বিজ্ঞাপন

ভিকারুননিসার ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের রায় বহাল

May 26, 2024 | 5:47 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানীর ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণির ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ‘নো অর্ডার’ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। ফলে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল থাকল।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৬ মে) হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে শিক্ষার্থীদের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার আদালত ‘নো অর্ডার’ আদেশ দেন।

আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মঈনুল হাসান। ১৬৯ শিক্ষার্থীর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান।

আজ সকাল রাজধানীর ভিকারুননিসার প্রথম শ্রেণির ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, ২১ মে ভিকারুননিসার প্রথম শ্রেণির ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে রায় দেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে ১৫ দিনের মধ্যে শূন্য হওয়া আসনে অপেক্ষামান তালিকা থেকে ভর্তি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ১৬৯ জনকে ভর্তিতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এ ক্ষেত্রে ভর্তি বাতিল হওয়াদের অনলাইন সিস্টেমে আবেদন ও ভর্তির ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম ছিল কি না, তা তদন্তের নির্দেশ দিয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া ১৬৯ জনকে ভর্তি করার ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে একজন অতিরিক্ত সচিবের নিচে নয় এমন পদমর্যাদার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা, বুয়েটের এ বিষয়ের একজন কারিগরি বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে অনিয়ম দুর্নীতি তদন্ত করতে বলা হয়েছে‌।

১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

রায়ে আদালত বলেছেন, ১৬৯ শিক্ষার্থী নিয়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য অভিভাবকেরা এর দায় এড়াতে পারে না।

আদালতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম শুনানি করেন। রিট আবেদনকারী দুজন অভিভাবকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শামীম সরদার। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ও রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।

বিজ্ঞাপন

রিট আবেদনকারী ১৩৬ জন অভিভাবকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান ও সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী খুররম শাহ মুরাদ।

রায়ের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান বলেছিলেন, রায়ে আদালত বলেছেন- ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণিতে ১৬৯ শিক্ষার্থীকে বিধি বহির্ভূতভাবে নীতিমালায় উল্লিখিত বয়সসীমার ব্যত্যয় ঘটিয়ে ভর্তি করা হয়েছে সেটি প্রমাণ হয়েছে।

রায়ে আদালত আরও বলেছেন, ১৬৯ জনকে ভর্তি করার ক্ষেত্রে অভিভাবকেরা এর দায় এড়াতে পারেন না।

মামলার বিবরণে জানা যায়, নির্দিষ্ট বয়সসীমার বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ এনে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন লটারিতে উত্তীর্ণ ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থীর মা পারভিন আকতারসহ দুজন অভিভাবক।

ওই রিটে প্রাথমিক শুনানির পর গত ২৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। অন্তবর্তী আদেশে হাইকোর্ট রিটকারী পারভিন আকতারের আবেদন ১০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

জাতীয় শিক্ষানীতি- ২০১০ ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত বয়সসীমা অনুসরণ না করে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির অভিযোগ এনে আবেদন করেছিলেন পারভিন আকতার।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে জানায় আবেদনটি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ভিকারুননিসার ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করতে প্রতিষ্ঠানটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাউশির মহাপরিচালকের এ সংক্রান্ত একটি চিঠিও আদালতে উপস্থাপন করা হয়।

ওই চিঠিতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া ১৬৯ শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল করে জরুরি ভিত্তিতে মাউশিকে অবহিত করতে অনুরোধ করা হয়। ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তিকে বিধিবহির্ভূত উল্লেখ করা হয়েছিল ওই চিঠিতে। এই চিঠি দেখার পর সেদিন আদালত ভিকারুননিসার অধ্যক্ষকে মাউশির নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দেন। ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ এ আদেশ বাস্তবায়ন করে গত ৬ মার্চ আদালতে বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দেন।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মাউশির নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণির ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। সেদিন আদালত বাতিল করা ১৬৯টি শূন্য আসন এক সপ্তাহের মধ্যে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি নিয়ে পূরণের নির্দেশ দেন। আর এ আদেশ বাস্তবায়ন করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এদিন আদালত ভর্তি বাতিল হওয়া ৩৬ শিক্ষার্থীর অভিভাবকের পক্ষভুক্তির আবেদন মঞ্জুর তাদের এ মামলায় পক্ষভূক্ত করেন।

পরে এই অভিভাকরা হাইকোর্টের ৬ মার্চের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন। গত ১৮ মার্চ চেম্বার আদালত আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।

গত ২০ মার্চ আবেদনে শুনানির পর আপিল বিভাগ ভর্তি বাতিল করা ১৬৯ শিক্ষার্থীর শূন্য আসনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা দেন। একই সঙ্গে এ সংক্রান্ত রুল দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টকে নির্দেশ দেন।

এদিকে ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করতে ভিকারুননিসাকে দেওয়া মাউশির চিঠি এবং ভর্তি বাতিল করে মাউশিকে দেওয়া ভিকারুননিসার চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অভিভাবকরা রিট করেন।

এ রিটে প্রাথমিক শুনানির পর গত ২৫ মার্চ হাইকোর্ট রুল দেন।

১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। ওই রুলটিই খারিজ করে রায় দেন উচ্চ আদালত। অন্যদিকে ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করা হয়েছে।

সারাবাংলা/কেআইএফ/ইআ

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন