বিজ্ঞাপন

ভবন মালিককে খুনের পর লাশ গুম, কেয়ারটেকারের যাবজ্জীবন

May 26, 2024 | 2:52 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন ভবন মালিককে খুন করে লাশ গুমের মামলায় কর্মচারীকে সাজা দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে খুনের অপরাধে তাকে যাবজ্জীবন এবং লাশ গুমের অপরাধে তাকে আরও পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৬ মে) চট্টগ্রামের চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞা এ রায় দিয়েছেন বলে বেঞ্চ সহকারী ওমর ফুয়াদ জানিয়েছেন।

দণ্ডিত মোহাম্মদ হাসান (৪৫) চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার পূর্ব আজিমপুর আদর্শবাজার এলাকার মৃত আমির হোসেনের ছেলে। ঘটনার সময় নগরীর খুলশী থানার শতাব্দী হাউজিং সোসাইটির রাসেলের কলোনীতে তার বাসা ছিল। খুন হওয়া ব্যক্তির নির্মাণাধীন ভবনে তিনি কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক) হিসেবে কাজ করতেন।

২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর নগরীর খুলশী থানার পশ্চিম খুলশীর জালালাবাদ আবাসিক এলাকার জমির হাউজিং সোসাইটিতে নির্মাণাধীন একটি ভবনে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থেকে ওই ভবনের মালিক নিজাম পাশার হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তখন তার বয়স ছিল আনুমানিক ৬৫ বছর। বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ধুরং ইউনিয়নে।

বিজ্ঞাপন

খুনের ঘটনায় খুলশী থানায় মোহাম্মদ হাসানকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন নিজাম পাশার স্ত্রী সেলিনা ইয়াছমিন। মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন- ২০১৯ সাল থেকে জালালাবাদ জমির হাউজিং সোসাইটিতে একটি সাততলা ভবন নির্মাণ করছিলেন তার স্বামী নিজাম পাশা। ভবনটির নির্মাণ কাজের তদারকির জন্য মোহাম্মদ হাসানকে নিয়োগ দেন তিনি। হাসান বিভিন্ন সময় তার লোকজনকে নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করতে নিজাম পাশাকে বাধ্য করতেন। এ নিয়ে হাসানের সঙ্গে নিজাম পাশার মনোমালিন্য হয়। হাসানকে বিদায়ের পরিকল্পনা নেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে সে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

মামলায় আরও বলা হয়, ২৬ সেপ্টেম্বর ভোরে নিজ বাড়ি ফটিকছড়ি থেকে নিজাম পাশা শহরে আসেন নির্মাণাধীন ভবনের কাজ দেখতে। কিন্তু রাত ১০টা ৩৯ মিনিটে দারোয়ান হাসান ভবন মালিকের মোবাইল থেকে নিজামের মেয়েকে ফোন করে জানায় তার বাবা ভবনে আসেননি। লোক দিয়ে নির্মাণ সামগ্রী পাঠিয়েছেন। কিন্তু মোবাইল ফোন তার কাছে কেন- সে প্রশ্ন করায় উত্তরে হাসান জানায়, সেটিও লোক মারফত তার কাছে পাঠিয়েছে। এ সময় হাসান তাকে ২০ হাজার টাকা পাঠাতে বলে।

হাছানের অসংলগ্ন কথাবার্তায় সন্দেহ জাগে নিহত নিজামের মেয়ের। এরপর তার স্ত্রী ও স্বজনরা রাতেই ফটিকছড়ি থেকে চট্টগ্রামে রওনা করে রাত ২টার দিকে নির্মাণাধীন ভবনে পৌঁছান। বিভিন্ন দিকে খোঁজাখুঁজির পর নিজামকে না পেয়ে রাত সাড়ে ৩টার দিকে তারা দ্বারস্থ হয় পুলিশের। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে আশেপাশে খোঁজাখুঁজির পর নিজামের নির্মাণাধীন ভবন সংলগ্ন একটি স্থানে আবর্জনার স্তুপের ভেতর থেকে নিজাম পাশার হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে।

বিজ্ঞাপন

ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন হাসান। হত্যাকাণ্ডের ‍দুইদিন পর ২৮ সেপ্টেম্বর তাকে নগরীর কোতোয়ালী থানার রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে খুলশী থানা পুলিশ। সে সময় পুলিশ জানিয়েছিল, ভবনের রঙের কাজ নিজের লোক দিয়ে করানোর প্রস্তাবে নিজাম পাশা রাজি না হওয়ায় তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করেন হাসান। এরপর লাশ টেনেহিঁচড়ে নিজের কক্ষ থেকে বের করে ময়লা-আবর্জনার ভেতর লুকিয়ে রাখে।

আদালতের বেঞ্চ সহকারি ওমর ফুয়াদ সারাবাংলাকে জানান, ২০২২ সালের ২৩ জানুয়ারি ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন খুলশী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো.আনোয়ার হোসেন আদালতে হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। একই বছরের ১৯ জুলাই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষে মোট ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে আদালত এ রায় দিয়েছেন।

রায়ে খুনের দায়ে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় হাসানকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া লাশ গুমের অপরাধে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় হাসানকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

রায় ঘোষণার সময় কারাগারে থাকা হাসানকে আদালতে হাজির করা হয়। রায়ের পর আদালতের নির্দেশে সাজামূলে তাকে আবারও কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে বেঞ্চ সহকারি ওমর ফুয়াদ জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/ইআ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন