বিজ্ঞাপন

‘রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিলে অসহায়ত্ব প্রকাশ পায়’

May 19, 2024 | 9:57 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ‘বাজেটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অসহায়ত্ব প্রকাশ পায়’ বলে মন্তব্য করেছেন খোদ প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৯ মে) বিকেলে রাজধানীর লেকশোর হোটেলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘ডিজিটালাইজেশন অব দ্য বাংলাদেশ ট্যাক্স সিস্টেম: দ্য নেক্সট ফ্রন্টিয়ার ফর হায়ার রিসোর্স মবিলাইজেশন’ শীর্ষক এক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে কর বাড়াতে প্রতিষ্ঠানটিকে ডিজিটালাইজেশন করার পরামর্শ আসে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। এতে আরও বক্তব্য অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন প্রমুখ।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘প্রতিবার যখন বাজেট টার্গেট দেওয়া হয়, তখন আসলে এনবিআরের অসহায়ত্বটা প্রকাশ পায়। টার্গেট একটি দিয়ে দেওয়া হলো, সক্ষমতা আসলে কতটকু আছে এবং টার্গেট অলৌকিক। সক্ষমতা হিসাব না করে ফিন্যান্স থেকে টার্গেট দেওয়া হয় এবং এই টার্গেটটা পূরণ করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘কারণে এই টার্গেটের সঙ্গে মিল রেখে অন্যান্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। ইনোভেটিভ কোনো চিন্তা, রিফর্মের কোনো চিন্তা- কোনো কিছু করার সুযোগ থাকে না। শুধু ওই টার্গেটের পেছনে ছুটতে হয়। আবার ওই টার্গেট ঠিক করা হয় আগের বছরের টার্গেটের সঙ্গে পার্সেন্টেজ ধরে, রিভাইজড টার্গেট বিবেচনায় নেওয়া হয় না। .. টার্গেটের বোঝা মাথায় থাকার কারণে অনেক ইনোভেটিভ আইডিয়া ও অনেক কিছু চিন্তা করার সুযোগ থাকে না।’

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘যারা কর দেয় না, দেশ থেকে টাকা পাচার করে, এরা অনেক শক্তিশালী, তারা রাজনৈতিক, ব্যবসা ও অর্থনৈতিকভাবে অনেক শক্তিশালী। .. এটি একটি আর্থিক রাজনৈতিক বিষয়। সেই রাজনৈতিক বিষয়ে প্রতিশ্রুতিগুলো যদি দৃশ্যমাণ না হয়, তাহলে অসহায় এনবিআর কর আহরণ করতে গিয়ে বিরাট ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এনবিআরকে সেই রাজনৈতিক সুরক্ষা দিতে হবে, তাদের প্রতি দৃশ্যমাণ সমর্থনকে প্রকাশ করতে হবে এবং সবাইকে এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে। এটি এক ধরনের সামাজিক বিপ্লবেরই অংশ।’

দেবপ্রিয় আরও বলেন, ‘করদাতাদের বিশ্বাসের ঘাটতি দূর করতে হবে। তারা হয়রানি ও দুর্নীতির ভয় পাই। ডিজিটালাইজেশন এসব ভীতি দূর করতে পারে। ডিজিটালাইজেশনের ফলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে আবার করদাতাদের সেবাও উন্নত হবে। শুধু এনবিআরকে ডিজটালাইজ করলে হবে না, সব ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের সমন্বয়ন না ঘটলে তার ফল পাওয়া যাবে না। সরকারি ব্যয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে, তবেই জনগণ বেশি হারে কর প্রদানে আগ্রহ দেখাবে। উন্নত বিশ্বে জনগণের কর কিভাবে ব্যয় হয় তার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকে, ফলে ওইসব দেশে কর আহরণের পরিমাণও বেশি হয়ে থাকে।’

বিজ্ঞাপন

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলেও আসন্ন বাজেট বাস্তবায়নে এক টাকাও বিদেশ থেকে ঋণ করতে হতো না। রাজস্ব অহরণে কর জিডিপি অনুপাত দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এখনও সর্বনিম্ন, এমনকি শ্রীলঙ্কার থেকেও কম। এডিপি বাস্তবায়নের পুরোটাই বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। দেশে কর জিডিপি অনুপাত ৯ শতাংশের মতো, আসলে সাধারণ মানুষ কি এই ৯ শতাংশ কর দেয়, আরও বেশি দেয়, সেটি লিকেজ থাকে। ডিজিটালাইজেশন কর জিডিপি অনুপাত বাড়াতে পারে, এটি একটি টুলস হতে পারে।’

প্রবন্ধে বলা হয়, রাজস্ব আহরণের পুরো প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশন হলে ২০৩০ সালের মধ্যে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে প্রায় ২০ লাখ কোটি টাকা, বর্তমানে তা মাত্র ৫ কোটি ৫৬ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা (৪৮ বিলিয়ন ডলার)।

প্রবন্ধে বলা হয়েছে, অর্থবছর ২৩ এ রাজস্ব আহরণ ছিল ৪৫ বিলিয়ন ডলার, ২৪ অর্থবছরে ৪৮ বিলিয়ন ডলার; পুরো প্রক্রিয়াটি ডিজিটালাইজড হলে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১৬৭ বিলিয়ন ডলারে (১৯ কোটি ৩৭ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা বা প্রায় ২০ লাখ কোটি টাকা)।

এ ছাড়া সব ক্ষেত্রে ই-ফাইলিং নিশ্চিত করা হলে পরবর্তী বছরেই বাড়তি রাজস্ব আসবে ২৪. ১ বিলিয়ন ডলার, পরবর্তী অর্থাৎ ২য় বছরে ২৬.৯ বিলিয়ন ডলার ও চতুর্থ বছরে ৩২.৬ বিলিয়ন ডলার।

বিজ্ঞাপন

করের সব ক্ষেত্রে যদি ২৫ শতাংশ অনলাইন করা যায় তবে পরবর্তী বছরেই বাড়তি রাজস্ব আদায় হবে ৫.৮ বিলিয়ন ডলার ও চতুর্থ বছরে গিয়ে তা দাঁড়াবে ৭.৮ বিলিয়ন ডলারে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/একে

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন