বিজ্ঞাপন

বাণিজ্যিক পণ্যের মোড়কে ফিলিস্তিনের পতাকা কেন?

May 18, 2024 | 1:45 pm

বিপ্লব কুমার পাল

ফিলিস্তিনের গাজায় সাত মাস ধরে চলা ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৫ হাজার ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন ৭৯ হাজার। শুধু হাসপাতালে আসা হতাহতের ভিত্তিতে এ পরিসংখ্যান দিচ্ছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা এবং যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় অনেক মরদেহ হাসপাতালে আনা সম্ভব হচ্ছে না। নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ১৫ হাজার শিশু ও ৯ হাজারের বেশি নারী রয়েছেন। তবে হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ১০ হাজারের মতো মরদেহ এখনও ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি ও স্থাপনার নিচে পড়ে আছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে রাফার পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলের পাশাপাশি উত্তর গাজায়ও স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ নিয়ে গাজার উত্তরাঞ্চলীয় জাবালিয়ায় দ্বিতীয়বার আর গাজা নগরীর জেইতুন এলাকায় তৃতীয়বারের মতো স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, জনাকীর্ণ রাফা শহরে সরাসরি হামলার ক্ষেত্রে মহাবিপর্যয়ের ঝুঁকি আছে। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, জিম্মি মুক্তি এবং মানবিক ত্রাণসহায়তা সরবরাহ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

ফিলিস্তিনে ইসরাইলি আগ্রাসনে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, তুরস্ক, কানাডা, ইতালি, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ ও জাতিসংঘ নিন্দা জানিয়েছে। ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধে সোচ্চার বাংলাদেশও। ফিলিস্তিনে ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে অভিযোগ করে এর নিন্দা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেছেন, “ফিলিস্তিনে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। এই হত্যাকাণ্ড, যুদ্ধ আমরা চাই না।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে গিয়ে এ কথা জোরেশোরে উচ্চারণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা বিশ্বব্যাপী এ বিষয়ে সোচ্চার রয়েছেন এবং অন্যদের সোচ্চার করার জন্য চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি গাজাবাসীদের জন্য বিশুদ্ধ পানির বোতল, জরুরি খাদ্যসামগ্রী, ফুড প্যাকেজ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

ফিলিস্তিন নিয়ে বিশ্ব মুসলিমের আবেগের মূলে রয়েছে সেখানে থাকা মসজিদুল আকসা, যা মুসলিমদের প্রথম কেবলা ছিল। এ ছাড়া এটি ইসরা ও মিরাজের পবিত্র ভূমি। জেরুজালেমে অবস্থিত বায়তুল মাকদিস পৃথিবীর দ্বিতীয় মসজিদ। মুসলিমদের নিকট তিনটি শহর সম্মানিত। এর মধ্যে এক নম্বরে আছে মক্কা মোকাররামা, দ্বিতীয় স্থানে আছে মদিনা মুনাওয়ারা এবং তৃতীয় সম্মানিত শহর জেরুজালেম।

বরাবরই ফিলিস্তিনিদের জন্য বাংলাদেশিদের আবেগ বেশি। সব সময় ফিলিস্তিনি জনগণের সমর্থন দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধ, দখলদারির অবসান ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছেন ছাত্র-জনতা। বিক্ষোভ মিছিল করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিশ্বব্যাপী চলমান ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সারাদেশে ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে পদযাত্রা ও ছাত্র সমাবেশ করেছে ছাত্রলীগ।

একই ভাবে প্রতিবাদ চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর আন্দোলন। গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে রাজধানীতে ‘টু গাজা ফ্রম ঢাকা’ কনসার্ট হয়েছে। কনসার্টের টিকিট বিক্রির পুরো টাকা গাজায় যুদ্ধাহত মানুষের জন্য আর্থিক সহায়তা হিসেবে পাঠানো হয়। এখন বাণিজ্যিক পণ্যের মোড়কে ফিলিস্তিনি পতাকা দিয়ে ‘সাপোর্ট প্যালেস্টাইন’ ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। প্রতি বোতল কোমল পানীয় বিক্রি থেকে এক টাকা করে ফিলিস্তিনিদের জন্য গঠিত তহবিল সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভোক্তাদের মধ্যে দারুণ সারা ফেলেছে এ উদ্যোগ। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের আগের সময়ের চেয়ে ওই পণ্যের বেচাবিক্রি দ্বিগুণ হয়েছে। গত ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত কোমল পানীয় বিক্রি থেকে প্রায় এক কোটি ৭০ টাকা জমা পড়েছে ফিলিস্তিনিদের জন্য গঠিত তহবিলে। এসব উদ্যোগ পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে কিনা এখন সে প্রশ্নও উঠছে।

বিজ্ঞাপন

যাদের সমর্থনে বাণিজ্যিক পণ্যের মোড়কে ফিলিস্তিনি পতাকা ব্যবহার করা হচ্ছে তারাও বিষয়টি ভালোভাবে দেখছেন না। বাংলাদেশে বাণিজ্যিক পণ্যের মোড়কে ফিলিস্তিনি পতাকা ব্যবহার চাননা ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘গুটি কয়েক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যে আমাদের দেশের পতাকা ব্যবহার করছে। তাদের কাছে অনুরোধ, দয়া করে আপনাদের পণ্যে আমাদের পতাকা ব্যবহার করবেন না। আমি জানি, আপনারা ভালো ভেবেই করেছেন। কিন্তু আমি আশা করি, সেটা আর করবেন না। কারণ আমার দেশের পতাকা বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য নয়।’

প্রতিটি স্বাধীন দেশের জন্য পতাকা খুবই আবেগের জায়গা। ফিলিস্তিনি জনগণ ব্যতিক্রম নয়। ফিলিস্তিনির পতাকা লাল, কালো, সাদা এবং সবুজ রঙের, আছে লম্বা ত্রিকোণাকৃতির একটি ম্যাপ। রংগুলোর মধ্যে কালো রং আব্বাসীয় খেলাফত, সাদা রং উমাইয়া খিলাফত এবং সবুজ রং ফাতেমীয় খিলাফতকে নির্দেশ করে। আর ত্রিভুজ আকৃতির লাল অংশটি হাশেমিয় রাজবংশকে নির্দেশ করে। সেই পতাকা উড়িয়েই চলছে ফিলিস্তিন মুক্তির আন্দোলন।

ফিলিস্তিনি মুক্তির আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনি পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। যা ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপের অন্তত ১২টি দেশে। গাজায় চলমান যুদ্ধের বিরুদ্ধে লন্ডনে বিক্ষোভ করেছেন লাখো মানুষ। ফিলিস্তিনপন্থি পতাকা ও ব্যানার নিয়ে হাজার হাজার মানুষ স্পেনের মাদ্রিদের রাস্তায় মিছিল করে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছে। বাদ যায়নি বাংলাদেশও, শহর থেকে গ্রাম সব খানেই চলছে প্রতিবাদ।

ফিলিস্তিনিদের প্রতি বাংলাদেশিদের ভালোবাসায় কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের কাছ থেকে সবসময় জোরালো সমর্থন পেয়ে আসছি।’ এবার তিনি বাংলাদেশের কাজে নিজ দেশের পতাকা বাণিজ্যিক ব্যবহার না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। আমরা কি ফিলিস্তিনি জনগণের এই অনুরোধ রাখতে পারবো না?

বিজ্ঞাপন

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন