বিজ্ঞাপন

‘ত্রাণ না, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই’

May 28, 2024 | 10:40 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

খুলনা: হামরা (আমরা) ভাত চাই না, ত্রাণ চাই না, চাই শুধু একটা টেকসই বেড়িবাঁধ। না অইলে (হলে) আমাগো জীবন বাঁচানো কষ্টের অবে(হবে)। যে কোনো সময় আমরা তলাইয়া জামু (যাব)। এহন(এখন) বাঁচানোর জন্নে (জন্য) আগে লাগবে বেঁড়ি। তাই আশ্বাস না, বাস্তবায়ন চাই। ভিটেমাটি নিয়ে বাঁচতে চাই। কথা গুলো বলছিলেন, কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের কপোতাক্ষ নদীর তীরবর্তী দশালিয়া গ্রামের রহিমা বেগম।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৮ মে) বিকেলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় রেমেলের তাণ্ডবে কপোতাক্ষ নদীর তীরে দশালিয়া গ্রামের দুই পয়েন্টে ১৫০ মিটার বেঁড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি এসে গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ভাঙা বেঁড়িবাধের কারণে গত রোববার থেকে চরম দুর্ভোগে আছেন ওই গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার।

বিজ্ঞাপন

দশালিয়া গ্রামের আঃ আলিম বলেন, ১৫ বছর ধরে ওই ভাঙা বাঁধ আমাদের গ্রামবাসীদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জোয়ারের পানি এলাকায় ঢুকে বাড়িঘর তলিয়ে যেত। এক বছর আগে নতুন বেঁড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। ঘূর্ণিঝড় রেমেলে সে বাঁধটি ভেঙে গেছে। এতে গ্রামের পানি ঢুকে গেছে তলিয়ে গেছে ৭০০ বিঘার মৎস্য ঘের। আমার ৭০ বিঘার ঘের ছিল সেটাও তলিয়ে গেছে। এতে ২০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঝড়ের আগের দিন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা সোলায়মান হোসেন কে আমি দুটো পা ধরে বলেছি, এই জায়গায়টা নিচু হয়ে গেছে, বালির বস্তা সরে গেছে। বাঁধটি ঝুকিপূর্ণ তাই ঝড়ের আগে সংস্কারের জন্য বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও তারা এড়িয়ে গেছেন। আপনার পা ধরি এখানে একটু মেরামতের ব্যবস্থা করেন, সে বলে আমরা করতে পারব না বরাদ্দ নেই, পারলে তোমরা কর। ঠিক সেই জায়গা দিয়ে বাঁধ ভেঙে গেছে।

৭৫ বছরের বৃদ্ধ আছেররোদ্দি মোড়ল বলেন, আমি আমি ৩০ বছর ধরে দেখছি দশালিয়া বেঁড়িবাঁধ ভাঙছে। আমার কয়েক বিঘা জমি ছিল। তিন চার বার বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ঘরবাড়ি সব নদীতে চলে গেছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আর কত? এখন শুধু বসত ভিটাটুকু আছে, সেটা গেলে আর বসবাস হবে না। কোথায় যাব? কী করব? বুঝতে পারছি না। বয়স হয়েছে এখন তোর কাজ করতে পারি না। একমাত্র এই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কারণে প্রতি বছর শতশত পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে সহায়-সম্বল ও বসত বাড়ি হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। আমরা গ্রামবাসী ত্রাণ-সাহায্য কিছু চাই না। কপোতাক্ষ নদীর ভাঙনের হাত থেকে বাঁচতে টেকসই বেঁড়িবাঁধ চাই।

একই এলাকার বৃদ্ধ কলিমুদ্দিন বলেন, এত কষ্ট করি, ঘেরের রাস্তা করি, মাছ ছাড়ি, ফসল আবাদ করি, সব নদী ভাসে নিয়া যায়। হামাক একট ডিঙি নৌকা ছিল সেটাও ভ্যাঙি (ভেঙে) দু’ভাগ হয়ে গেছে। হামাকগুলোক দয়া করি নদীটা বান্দি দিলে হয়। এই নদীটাই হামাক ফকির বানইছে।

স্বপন কুমার নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, একদিন আয় না করলে চলে না। তবুও বাঁচার তাগিদে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতি হচ্ছে। আমরা না করলি এ বাঁধ বানতি অনেক দেরি হবে। তখন এলাকায় থাকার মতো পরিস্থিতি থাকবে না। বাঁধ মেরামতের দায়িত্বের মধ্যি পড়ে, তারা কেউ সময় থাকতি এগোয় না। যত মরণ আমাদের মতো খাইটে খাওয়া মানুষের। এ জন্য এবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিদাররা আসলে হয় ওদের মারব না হয়, আমরা মরব।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রেমেলের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে সোমবার ভোরের দিকে কয়রার মহারাজপুর, মহেশ্বরীপুর, কয়রা সদর, বাগালী, আমাদী, উত্তরবেদকাশি, দক্ষিণবেদকাশি ইউনিয়নের ১৭ টি স্থানে পানি উন্নয়ন রোর্ডের বেঁড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। সকালে নদীতে জোয়ার শেষ হলে স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে সেসব স্থানে মেরামতের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে। বাঁধের ওপর কাদামটি ভর্তি বস্তা দিয়ে উঁচু করলেও দুপুরের জোয়ারে ও তীব্র ঝড়ো বাতাস আর ভারি বৃষ্টিতে কয়েকটি জায়গায় পুনরায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের অনেক ক্ষতির পরও সিংহের চর বাঁধ আটকানো সম্ভব হলেও সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে দশালিয়ার বাঁধ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তা সোলায়মান হোসেন বলেন, জোয়ারের পানি উপচে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দিয়ে যাতে পুনরায় লোকালয়ে পানি না ঢোকে সেজন্য স্থানীয় বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করলেও, পাউবোর পক্ষ থেকে স্থানীয় লোকজনকে বস্তা, বাঁশ দিয়ে সহযোগিতা করেছি। শুধু মাত্র দশালিয়ার বেঁড়িবাধ ভেঙে গেছে। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। বাঁধটি মেরামতের চেষ্টা করা হচ্ছে।

সারাবাংলা/এনইউ

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন