বিজ্ঞাপন

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী আজ

May 25, 2024 | 12:07 am

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী। ১৩০৬ বঙ্গাব্দের এই দিনে বাংলা সাহিহ্যের এই বিরল প্রতিভার জন্ম হয়। বরাবরের মতোই সারা দেশে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদ্‌যাপিত হবে আজ।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবির সমাধিতে পুষ্পার্ঘ নিবেদনের মধ্য দিয়ে দিবসটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, কবি পরিবার, বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ কবির অগণিত অনুরাগী কবির কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কবির স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, `ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে নজরুলের কবিতা ও গান।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেন, ‘কবি নজরুলের লেখনীতে ফুটে ওঠে আর্ত-পীড়িত, ব্যথিত ও উপেক্ষিত মানব মনের কথা। কবি নজরুলের আজীবন সাধনা ছিল সমাজের শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি এবং মানুষের সামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি অর্জন। তিনি অন্যায়, অসত্য, নির্যাতন-নিপীড়ন, নানামাত্রিক অসাম্য ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে যুগে যুগে মানুষকে প্রতিবাদ-প্রতিরোধে উচ্চকণ্ঠ হওয়ার প্রেরণা যুগিয়েছেন। তাঁর কাছে ধর্ম, গোত্র, জাত-কুল, ধনী গরিব সব শ্রেণির মানুষ ছিল সমান। তাঁর গানে প্রেম ও প্রকৃতি অপরূপ রূপে ধরা দিয়েছে। তাই কবি নজরুল একাধারে দ্রোহ ও মানবতার কবি; সাম্য ও অসাম্প্রদায়িকতার কবি; সত্য, সুন্দর, কল্যাণ, প্রেম ও হৃদয়াবেগের কবি।’

বিজ্ঞাপন

গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আরমগীর বলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন জাগরণের কবি এবং উপমহাদেশের স্বাধীনতার প্রথম বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। তিনি আমাদের জাতীয় কবি। তাঁর কবিতা ও গান আমাদের মুক্তিসংগ্রামে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তার লেখনির আবেদন চিরদিন নির্যাতিত মানুষকে প্রেরণা জোগাবে। পাশাপাশি সংগীতে তার মানবপ্রেম, প্রকৃতিপ্রেম এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি আত্মনিবেদিত ভক্তিমূলক গানের আবেদন চিরকালীন ও চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।’

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২৫ থেকে ২৭ মে পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। শনিবার বিকেল ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী। এ ছাড়া সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খানের নেতৃত্বে সকাল সাড়ে ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।

এছাড়াও ময়মনসিংহ, জাতীয় কবির স্মৃতি বিজড়িত কুমিল্লার দৌলতপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় পর্যায়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানমালা বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারি বেতার ও টেলিভিশন চ্যানেলসমূহ সম্প্রচার করবে।

সকাল সাড়ে ৭টায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হবে। সকাল ৮ টায় বিএনপির পক্ষ থেকে নজরুলের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করা হবে বলে জানিয়েছে দলটির মিডিয়া সেল।

১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে এক বাঙালি মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। চুরুলিয়া গ্রামটি আসানসোল মহকুমার জামুরিয়া ব্লকে অবস্থিত। পিতামহ কাজী আমিন উল্লাহর পুত্র কাজী ফকির আহমদের দ্বিতীয় স্ত্রী জাহেদা খাতুনের ষষ্ঠ সন্তান তিনি। তার বাবা ফকির আহমদ ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম এবং মাজারের খাদেম। নজরুলের তিন ভাইয়ের মধ্যে কনিষ্ঠ কাজী আলী হোসেন এবং দুই বোনের মধ্যে সবার বড় কাজী সাহেবজান ও কনিষ্ঠা উম্মে কুলসুম। কাজী নজরুল ইসলামের ডাক নাম ছিল দুখু মিয়া।

মাত্র ২৩ বছরের সাহিত্যিক জীবনে তিনি সৃষ্টির যে প্রাচুর্য রেখে গেছেন, তা তুলনারহিত। সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও তাঁর প্রধান পরিচয়, তিনি কবি। ১৯৪২ সালে মারাত্মকভাবে স্নায়বিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে পড়লে আকস্মিকভাবে তাঁর সকল সক্রিয়তার অবসান হয়। ফলে ১৯৭৬ সালে মৃত্যু অবধি দীর্ঘ ৩৪ বছর তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ও আগ্রহে ১৯৭২ সালে তাকে সপরিবারে কলকাতা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।

১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। নজরুল চেয়েছিলেন মসজিদের পাশে যেন তার কবর। তাঁর সেই চাওয়া পূরণ করেছে বাঙালি জাতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের উত্তর পাশে তাকে কবর দেওয়া হয়। কবরে শুয়ে যেন আজও মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পান প্রেম ও দ্রোহের কবি নজরুল।

সারাবাংলা/এজেড/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন