বিজ্ঞাপন

বাড়ি, প্লট-ফ্ল্যাট, হাসপাতাল— কী নেই কাস্টমস কর্মকর্তার স্ত্রীর!

May 21, 2024 | 8:11 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: স্বামী চট্টগ্রাম কাস্টমসের সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা। গৃহিণী স্ত্রী অন্তঃত সাড়ে চার কোটি টাকার সম্পদের মালিক। চট্টগ্রামে ছয়তলা বাড়ি, ঢাকা-চট্টগ্রামে একাধিক ফ্ল্যাট, রাজধানীতে ভবন এবং আরও বিভিন্নস্থানে বারিক পরিবার কিনেছেন প্রায় ৭০ কাঠা জমি। চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালসহ তিন বেসরকারি ক্লিনিকেও আছে প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ।

বিজ্ঞাপন

দুর্নীতি দমন কমিশনের নোটিশের জবাবে আব্দুল বারিক নিজেই স্ত্রীর হয়ে এসব সম্পদের বিবরণ জমা দিয়েছেন। এর বাইরে আরও প্রায় দেড় কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়ে দুদক এ দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। মামলায় দুদক বলছে, বারিকের অবৈধ অর্থে তার স্ত্রী এ বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক সবুজ হোসেন বাদী হয়ে সোমবার (২০ মে) বারিক দম্পতির বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেছেন বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাজমুচ্ছাদায়াত।

আব্দুল বারিকের বাড়ি নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলায়। চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা পদ থেকে তিনি চার বছর আগে অবসরে যান বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

দুদক জানায়, ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর বারিকের স্ত্রী ফেরদৌস ইয়াসমিন খানমের কাছে সম্পদের বিবরণী দাবি করে দুর্নীতি দমন কমিশন। ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর স্ত্রীর হয়ে বারিক নিজেই দুদকে সম্পদ বিবরণী জমা দেন, যাতে তিনি স্ত্রীর পাশাপাশি ছেলের নামে অর্জিত সম্পদের বিবরণও দিয়েছেন।

প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে অনুসন্ধানের পর দুদক ফেরদৌস ইয়াসমিন খানম ও তার স্বামী আব্দুল বারিককে আসামি করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬(২), ২৭(১) এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলা দায়ের করেন। গত ১২ মে দুদকের প্রধান কার্যালয় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অনুমোদন দেয়।

মামলার এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, আব্দুল বারিক স্ত্রীর নামে ২ কোটি ৬৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে আছে, ২০০২ সালে নগরীর আগ্রাবাদের সিডিএ আবাসিক এলাকায় ৭৭ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত ছয় তলা বাড়ি, নগরীর হালিশহরের সোনালী আবাসিক এলাকায় ৮০ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে কেনা জমিসহ ভবন, ২০১৩ সালে ঢাকার দক্ষিণ আশকোনায় ২৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকায় কেনা ১৩৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট এবং চট্টগ্রামের খুলশীর নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে ২০১৫ সালে ৩২ লাখ ৯৭ হাজার টাকায় কেনা ১৭৫০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া ২০০৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার মোহাম্মদীয় হাউজিং সোসাইটিতে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকায় দশমিক ৯ শতাংশ জমি, ১৯৯৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় আট লাখ টাকা ব্যয়ে জমি (যাতে পরবর্তীতে ছয়তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে), ১৯৯২ সালে ছেলে মোহাম্মদ ওয়ালীর নামে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার রশিদপুরে ৫০ শতাংশ, ৩৪ লাখ ১১ হাজার টাকায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ১৬ কাঠা এবং ঢাকার রামচন্দ্রপুরে ৫০ শতাংশ জমি- সব মিলিয়ে প্রায় ৭০ কাঠা জমি কেনার তথ্য আছে সম্পদ বিবরণীতে।

এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার উত্তরা হাসপাতালে পাঁচ লাখ টাকা, আলকেমি হাসপাতালে ৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা এবং চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৬৪ লাখ টাকা বিনিয়োগের কথা সম্পদ বিবরণীতে স্বীকার করেছেন বারিক। এছাড়া তিন লাখ ৮১ হাজার টাকা দামের একটি প্রাইভেট কার, ৫০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ও নগদ ২ লাখ ৪০ হাজার ৮১ টাকা থাকার তথ্যও দিয়েছেন তিনি। বেসরকারি হাসপাতালে বিনিয়োগসহ মিলিয়ে অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮২ লাখ ১৮ হাজার ৮১ টাকায়।

এদিকে দুদক অনুসন্ধানে নেমে জানতে পারে, বারিকের স্ত্রী ২০২১ সালের ৩০ জুন দাখিল করা তার আয়কর রিটার্নে ৩৪ লাখ ৬৬ হাজার ৬ টাকা নগর হিসেবে তার কাছে আছে বলে উল্লেখ করেন। দুদককে বলেছেন, নগদ ২ লাখ ৪০ হাজার ৮১ টাকা আর আয়কর বিভাগকে বলেছেন ৩৪ লাখ ৬৬ হাজার ৬ টাকা। তাহলে তিনি ৩২ লাখ ২৬ হাজার ৮৭ টাকার তথ্য গোপন করেছেন বলে দুদক নিশ্চিত হয়।

বারিকের স্ত্রীর ঘোষিত অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৮২ লাখ ১৮ হাজার ৮১ টাকা। গোপন করেছেন ৩২ লাখ ২৬ হাজার ৮৭ টাকা। এ হিসেবে তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় এক কোটি ১৪ লাখ ৪৪ হাজার ৮৭ টাকা।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে ঘোষিত ২ কোটি ৬৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকার স্থাবর এবং ১ কোটি ১৪ লাখ ৪৪ হাজার ৮৭ টাকার অস্থাবর মিলিয়ে ফেরদৌস ইয়াসমিন খানমের মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ কোটি ৭৯ লাখ ১০ হাজার ৮৭ টাকা। এর মধ্যে দুদক তার ৪৯ লাখ ৭০ হাজার ৭০১ টাকার দায়-দেনার তথ্য পেয়েছে। দায় বাদ দিলে সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ কোটি ২৯ লাখ ৩৯ হাজার ৩৮৬ টাকা।

এর বাইরে ‍দুদক তার পারিবারিক ব্যয়ের তথ্য পেয়েছে ১ কোটি ২৬ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ টাকার। ব্যয়সহ ফেরদৌস ইয়াসমিন খানমের সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৮ হাজার ৮৫৬ টাকা। সম্পদের বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া গেছে ২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৩ হাজার ৪৩ টাকা। বাকি ১ কোটি ৯২ লাখ ৬৫ হাজার ৮০৮ টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ হিসেবে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছে দুদক। একইসঙ্গে এজাহারে সম্পদের তথ্য বিবরণীতে ৩২ লাখ ২৬ হাজার ৮৭ টাকার তথ্য গোপনের অভিযোগও যুক্ত করা হয়েছে।

মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা সবুজ হোসেন অভিযোগ করেছেন, আব্দুল বারিক তার অবৈধ উপার্জনের অর্থ স্ত্রীর নামে রেখে বৈধ হিসেবে প্রদর্শনের অপচেষ্টা করেছেন। জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ স্বামী-স্ত্রী মিলে পরস্পর যোগসাজশে ভোগদখল করে আসছেন।

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন