বিজ্ঞাপন

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে আয়ারল্যান্ড-স্পেন-নরওয়ে

May 23, 2024 | 1:16 am

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে নিজেদের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে তিন ইউরোপীয় দেশ স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে। এই দেশগুলো বলেছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।

বিজ্ঞাপন

ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ফিলিস্তিনিদের সংগঠন প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশন (পিএলও) এবং গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা হামাস এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরায়েল। ‘বিকৃত পদক্ষেপ’ আখ্যায়িত করে দেশটি বলছে, এটি অস্থিতিশীলতাকে আরও বাড়াবে। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে থেকে নিজের দূতকে ডেকেও পাঠিয়েছে ইসরায়েল।

বিবিসির খবরে বলা হয়, অসলোতে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গাহর স্টোর, মাদ্রিদে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানচেজ ও ডাবলিনে আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস জানিয়েছেন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার এই পরিকল্পনার কথা। তারা জানান, ২৮ মের মধ্যে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।

জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ১৪০টি দেশ এরই মধ্যেই রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বাকি দেশগুলো এখনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও নরওরে স্বীকৃতি দিলে এর মধ্যে দিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে।

বিজ্ঞাপন

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি বিষয়ে কী বলছে ৩ দেশ

মাদ্রিদে পার্লামেন্টে এক বক্তৃতায় স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানচেজ বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এখনো বধিরের মতো আচরণ করছেন। তিনি হাসপাতাল ও স্কুলে বোমাবর্ষণ করেই চলেছেন। নারী-শিশুদের ক্ষুধা ও ঠান্ডার শাস্তি দিচ্ছেন। আমরা এটা হতে দিতে পারি না। আমাদের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমাদের মানবিক সহায়তা পাঠাতে হবে। শরণার্থীদের সাহায্য করতে হবে। আমরা কিছু করছি, আরও করতে হবে।

পেড্রো সানচেজ আরও বলেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পেছনে নানা কারণ আছে। তবে তিনটি শব্দে আমরা সংক্ষেপে কারণগুলো বলতে পারি— শান্তি, ন্যায় বিচার ও ধারাবাহিকতা। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে টু-স্টেট সল্যুশনকে সম্মান জানানো হয়েছে।

ডাবলিনে আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস বলেন, টু-স্টেট প্রতিষ্ঠাই এই অঞ্চলের জন্য শান্তির একমাত্র গ্রহণযোগ্য পথ। অসলো শান্তি চুক্তির পর তিন দশক পেরিয়ে গেছে। সম্ভবত এটাই সবচেয়ে টেকসই ও সমন্বিত শান্তি সমঝোতা। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত নিয়ে অনন্তকাল অপেক্ষা করা যাবে না।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে অসলোতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গাহর স্টোর। তিনি বলেন, টু-স্টেট সল্যুশন) ইসরায়েলের স্বার্থে সবচেয়ে ভালো। ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের নিজেদের রাষ্ট্রে শান্তিতে বসবাসের অধিকার আছে। ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের মৌলিক অধিকার আছে।

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে ১৪০ দেশ

জাতিসংঘের চিঠি থেকে জানা যায়, সংস্থাটির সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ১৪০টি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর মধ্যে আরব জাতিগোষ্ঠীর দেশ রয়েছে ২২টি, ওআইসি সদস্যভুক্ত দেশ রয়েছে ৫৭টি এবং রয়েছে ১২০ সদস্যের জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনভুক্ত দেশ।

এ বছরের শুরুতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড ক্যামেরন সরকারকে পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন, সহযোগী দেশগুলোকে নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ইস্যুটি দেখা যেতে পারে।

যা বলছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎয বলেন, আজকের ঘোষণা ফিলিস্তিনি মানুষ ও বিশ্বকে একটি বার্তা দিয়েছে— সন্ত্রাসবাদের জয় হয়েছে। সন্ত্রাসী সংগঠন হামাস হলোকাস্টের পর ইহুদিদের ওপর সবচেয়ে বড় গণহত্যা চালানো এবং সবচেয়ে জঘন্য যৌন সহিংসতা ঘটানো সত্ত্বেও এসব দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে হামাসকে পুরস্কৃত করার পথ বেছে নিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

‘এই বিকৃত পদক্ষেপ ৭ অক্টোবরের ভিকটিমদের স্মৃতির প্রতি অবিচার এবং ১২৮ জিম্মিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টার প্রতি বড় আঘাত এবং হামাস ও ইরানি জিহাদিদের বড় সহায়তা, যা ইসরায়েলিদের আত্মরক্ষার অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে এবং শান্তির সুযোগ কমাবে,’— বলেন কাৎয।

তবে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেছেন, ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কিছু নয়, এটা ইহুদিদের বিরুদ্ধেও নয়।

ফিলিস্তিনিদের প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েল ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেও ইউরোপের তিন দেশের স্বীকৃতির পরিকল্পনা ফিলিস্তিনে আনন্দ ছড়িয়েছে। এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ফিলিস্তিনিদের সংগঠন পিএলও এবং গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা হামাস।

ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে বলেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পেন, নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ডের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছে। এই উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান ও ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘকালের প্রাপ্য ন্যায় বিচারের প্রতি তাদের অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।

পিএলও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিদের প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃত। এর নির্বাহী কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল হুসেইন আল শেইখ বলেন, আজকের খবরটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।

অন্যদিকে হামাস তিন দেশের ঘোষণাকে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। সংগঠনটি ২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন