বিজ্ঞাপন

‘পাহাড়ে অন্ধকার নামলেই ভয়— কখন কাকে গ্রেফতার করা হয়’

May 20, 2024 | 9:55 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাঙ্গামাটি: পার্বত্য শান্তিচুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে হতাশার পাশাপাশি তীব্রভাবে গ্রেফতার আতঙ্কও কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পাহাড়ি নেতা ও পার্বত্য রাঙ্গামাটির সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমাদের (পাহাড়িদের) মধ্যে এখন অনেক হতাশা। যেমন— ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধিকে মৃত আইন ঘোষণার ষড়যন্ত্র চলছে। অন্যদিকে গ্রামে যখন ঘোর অন্ধকার নামে, ঝিঁঝি পোকারা ডাকে, তখন সাধারণ পাহাড়ি জনগণ ভয়ের মধ্যে থাকে— কখন কাকে গ্রেফতার করা হয়। সাধারণ মানুষ একা অনুভব করে। মনে রাখবেন, আপনারা কেউ একা নন। এ দেশের আপামর নিপীড়িত মানুষ ও প্রগতিশীল ব্যক্তি ও সংগঠন আমাদের পাশে আছে।

সোমবার (২০ মে) সকালে রাঙ্গামাটি শহরের কুমার সুমিত রায় জিমনেশিয়ামে অনুষ্ঠিত ছাত্র-যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ২৮তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল উপলক্ষে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ঊষাতন বলেন, আমাদের আন্দোলন রাষ্ট্রবিরোধী নয়। আমাদের নিপীড়ন করা হচ্ছে। জনসংহতি সমিতির কর্মতৎপরতা ও আন্দোলনের ফলে সরকারের ওপর মহলের কাছে এসব নিপীড়নের খবর পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। যদি আমাদের কথা শোনা না হয়, তবে এই ছাত্র সমাজকে প্রস্তুত হয়ে লড়াই চালিয়ে নিতে হবে। পার্টি নেতৃত্ব দেবে, আর জনগণ বিপ্লব পরিচালনা করবে।

বিজ্ঞাপন

সমাবেশ শেষে পিসিপি আয়োজিত একটি র‌্যালি শহর প্রদক্ষিণ করে। ছবি: সারাবাংলা

সাবেক এই গেরিলা নেতা আরও বলেন, রাজধানীর বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স করে দেওয়া আর পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন এক নয়। সরকার বলে থাকে— আমরা এই করেছি, সেই করেছি। জাতিসংঘে গিয়ে মিথ্যাচার করে থাকে। আমাদের জনগণ শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রেখে তৃতীয় পক্ষ ছাড়া চুক্তি করেছে। কিন্তু এখন আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে।

বাঙালি জাতিগোষ্ঠীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ঊষাতন বলেন, আপনাদের কাঁধে যে জাত্যভিমান ভর করেছে তা নামিয়ে ফেলুন। বড় জাতি হিসেবে আপনাদের বড় মনের অধিকারী হতে হবে। কারণ আপনারাও তো নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তাহীনতা, অনিশ্চয়তা, আতঙ্ক আর ভয় থেকে মুক্তি দিয়ে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করুন।

পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপন ত্রিপুরার সভাপতিত্বে সমাবেশ সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক থোয়াইক্যজায় চাক। কাউন্সিলের উদ্বোধক ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য মাধবীলতা চাকমা। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা।

বিজ্ঞাপন

এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি ও শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি দীপক শীল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুক্তা বাড়ৈই, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা।

উদ্বোধক হিসেবে দেওয়া বক্তব্যে মাধবীলতা চাকমা বলেন, ‘পাহাড়ের যুগপৎ আন্দোলনে যুব সমাজের কোনো বিকল্প নেই। চুক্তি করলেও আমাদের কাজ শেষ হয়নি। চুক্তির বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে পাহাড়ে আজও শান্তি ফেরেনি। আত্মমুখহীনতা সুবিধাবাদ ও দোদুল্যমানতা পরিহার করে ছাত্র যুব সমাজকে এগিয়ে যেতে হবে।’

ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি দীপক শীল বলেন, ‘পাহাড় কি বাংলাদেশের মানচিত্রের বাইরে? পার্বত্য চুক্তিকে বাস্তবায়নের নামে একটি নাটক সাজিয়ে রাখা হয়েছে। না হলে ২৬ বছর পেরিয়ে যেত না পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে। বর্তমান সরকার কথিত গণতন্ত্রের নামে একটি ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা কায়েম করে রেখেছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে হবে, যেখানে সকল জাতিসমূহের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।’

সমাবেশ শেষে জিমনেশিয়াম মাঠ প্রাঙ্গণ থেকে একটি র‍্যালি শুরু হয়ে জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র বনরূপা প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। আগামীকাল মঙ্গলবার (২১ মে) সকাল ১০টায় রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশন হবে। এই অধিবেশন থেকেই নতুন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঘোষণা করবে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির সহযোগী ছাত্র সংগঠন পিসিপি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন