বিজ্ঞাপন

‘সরকার খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে’

May 26, 2024 | 5:47 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে না দিয়ে সরকার ‘খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৬ মে) বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জীবন-সংগ্রামের ওপর লেখা একটি গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর লেখা ইংরেজি গ্রন্থ ‘বেগম খালেদা জিয়া: হার লাইভ, হার স্টোরি’-এর বাংলা সংস্করণ ‘খালেদা জিয়া: জীবন ও সংগ্রাম’ গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষ্যে গুলশানে হোটেল লেকশোরে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘যার সম্পর্কে কথা বলছি, তিনি (খালেদা জিয়া) কিন্তু এখানে নাই। উনাকে আমাদের সামনে আসতে দেওয়া হয় না, কথা বলতে দেওয়া হয় না। উনার চিকিৎসার আশা বাংলাদেশের ডাক্তাররা ছেড়ে দিয়েছেন। তারা বলছেন, তাকে অবিলম্বে বিদেশে নেওয়া দরকার। বারবার বলার পরেও জেনেশুনে একটা মানুষকে কীভাবে হত্যা করা হচ্ছে, এটা ইতিহাস স্বাক্ষী হয়ে থাকবে। আজ বিভিন্ন জনের বক্তব্যে এটা উঠে এসেছে এবং আসবে। যারা উনাকে বিদেশে যেতে দিচ্ছে না তারা ইতিহাসে অপরাধীর মতো থাকবে। যখন সুযোগ আসবে ইনশাল্লাহ তাদের বিচার হবে।’

বিজ্ঞাপন

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘এই সরকার বারবার যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং বিএনপির অস্তিত্ব টিকে থাকতে দেবে না। আর সবচেয়ে বড় কথা হল- এই সরকার থাকলে এদেশের স্বাধীনতা থাকবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষকে যদি সচেতন করতে না পারি, যদি নিজেরা সচেতন না হই তাহলে এই সরকারের হাত থেকে বাঁচতে পারব না। আজকে বক্তাদের বক্তব্যেও এই কথাটি উচ্চারিত হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এত নির্দয়-নিষ্ঠুর আচরণ কোনো মানুষ মানুষের সঙ্গে করতে পারে- এটা ভাবা যায় না। আমি উনাকে (খালেদা জিয়াকে) হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। উনারা (চিকিৎসকরা) দেখিয়েছিলেন কীরকম করে হার্টে বাইপাস করা যাচ্ছে না। কিন্তু সেটা একটা বিকল্প তারা করছেন, যাতে রক্ত জমে ব্লক হয়ে মারা না যান- সেরকম করে একটা প্যাসেজ তৈরি করা। দেখে আমার নিজে এত খারাপ লেগেছিল যে, এই দৃশ্য দেখার পরে কেউ তাকে আটকিয়ে রাখতে পারে- এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য। শেখ হাসিনা সেটা দেখেছেন তা তো আমি বলি না। কিন্তু তিনি জানেন না তা হতে পারে না। কারণ, উনি প্রতিনিয়ত খবর তো রাখেন। রাখবার পরও এই নিষ্ঠুর আচরণ করেন।’

সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘৭ জানুয়ারি পরে দেশের মানুষের মধ্যে অনেকে বলেছেন, আর পারলে না। এরা পাঁচ বছরই থাকবে, কেউ কেউ এরকম করে বলেন, যতদিন জীবিত আছে নড়াতে পারবেন না। এখন দেখছি নিজে নিজেই নড়ছে।’

মান্না বলেন, ‘তিনটা এমন এমন শট হয়েছে— একটা প্রাক্তন আইজিপি, একটা প্রাক্তন চিফ অব আর্মি স্টাফ, আরেকটা তিন বারের এমপি। চোরগুলো, ডাকাতগুলো গায়ের জোরে এমপি হয়েছে। তাদের চেহারা এক্সপোজড হয়েছে। ফলে সবাই বুঝতে পারছে। পত্রিকায় লিখেছে দেখলাম, তিনটা বিষয় নিয়ে বিব্রত সরকার। এই দায় কার? চিফ অব আর্মি স্টাফ কে বানিয়েছে, আইজিপি কে বানিয়েছে, এমপি কে বানিয়েছে? সবাইকে উনি (শেখ হাসিনা) প্রতিপালন করে বড় করে লুটপাট করবার ক্ষমতা দেওয়ার পরে সবগুলো এক্সপোজড হয়ে গেছে। তখন আবার পত্রিকায় লিখছে দায় কার? বাহ!’

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা জামান বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া একজন প্রাগমেটিক পপুলার লিডার। আজ তার ওপর জেল-জুলুম-নির্যাতন, উনি ভিকটম হয়েছেন। এটা একটা টর্চার। রাজনীতি করে গিয়ে উনি বিভিন্ন সরকারের আমলে ভিকটিম হয়েছেন। হাসিনা আমলে জেলে গিয়েছেন, এরশাদের আমলে জেলে গিয়েছেন। এখনও উনি জেলে আছেন, চিকিৎসা করার সুযোগ পাচ্ছেন না। চোখ দেখাতে আমাদের প্রেসিডেন্ট চলে ‍যাচ্ছেন সিঙ্গাপুরে ফ্যামিলিসহ। আরও অনেক নেতা চলে যাচ্ছেন সিঙ্গাপুর, লন্ডন, জার্মানিতে যখন-তখন। অথচ বেগম জিয়াকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এটা একটা প্রতিশোধ, এটা একটা রেলিভেন্স। এভাবে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।’

‘আমি বলব, বেগম খালেদা জিয়া প্রিভ্যাইল সিম্বোলাইজেস বাংলাদেশ। তিনি আজ নিজের প্রিয় জন্মভূমিতে বন্দি। আমি মনে করি, বাংলাদেশও বন্দি। বাংলাদেশ ইজ অ্যা প্রিজনার, ভেতর থেকে বাংলাদেশও বন্দি। সুতরাং খালেদা জিয়া বাংলাদেশকে সিম্বোলাইজ করে বলে আমি মনে করি’— বলেন দিলারা জামান।

অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহর সভাপতিত্বে ও কবি আবদুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান, গ্রন্থের অনুবাদক শাহরিয়ার সুলতান, ‘ইতি প্রকাশনা’র প্রকাশক জহির দীপ্তি এবং গ্রন্থের লেখক প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহর সহধর্মিনী দিনারজাদি বেগম।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, কেন্দ্রীয় নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, মনিরুল হক চৌধুরী, আবদুস সালাম, আফরোজা খানম রীতা, এসএম আবদুল হালিম, হাবিবুর রহমান হাবিব, অধ্যাপক শাহিদা রফিক, অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, বিজন কান্তি সরকার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, জহির উদ্দিন স্বপন, শ্যমা ওবায়েদ, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আফরোজা আব্বাস, শিরিন সুলতানা, নিলোফার চৌধুরী মনি, এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজাম প্রমুখ।

জোট নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জামায়াতে ইসলামী মজিবুর রহমান, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, সাম্যবাদী দলের (মার্কবাদী-লেলিনবাদী) হারুন চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের নূরুল হক নূর, জাগপার খন্দকার লুৎফুর রহমান, ইকবাল হোসেন প্রধান, এনডিপির আবু তাহের, পিপলস পার্টির বাবুল সর্দার চাখারি, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করীম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ ন্যাপের শাওন সাদেকী প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন