বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫১ বছর ও যুদ্ধমুক্ত বিশ্ব

May 23, 2024 | 9:55 pm

অ্যাড. হাসান তারিক চৌধুরী

আজকাল মাঝে মধ্যে মন্তব্য শোনা যায়, সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন তো আর নেই! পরাশক্তির লড়াই নেই! এককেন্দ্রীক বিশ্ব তৈরি হয়ে গেছে! জোট নিরপেক্ষে আন্দোলন এখন যাদুঘরের আর্টফ্যাক্ট ইত্যাদি। সুতরাং শান্তি আন্দোলনের দরকারও এখন অনেকটা ফুরিয়ে গেছে! এসব বিভ্রন্তিকর আলোচনা যারা বাজারে ছড়ায়, তাদের গবেট ভাবার কোনো কারণ নেই। এরা ভালো করে জেনেশুনেই এসব কথা বাংলাদেশ এবং সারা পৃথিবীতে বিপণন করে। মূলগতভাবে এদের একটি মতাদর্শ রয়েছে। যা হলো, বিশ্বের নিপীড়িত জাতিসমূহ এবং শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির বিরুদ্ধে। এরা কলহপ্রিয়, যুদ্ধবাজ, উগ্র জাতীয়তাবাদী, এরা কখনো রেসিস্ট, রেপিস্ট, ধর্মীয় জঙ্গিবাদ। আবার কখনো নিওফ্যাসিস্ট। আজকের দুনিয়ায় বাড়ির পাশে আফগান-তালেবান। কিছুটা দূরে প্যালেস্টাইন, ইউক্রেন। সবই সেই যুদ্ধবাজ রাজনীতির খেলা। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মানবাধিকার সনদ কিংবা আন্তর্জাতিক আইনের নামে সেই যুদ্ধবাজ রাজনীতির খেলাই চলে। সিদ্ধান্ত আর হয় না! তারপরও একে একে বহু দেশ স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে থাকে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জনগণের সংগ্রাম জয়ের পথে আগায়। শান্তি ও মুক্তিকামী জনগণের এরকম বিজয়ের জন্যই আজ শান্তি আন্দোলন দেশে দেশে আগের চেয়ে অনেক বেশি জরুরি। এরকম এক বিরাট ও মহান সংগ্রামের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিশ্ব শান্তি পরিষদ জুলিও কুরি শান্তি পদকে ভূষিত করে।

বিজ্ঞাপন

এ বছর ২৩ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বখ্যাত জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তির ৫১ বছর। গতবছর এ পদকপ্রাপ্তির সুবর্ণজয়ন্তী রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দেশজুড়ে উদযাপিত হয়েছে। আবার যেমনভাবে ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে দেওয়ার অপচেষ্টা হয়েছে, তেমনি ভুঁইফোড় সংগঠন পয়দা করে গতবছরই জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রদানকারী সংগঠন বিশ্ব শান্তি পরিষদ (WPC) এবং বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের নামও ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা হয়েছে। ফলে, এ উপলক্ষ্যে গতবছর অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে জুলিও কুরি শান্তি পদক সংশ্লিষ্ট প্রাচীন ও প্রকৃত সংগঠন বিশ্ব শান্তি পরিষদ তথা বাংলাদেশ শান্তি পরিষদ ছিল অবহেলিত। অসাধু রাজনীতিবিদ এবং উচ্চাভিলাসী কতিপয় সামরিক-বেসামরিক আমলা যেমনভাবে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করেছে, তেমনি তারা রাষ্ট্রীয় সুযোগ ব্যবহার করে অসত্য তথ্য আর চাটুকারিতা দিয়ে শান্তি পরিষদকে ইতিহাস থেকে মুছে দিতে চেয়েছে। কিন্তু ইতিহাস প্রমাণ করেছে তাদের সে চেষ্টা সফল হয়নি।

একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে লাখো শহিদের আত্মদান এবং অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় মূল নেতৃত্বদানের জন্য, যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার অসামান্য প্রচেষ্টা এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামে সংহতি জ্ঞাপনের জন্য ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিশ্বখ্যাত জুলিও কুরি শান্তি পদকে ভূষিত করে। বঙ্গবন্ধুর এই পদক প্রাপ্তি ছিল তার সুবিশাল সংগ্রামের প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তৎকালীন বিশ্ব রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক মর্যাদার বিবেচনায় এই পদক প্রাপ্তির বিষয়টি শুধু ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুই নয়, গোটা বাঙালি জাতির জন্য ছিল এক বিশাল গৌরবের ব্যাপার।

১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোয় বিশ্ব শান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির সভায় বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলন এবং বিশ্ব শান্তির সপক্ষে বঙ্গবন্ধুর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক প্রদানের জন্য শান্তি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রমেশ চন্দ্র প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। বিশ্বের ১৪০ দেশের শান্তি পরিষদের ২০০ প্রতিনিধির উপস্থিতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় উপস্থিত সকলে একমত হয়েছিলেন যে, সারাজীবনের রাজনীতি আর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়কত্বের বিবেচনায় বঙ্গবন্ধুকে জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রদান করার। সে বিবেচনায় বিশ্বশান্তি পরিষদ ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর পদকপ্রাপক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নাম ঘোষণা করে।

বিজ্ঞাপন

জুলিও কুরি হচ্ছে বিশ্ব শান্তি পরিষদের একটি সম্মানজনক পদক। ফরাসি পদার্থ বিজ্ঞানী জঁ ফ্রেডরিক জুলিও কুরি ১৯৫৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার স্ত্রীর নাম ইরেন কুরি। তারা দুজনেই নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী। ইরিনার মা-বাবাও নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী দম্পতি পিয়েরে কুরি ও মাদাম কুরি। পরে বিশ্ব শান্তি পরিষদ তাদের শান্তি পদকের নাম ১৯৫৯ সাল থেকে রাখে ‘জুলিও কুরি’।

বিশ্বের শান্তির জন্য সর্বোচ্চ পদক হলো ‘জুলিও কুরি’ পদক। বিশ্বের বরেণ্য ব্যক্তিরাই এ পুরস্কার পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ছাড়াও এ বিরল সম্মান অর্জন করেছেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, কিউবার ফিদেল ক্যাস্ট্রো, চিলির সালভেদর আলেন্দে, ফিলিস্তিনের ইয়াসির আরাফাত, ভিয়েতনামের হো চি মিন, দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, কবি ও রাজনীতিবিদ পাবলো নেরুদা, মার্টিন লুথার কিং।

১৯৭৩ সালের ২৩ মে ঢাকায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এশীয় শান্তি সম্মেলনের এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে সেই পদক বঙ্গবন্ধুকে পরিয়ে দেন পরিষদের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মি. রমেশচন্দ্র। সেই অনুষ্ঠানে বিশ্ব শান্তি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রমেশচন্দ্র বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলার নন, তিনি বিশ্বের এবং তিনি বিশ্ববন্ধু।’ এই অনুষ্ঠানেরই একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও ক্লিপ এখন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই বিরল সম্মননা অনুষ্ঠান আয়োজনের অগ্রণী সংগঠন বাংলাদেশ শান্তি পরিষদ। সে সময় এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কমিউনিস্ট নেতা কমরেড আলী আকসাদ। মূলত বিশ্ব শান্তি পরিষদের সদস্য সংগঠন হিসেবেই বাংলাদেশ শান্তি পরিষদ ১৯৭৩ সালের ২৩ মে ঢাকায় এশীয় শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করে। স্বাধীন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এই এশীয় শান্তি সম্মেলনে অনেক গণ্যমান্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, দেশ-বিদেশের সন্মানিত অতিথিবৃন্দ, কূটনীতিকগণ এবং সর্বস্তরের জনগণ অংশগ্রহণ করেন। ঐতিহাসিক এই শান্তি সম্মেলন ছিল এশিয়ার তৎকালীন রাজনীতির জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কারণ, সময়টা ছিল পুঁজিবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের ঠান্ডাযুদ্ধের কালপর্বের। যখন এই দুই পরাশক্তি এক ভয়ানক সংঘাতের মুখোমুখি। যখন এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকায় দেশে দেশে জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম চলমান। সেসব মুক্তি আন্দোলনের নেতারা দুই পরাশক্তির অস্ত্র প্রতিযোগিতার বন্ধ এবং নিরস্ত্রীকরণের করণের দাবি জোরের সঙ্গে তুলে ধরছে। যখন ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং সম্মেলন থেকে জন্ম নেয়া চেতনার আলোকে ১৯৬১ সালে বেলগ্রেড শহরে জন্ম নেওয়া জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের ধারণা সারাবিশ্বে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের শীর্ষে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন যুগোস্লাভিয়ার নেতা মার্শাল টিটো, ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ণো, মিশরের গামাল আবদেল নাসের, ভারতের জহরলাল নেহেরু, জাম্বিয়ার কেনেথ কাউন্ডা, ঘানার নক্রূমা, কিউবার ফিডেল ক্যাস্ট্রো, আলজেরিয়ার হূয়েরি বুমেদিনে প্রমুখ। শান্তির জন্য গড়ে ওঠা এই জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সামনের সারিতে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ফলে শান্তি আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান ছিল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ব শান্তি পরিষদ কেন সে সময় কারও কারও ভাষায় ‘রাজনৈতিক নোবেল পুরস্কার’ বলে খ্যাত জুলিও কুরি শান্তি পদকে ভূষিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মনোনীত করল? আমার বিবেচনায় আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব একমাত্র বিবেচনা ছিল না। বরং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত পুরো সময়কাল জুড়ে বঙ্গবন্ধু বিশ্ব শান্তির সংগ্রামে বিভিন্নভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর যাপিত জীবনের দিকে তাকালে বিষয়টি সহজেই বুঝা যায়। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে তিনি দীর্ঘদিন কারাভোগ করে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। জেল থেকে মুক্তি পান ১৯৫২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। আর সে বছরই অক্টোবরে চীনে অনুষ্ঠিত হয় ‘পিস কনফারেন্স অব দ্য এশিয়ান অ্যান্ড প্যাসিফিক রিজিওন্স’। বঙ্গবন্ধু এই শান্তি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। এ সম্মেলনে তিনি বিশ্বের ৩৭টি দেশ থেকে আগত শান্তিকামী নেতাদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেছিলেন। শান্তির সংগ্রামে চীন সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য ভূমিকার কথা অনেকেই তাঁদের রচনায় উল্লেখ করেছেন। ১৯৫৬ সালের ৫–৯ এপ্রিল স্টকহোমে বিশ্ব শান্তি পরিষদের সম্মেলনেও অংশ নেন বঙ্গবন্ধু। শান্তি প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বিশ্বশান্তি আমার জীবনের মূলনীতি। নিপীড়িত, নির্যাতিত, শোষিত ও স্বাধীনতাকামী সংগ্রামী মানুষ, যেকোনো স্থানেই হোক না কেন, তাঁদের সঙ্গে আমি রয়েছি। আমরা চাই বিশ্বের সর্বত্র শান্তি বজায় থাকুক, তাকে সুসংহত করা হোক।’

কিন্তু বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় শান্তির সে অদম্য আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখে যেতে পারেননি। তিনি দেখেছেন কিভাবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই পাক রাষ্ট্রযন্ত্র বাঙালির বুকে গুলি চালিয়েছে। কিভাবে বাঙালির রক্ত-ঘামের অর্জনকে লুট করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে চেয়েছে। তিনি বাঙালিকে স্পষ্টভাবে দেখিয়েছেন কীভাবে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শান্তিপূর্ণ রাজনীতির পথ বাতিল করে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির মাতৃভাষার গণতান্ত্রিক অধিকারকে বুলেটের জোরে থামিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে এই অশান্তির ধারা চলতে থাকে। একইসঙ্গে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক চক্রান্ত চলতে থাকে। বঙ্গবন্ধু এই দুটোরই বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। সেজন্য তাঁকে সপরিবারে প্রাণ দিতে হয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের বিরোধিতা করে বিশ্ব পরাশক্তির একাংশের যে অমানবিক অবস্থান, তার পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বৃহৎ শক্তিবর্গ, বিশেষভাবে আগ্রাসীনীতির অনুসারী কতিপয় মহাশক্তির অস্ত্রসজ্জা, তথা অস্ত্র প্রতিযোগিতার ফলে আজ এক সংকটজনক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’

বঙ্গবন্ধু নিজের জীবনে একটি বিশ্বযুদ্ধ (দ্বিতীয়) এবং এর প্রতিক্রিয়া প্রত্যক্ষ করেছেন। সে সময় তিনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দুঃস্থ ও অনাহারীদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে গেছেন। সেই অভিজ্ঞতা তাঁর আছে। তাই তিনি বলেছেন, ‘আমরা চাই অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ব্যয়িত অর্থ দুনিয়ার দুঃখী মানুষের কল্যাণের জন্য নিয়োগ করা হোক। তাহলে পৃথিবী থেকে দারিদ্র্যের অভিশাপ মুছে ফেলার কাজ অনেক সহজসাধ্য হবে।’ এটি তাঁর প্রত্যাশাই শুধু নয়, নিজের ক্ষুদ্র সামর্থ্যে এগিয়ে আসাও। তাই স্বাধীনতার পর তিনি প্রথমে জোর দিয়েছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ওপর। ২০২৩ সালে বিশ্বে মোট সামরিক ব্যয় ছিল ২ দশমিক ৪৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। একবার ভাবুন, এই পরিমাণ টাকা দিয়ে দুনিয়ায় কতো হাসপাতাল, কতো স্কুল আর কতো অনাহারী মানুষের মুখে খবার তুলে দেওয়া যায়! তাহলে ২০২৩ সালে কোন সভ্যতার পথে চলছি আমরা!

আজ যখন প্যালেস্টাইন পরিস্থিতি এবং ইউক্রেন যুদ্ধ পুরো বিশ্বের রাজনৈতিক মানচিত্রকে পালটে দিচ্ছে, যখন এ যুদ্ধ ক্রমান্বয়ে আরও একটি বিশ্বযুদ্ধের রূপ পরিগ্রহ করছে, যখন এর ফলে পুরো বিশ্ব এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে; যখন মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাংলাদেশের ওপর দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী চাপিয়ে দিয়েছে, যখন আফগানিস্তানের সন্ত্রাসবাদী জঙ্গী তালেবান গোষ্ঠী পুরো দক্ষিণ এশিয়া তথা সারা বিশ্বের জন্য এক নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে। তখন শান্তির সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান ও শিক্ষা খুবই প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু বুকের রক্ত দিয়ে সারা দুনিয়ার মানুষকে শিখিয়ে গেছেন অস্ত্রের জোরে জনতাকে বেশিদিন দাবিয়ে রাখা যায় না। তিনি তাঁর জীবন দিয়ে শিখিয়ে গেছেন শান্তির বিকল্প শুধু শান্তিই।

বিজ্ঞাপন

লেখক: বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী

সারাবাংলা/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন