বিজ্ঞাপন

‘বিদেশি নিষেধাজ্ঞায় খুশি না হয়ে নিজের শক্তিতে সরকার সরাতে হবে’

May 21, 2024 | 5:16 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিদেশি নিষেধাজ্ঞার খবরে খুশি না হয়ে নিজেদের শক্তিতেই সরকার সরাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২১ মে) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি মন্তব্য করেন।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম প্রধানের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে অযোগ্য ঘোষণার খবরের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা হাজার বার বলছি, সব সময় বলছি, গোটা দুনিয়া বলছে যে, বর্তমান শাসকগোষ্ঠী আকন্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে আছে। এখন দেখেন এই যে, আজকেই খবর এসেছেন যে, সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার পরিবারসহ। কেন? দুর্নীতি এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রভাবিত করা এবং জনগণের বিশ্বাস ক্ষুন্ন করা।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘অনেকেই খুশি হবেন যে, আজিজের (সাবেক সেনা প্রধান আজিজ আহমেদ) স্যানশন এসেছে। আমি মনে করি যে, ওটা হচ্ছে আরেকটা বিভ্রান্ত করা। এরকম বিভ্রান্ত হচ্ছি আমরা সব সময়। তখন র‌্যাবের বিরুদ্ধে হয়েছে, পুলিশের নয় জন কর্মকর্তা র‌্যাবে ছিলেন তাদের বিরুদ্ধেও স্যানশন হয়েছিল। এতে করে কি তাদের (সরকার) সেই ভয়ংকর যাত্রা বন্ধ হয়েছে? বন্ধ হয় নাই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেজন্য বলছি, নিজেদের পায়ে নিজেদের দাঁড়াতে হবে, নিজের শক্তি নিয়ে দাঁড়াতে হবে এবং নিজের শক্তি নিয়েই এদেরকে পরাজিত করতে হবে। আমার নিজের ঘর যদি নিজে সামলাতে না পারি, অন্য কেউ ঘর সামলিয়ে দেবে না।’

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা ব্যবহার করেছেন রাষ্ট্র যন্ত্রকে, আপনারা ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন সেনাবাহিনীকে, ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন বিচার বিভাগকে, প্রশাসনকে এবং আজকে ত্রাস সৃষ্টি করেছেন, ভয়ের রাজত্ব তৈরি করেছেন। এই যে সাংবাদিক ভাইয়েরা আছেন, মিডিয়ার ভাইয়েরা আছে তারাও এখন মন খুলে, প্রাণ খুলে রিপোর্ট লেখতে পারেন না, প্রতিটি শব্দ লিখতে চিন্তা করতে হয় এরজন্য জেলে যেতে হবে কিনা? এরজন্য মামলা খেতে হবে কিনা। এই হচ্ছে দেশের বর্তমান অবস্থা । এজন্য জনগণকে আরও ঐক্যবদ্ধ করে রাস্তায় নেমে সোচ্চার হতে হবে। রাস্তায় নামা ছাড়া কোনো বিকল্প নাই। আমরা অন্য কোনো পথ চিনি না। আমাদেরকে প্রকাশ্যে সামনে এসেই লড়াইটা করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেক সময় ভুল ব্যাখ্যা করা হয় যে আমরা নাকি উৎখাত করতে চাই। আমরা উৎখাতের কথা বলিনি। উৎখাত করতে যাব কেন? আমরা ভোটের অধিকার চাই। সেই ভোটের মধ্য দিয়ে আমরা তোমাদেরকে পরাজিত করব।’

তিনি বলেন, ‘আমরা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। আমরা কোনো রেডিকেল পার্টি বা রেভুলেশনারি পার্টি না। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি হচ্ছে যে, একটা নির্বাচন। সেই নির্বাচনটা যেন সুষ্ঠু হয়, অবাধ হয়, সরকার যেন কোনো প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। সেই জায়গাটা আমাদেরকে যেতে হবে। কেউ আমাদের সেটা করে দেবে না। আমাদেরকে সেটা অর্জন করতে হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা যুগপৎ আন্দোলনে জোট করেছি, বিভিন্ন জোটকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমরা সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেছি, একই সঙ্গে কাজ করেছি। আন্দোলনের প্রক্রিয়া বলতে কী? এই জোট আরও শক্তিশালী হবে এবং অদূর ভবিষ্যতে এই ভয়াবহ দানব শক্তিটাকে পরাজিত করে গণতান্ত্রিক শক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করব এই বিশ্বাস আমাদের আছে।’

তিনি বলেন, ‘আজকে সরকার যখন বলে তারা গণতন্ত্রকে সুসংহত করছে, গণতন্ত্রকে তারা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিচ্ছে। তখন বিএনপি সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কী বলব? মানুষ কি সব আহাম্মক হয়ে গেছে? আপনারা প্রথম দিকে যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ করেছেন। সেই একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে দেশকে বহুদলীয় গণতন্ত্রে ফিরিয়ে এনেছিলেন শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আপনারা পার্লামেন্টারি গভমেন্ট থেকে সরে গিয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্ম অব গভমেন্ট করেছিলেন। আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকবেন এটা ছিলো আপনাদের উদ্দেশ্য।’

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে একদলীয শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যে বাকশালী শাসন চালু করতে তারা বহুদূর এগিয়ে গেছে। এবারে করেছেন তারা সুকৌশলে। যেটা গণতন্ত্রের যে লেবাস একটা ছদ্মবেশি আল-খেল্লা.. এই নিয়ে তারা নির্বাচন করে। বলছে যে, আমরা তো নির্বাচন করছি, বিরোধী দল নির্বাচনে না আসলে আমরা কী করব? এমন নির্বাচন করছে যে, যে নির্বাচনে দেশের কোনো রাজনৈতিক দলই অংশগ্রহণ করতে চায় না। ৬৩টা দল নির্বাচন বর্জন করেছে। একটা দলকে তারা কোনো রকমে রেখেছে ভাগ-বাটোয়ারা দিয়ে আসন বন্টন করে তাদেরকে রেখেছে। তারাও বলেছে তখনও বলেছে, এখনো বলছে, দেশে কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। জিএম কাদের আগেই বলেছেন, এখানে নির্বাচন হচ্ছে না, আওয়ামী লীগ যা চাইবে সেটাই হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি, আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না। আমরা একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন চাই। আমরা চাই, মানুষ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার যে ক্ষমতা সেটা তারা প্রয়োগ করতে পারুক আর এটাতে যাকে তারা ক্ষমতায় নিয়ে আমরা মেনে নেব।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এত ভয় কেন একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে । ভয় এজন্যে যে তারা গত ১৫/১৬ বছরে যে অপকর্মগুলো করেছে সেই অপকর্মগুলো সারা দেশে তন্ন তন্ন করে খুঁজলেও তাদের সমর্থন খুঁজে পাবে না। এখন যে উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে দেখেছেন তো তারা নিজেরা নিজেরা কীভাবে লড়াই করছে, কীভাবে ভোট নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, ভোটের সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করছে। তারপরও ভোট কেন্দ্রে ভোটার আসছে না। এই নির্বাচনে মানুষ অংশ নিচ্ছে না। কারণ তারা বুঝে গেছে যে, এই নির্বাচনে তো কোনো লাভ নাই, যে নির্বাচনে কোনো প্রতিযোগিতা নেই, যে নির্বাচনে কোনো পরিবর্তন আসবে না, সেই নির্বাচনে গিয়ে কি লাভ?’

জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব এসএম শাহাদাতের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এনডিপির চেয়ারম্যান আবু তাহের, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরীসহ প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/এনইউ

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন