু তাই না কেউ যদি তৈরি করা ইফতার কিনতে না যান তাদের জন্য রয়েছে লাল আঁটা, লাল চিড়া, হাতে ভাজা সারমুক্ত মুড়ি। কিনে নিয়ে নিজেই বানিয়ে নিতে পারেন স্বাস্থ্যসম্মত ইফতার।

ইফতারি বিক্রি যদিও শুরু হয় বিকাল চারটায়, পাঁচটা সাড়ে চারটা বাজতেই গুটিয়ে ফেলতে হয় দোকান। এর মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায় সব খাবার। সব মানে সব। একটা চপ কেনার জন্যেও হয় তীব্র প্রতিযোগিতা। খাবারের দামও যে খুব বেশি তাও না। একটা ডিম চপের দাম বিশ টাকা, আর চিকেন চপ মাত্র ত্রিশ টাকা, একটি চিকেন সাসলিক পঞ্চাশ টাকা।

বিজ্ঞাপন

তাহলে কম দামই কি খাবারের প্রতিযোগিতা এত বাড়িয়ে দেয়? বিনা তেলের ইফতারির দোকানে আসা একজন ক্রেতা জানালেন, না। খাবারে দাম নয় বরং মানই এর জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে এতটা। তিনি জানান, প্রায় প্রথম রোজা থেকেই এখান থেকে খাবার নিচ্ছেন তিনি। ইফতারে দিব্যি অনেকটা খাওয়া যায়, একটুও খারাপ লাগে না, পেটে গ্যাসের সমস্যা হয় না, পেট ফাঁপানো অনুভূতি হয় না। আর শরীরটা বেশ ঝরঝরা লাগে।

দোকানী জানান, আমাদের এই বিনা তেলে ইফতারির বিক্রি করা একটা পরীক্ষামূলক প্রকল্প। আমরা প্রতিদিন মাত্র দেড়শ লোকের আয়োজন করতে পারি। মুহূর্তেই বিক্রি হয়ে যায় ইফতারির পদগুলো। কোনো কোনোদিন তো আমরা আসরের ওয়াক্তের আজান দিতেই গুটিয়ে ফেলতে পারি।

কথা হয় সাওল বিনা তেলে ইফতারি প্রকল্পের সিইও কাজল ইসলামের সঙ্গে। তিনি নিজেই রান্না ঘরে গিয়ে সহকারীদের নিয়ে তৈরি করেন ইফতার। জানান, প্রতিদিনই তারা নতুন একটি পদ তৈরি করার চেষ্টা করেন। যেহেতু বিনা তেলের ইফতারের গ্রাহক একদম বাঁধা কয়েকজন, একই খাবার খেয়ে তারা যেন স্বাদ হারিয়ে না ফেলেন তাই নিত্য নতুন পদ আনার এই ব্যবস্থা। এত চাহিদা তারপরেও যোগান এত কম কেন? এ প্রশ্নের জবাবে কাজল ইসলাম জানান, বিনা তেলে খাবার তৈরি করার প্রক্রিয়া খুব সময় সাপেক্ষ আর এই কাজের জন্য তাদের কাছে যেসব সরঞ্জাম আছে তা ব্যক্তিগত পর্যায়ে খাবার তৈরি করতে সক্ষম। ফলে এই দেড়শর মতো মানুষের ইফতার তৈরি করতেই একদম হিমসিম খেতে হয় তাদের। তবে চাহিদা যেভাবে বাড়ছে, শিঘ্রিই বড় পরিসরে বিনা তেলে খাবারের একটা রেস্টুরেন্ট দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

বিজ্ঞাপন

সাওল হার্ট সেন্টারে তেল বিহীন খাবার বিক্রি ছাড়াও সপ্তাহে পাঁচদিন বিনামূল্যে সুস্থ জীবনের বিষয়ে সেমিনার করা হয়। এই সেমিনারে অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছে, এই সেমিনারে অংশ নিয়ে এবং নিয়ম মাফিক জীবন যাপন করে তারা এখন কোনো ওষুধ ও চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ আছেন।

সারাবাংলা/এমএ/এমআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন