বিজ্ঞাপন

এসআই’র কাণ্ড: প্রবাসীকে জিম্মি করে ১৬ ভরি সোনার গয়না ছিনতাই

May 19, 2024 | 8:42 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম নগরীতে প্রবাসীকে বাস থেকে নামিয়ে জিম্মি করে ১৬ ভরি সোনার অলংকার ছিনতাইয়ের ঘটনায় এক উপ-পুলিশ পরিদর্শকসহ (এসআই) দুজনকে আটক করে পুলিশের হাতে দিয়েছে জনতা। তবে এ সময় ছিনতাইয়ে জড়িত আরেকজন পালিয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৯ মে) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আক্তারুজ্জামান উড়ালসড়কে খুলশী থানা অংশে এ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মোখলেছুর রহমান।

গ্রেফতার দুজন হলেন- খুলশী থানায় কর্মরত এসআই আমিনুল ইসলাম (৩৭) ও শহিদুল ইসলাম জাহেদ (৩৫)।

জানা গেছে, এসআই আমিনুল ইসলামের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায়। ২০১২ সালে তিনি পুলিশ বিভাগে যোগ দেন। শহিদুল ইসলাম জাহেদ পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত। তবে জাহেদের বিরুদ্ধে ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে।

বিজ্ঞাপন

ছিনতাইয়ের শিকার সৌদিআরব প্রবাসী আব্দুল খালেক চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের দরবারশেখ হাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা। গত ১২ মে তিনি দেশে ফেরেন। তার বড় ভাইও সৌদিআরব প্রবাসী।

আব্দুল খালেক সারাবাংলাকে জানান, দেশে ফেরার সময় তিনি ভুলক্রমে তার কেনা আটটি সোনার চুড়ি রেখে আসেন। প্রতিটি দুই ভরি করে আটটি সোনার চুরির মোট ওজন ১৬ ভরি। তার বড় ভাই চুড়িগুলো এবং কিছু গুঁড়োদুধ ও পারফিউম সৌদিআরব প্রবাসী পরিচিত এক পুরুষ ও এক নারীর মাধ্যমে দেশে পাঠান। সেগুলো নিয়ে দুজন রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বিমানে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন।

খালেক তাদের কাছ থেকে বড় ভাইয়ের পাঠানো চালান বুঝে নিয়ে সকাল ১১টার দিকে বিমানবন্দর থেকে বের হন। গণপরিবহন না পেয়ে তিনি প্রথমে একটি পিকআপ ভ্যানে উঠে সিইপিজেড মোড়ে আসেন। সেখান থেকে ছয় নম্বর রুটের সিটিবাসে উঠেন। বাস নগরীর টাইগারপাস এলাকায় পৌঁছার পর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রবেশপথ সংলগ্ন স্থানে থামায়। তখন দু’জন বাসে উঠে পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাকে শার্টের কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে আনে।

বিজ্ঞাপন

আব্দুল খালেক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাকে প্রথমে একটি সিএনজি অটোরিকশায় তোলা হয়। তারপর আমাকে আমবাগান এলাকায় নিয়ে কিছুক্ষণ বসিয়ে রাখে। অটোরিকশায় আমার দুই পাশে গ্রেফতার হওয়া দুজন ছিল। অটোরিকশার চালক ছিল। এছাড়া পেছনে-পেছনে আরেকটি মোটরসাইকেলে করে আরেকজন আমাদের অটোরিকশাকে ফলো করছিল। আমাকে তারা বলে, আমি না কি চোরাকারবারি। সোনার অলংকারগুলোর কাগজ আছে কি না জানতে চায়। আমি তাদের কাগজ দেখালে সেটা আমিনুল ফেলে দেয়। আমার থেকে চুড়িগুলো কেড়ে নেয়।’

তিনি বলতে থাকেন, ‘এরপর আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে থানায় নেওয়ার কথা বলে আবার অটোরিকশায় তোলে। সেখানেও আমার দুই পাশে গ্রেফতার হওয়া আমিনুল ও জাহেদ ছিল। পেছনে মোটরসাইকেলে আরেকজন ছিল। অটোরিকশা নিয়ে ফ্লাইওভারের ওপর উঠে যায়। কিছুক্ষণ পর অটোরিকশার ড্রাইভারকে এক হাজার টাকা দিয়ে আমাকে নামিয়ে দেওয়ার কথা বলে তারা নেমে যায়। নামার আগে আমার মোবাইল কেড়ে নেয়। তারা নেমে যাওয়ার সময় আমি একজনের হাত ধরে ফেলি। আমি বলি, আমাকে থানায় না নিয়ে তোমরা যেতে পারবে না।’

খালেক জানান, তার ধরা হাত ঝাপটা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে দু’জন দ্রুতবেগে চলে যেতে থাকে। তখন খালেক অটোরিকশা থেকে নেমে যান। অটোরিকশা দ্রুতবেগে চলে যায়। খালেক তখন ‘চোর চোর, আমার জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে’ বলে চিৎকার শুরু করে দেয়। তখন আমিনুল ও জাহেদ দৌড়ে পালাতে থাকে। তারা ফ্লাইওভারের ওপর আরেকটি অটোরিকশায় উঠে যায়। খালেক গিয়ে সেই অটোরিকশার গ্রিল ধরে ঝুলে থাকেন।

তিনি বলেন, ‘এসআই আমিনুল জাহেদকে বলে, ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দাও। তখন অটোরিকশা থেমে যায়। তারা সেখান থেকে নেমে আমাকে হ্যান্ডকাপ পরানোর জন্য ধ্বস্তাধ্বস্তি শুরু করে। আমি চিৎকার করতে থাকি। তখন সেখানে লোকজন জড়ো হয়ে যায়। এ সময় আমিনুল একটি পিকআপ ভ্যানে উঠে পালানোর চেষ্টা করে। তবে পিকআপ ভ্যানটি তাকে নেয়নি। ফলো করা মোটরসাইকেলটি সামনে চলে আসে। আমিনুল সেখানে ওঠার সময় তার পকেট থেকে একটি চুড়ি রাস্তায় পড়ে যায়। সেটি তুলতে গেলে লোকজন তাকে ধরে ফেলে। জাহেদকেও লোকজন ধরে রাখে। কিছুক্ষণ পর পুলিশের একটি গাড়ি আসে। পুলিশকে আমিনুল এসআই বলে পরিচয় দেয়। লোকজন আমিনুল এবং জাহেদকে পুলিশের হাতে দেয়।’

বিজ্ঞাপন

ঘটনার শিকার খালেক আরও জানান, পুলিশের গাড়িতে করে প্রথমে আটক দুজন ও খালেককে পাঁচলাইশ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আটক দুজনকে খুলশী থানায় হস্তান্তর করা হয়।

জানা গেছে, আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারে ঘটনার সময় সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের পরিদর্শক ফজলুর রহমান ফারুকী। তিনি গাড়ি থেকে নেমে সেখানে যান। প্রাথমিকভাবে ঘটনা জানতে পেরে তিনি পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ও উত্তর জোনের উপ পুলিশ কমিশনারকে অবহিত করেন। এরপরই পাঁচলাইশ থানা থেকে টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

পিবিআই পরিদর্শক ফজলুর রহমান ফারুকী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি অন ডিউটিতে ছিলাম। লালখানবাজার থেকে ফ্লাইওভারে উঠে মুরাদপুরের দিকে যাচ্ছিলাম। জিইসি মোড়ের পর পূর্বদিকে সানমারের কিছু সামনে বিপরীত দিকে দেখি তিনজন লোক ধস্তাধস্তি করছে। একজন মুখে মাস্ক পরা ছিলেন। তখন সেখানে লোকজন জড়ো হতে শুরু করেছে। আমি গিয়ে মাস্ক পরা লোকটিকে কী হয়েছে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি নিজেকে এসআই আমিনুল বলে পরিচয় দিলেন। আরেকজন অভিযোগ করলেন, তার কাছ থেকে না কি সোনার চুড়ি মাস্ক পরা লোকটিসহ দুজন মিলে কেড়ে নিয়েছে।’

‘প্রাথমিকভাবে ঘটনা জানার পর আমি দ্রুত সেটা ডিসি-নর্থ স্যার এবং পাঁচলাইশ থানার ওসিকে অবহিত করি। তখন থানা থেকে গাড়ি নিয়ে টিম আসে। ততক্ষণে অবশ্য সাধারণ লোকজন দুজনকে আটকে ফেলে। থানার টিম আসার পর লোকজনই দুজনকে তাদের হাতে তুলে দেয়,’ – বলেন ফজলুর রহমান ফারুকী।

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মোখলেছুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আটটি সোনার চুড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনায় এসআই আমিনুলসহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরেকজন পালিয়ে গেছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ঘটনাটি ফ্লাইওভারের ওপর খুলশী থানার অংশে ঘটেছে। খুলশী থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন