বিজ্ঞাপন

‘এভারেস্টের চেয়ে লোৎসে বেশি আনন্দ দিয়েছে’

May 29, 2024 | 4:52 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: এভারেস্টের চেয়ে লোৎসে আরোহণ করতে অনেক আনন্দ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয়ী বাবর আলী।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৯ মে) সকালে নগরীর চকবাজারে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এভারেস্ট জয়ের রোমাঞ্চকর অভিযানের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন বাবর আলী।

এর আগে, এভারেস্ট চূড়ায় উঠে বাবর আলী বাংলাদেশের যে পতাকা উড়িয়েছিলেন সেটা তার ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের হাতে তুলে দেন।

নেপালের রাস্তায় এভারেস্ট জয়ের আনন্দ উদযাপন করেছেন জানিয়ে বাবর বলেন, ‘এভারেস্টের উচ্চতা বেশি হলেও লোৎসে আরোহণ আমাকে অনেক আনন্দ দিয়েছে। সুস্থ শরীরে ফিরে আসতে পেরেছি, এটাই আমার জন্য অনেক বড় কিছু। ওখান থেকে নামার পর ও দেশে আসার পর অনেকেই জিজ্ঞেস করেছেন আমার হাতে বা পায়ে কিছু হয়েছে কি না। কাঠমান্ডুতে আমি আট কিলোমিটার রাস্তা দৌড়ে এভারেস্ট জয়ের আনন্দ উদযাপন করেছি।’

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে এভারেস্ট জয়ী বাবর আলী বলেন, ‘মনের আনন্দেই ১৯ মে আমি এভারেস্ট জয় করে নিচে নামি। প্রায় দুই মাসের অভিযান ছিল। গত ১ এপ্রিল আমার অভিযান শুরু হয়। ১০ এপ্রিল বেস ক্যাম্পে পৌঁছি। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে এবার তুষারপাত কম হয়েছে। তাই ৬ হাজার ১০০ মিটারের কুমু আইসফলের (বরফের প্রপাত) রাস্তা তখনও ওপেন হয়নি। এ সড়কটি অ্যালুমিনিয়াম সিঁড়ি দিয়ে পার হতে হয়। এ রাস্তার অনেক দুর্ঘটনা ঘটে।’

তিনি বলেন, ‘নেপালের একজন পর্বতারোহী আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তাকে হেলিকপ্টারে উদ্ধার করতে হয়েছিল। ক্যাম্পের তিন থেকে চার নম্বর রাস্তা অনেক চ্যালেঞ্জিং। জীবনে প্রথম কৃত্রিম অক্সিজেন ব্যবহার করেছি। ডাক্তারি পড়ার সময় প্রেসক্রিপশনে রোগীদের অক্সিজেনের মাত্রা কত নেবে সেটা লিখতাম। এখন নিজেকেই সেটা ব্যবহার করতে হয়েছে। তবে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করলেও চেষ্টা করেছি অভিযানে যতটা সম্ভব কম কৃত্রিম অক্সিজেন নিতে।’

বিজ্ঞাপন

বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তন দেখার অন্যতম জায়গা হিমালয় জানিয়ে বাবর আলী বলেন, ‘তুষারপাত না হওয়ায় এবার ব্লু আইস বেড়ে যায়। কেউ যদি গ্লোবাল ওয়ার্মিং দেখতে চায় তার জন্য উত্তম জায়গা হচ্ছে হিমালয়। হিমালয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর লেক আছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ার কারণেই এগুলো সৃষ্টি হচ্ছে। দুই হাজার মিটারের গাছ আরও উপরে গেলে ঝোঁপ হয়ে যায়। কিন্তু শেকড় মোটা। শুধুমাত্র চ্যালেঞ্জ নিয়ে গেলে হবে না। এসবও দেখতে হবে।’

এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার পর কী দেখেছেন? সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে বাবর আলী বলেন, ‘মানুষের একটি সুপ্ত বাসনা থাকে সর্ব্বোচ উঁচু জায়গা থেকে পৃথিবীকে নিজের চোখ দিয়ে দেখার। এভারেস্টের চূড়ায় আমি এক ঘণ্টা ১০ মিনিট ছিলাম। তিব্বতের সাইড দেখে খুব ভালো লেগেছে। এভারেস্ট জয়ের পর নেমে আসার সময় তুষার ঝড়ে দেড় ঘণ্টা আটকে ছিলাম। পরে কোনো ঝামেলা ছাড়াই ক্যাম্পে নেমে আসতে পেরেছি।’

এভারেস্টে জয় করার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অর্থ উল্লেখ করে বাবর আলী বলেন, ‘এভারেস্টে যাওয়ার চেয়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ পৃষ্ঠপোষকতা। প্রথম আমি স্পন্সর ও মানুষের সহযোগিতা নিয়ে কোনো মাউন্ট অভিযানে গিয়েছি। সবার সহযোগিতা পেয়েছি বলেই এভারেস্ট জয় করতে পেরেছি। এরপর অনেক টেকনিক্যাল মাউন্ট আছে সেগুলোতে যাব।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘আবার এমন অনেক পাহাড় আছে যেগুলোতে এখনও কেউ যায়নি সেগুলোতে যেতে চাই। নেপালের অন্নপূর্না মাউন্টে যাব সামনে। এভারেস্ট সামিট করার ক্ষেত্রে আবহাওয়া বড় ফ্যাক্টর। বাংলাদেশের একজন আবহাওয়াবিদ আমাকে দারুণ সহযোগিতা করেছেন।’

এভারেস্টে খাবারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বেস ক্যাম্প পর্যন্ত নরমাল খাবার। ডাল-ভাত খাওয়া যায়। এরপর যত উপরে উঠবেন বরফ গলিয়ে পানি ফোটাতে হবে। তারপর সেই পানি দিয়ে যেসব খাবার রান্না করে খাওয়া যায় সেগুলো খেতে হয়। আমরা নুডলস, স্যুপ এগুলোই খেয়েছি।’

শিগগির চাকরিতে যোগ দেবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ডাক্তারি ছাড়া তো আর কিছু পারি না। তাই চাকরি নিতে হবে। সঞ্চয় দিয়ে পর্বতারোহণের নেশা পূরণ করতাম। এভারেস্ট জয় করার চেয়ে কঠিন এর জন্য তহবিল জোগাড় করা, পৃষ্ঠপোষক পাওয়া। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাংলাদেশের অনেক তরুণ এভারেস্ট জয় করতে পারবে।’

সংবাদ সম্মেলনে এভারেস্ট অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক ফারহান জামান বলেন, ‘পুরো অভিযানে বাবর আলীর শুধুমাত্র পর্বতারোহণ অভিযানে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ লাখ টাকার মতো। যার একটি বড় পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে। বাংলাদেশে বাবর আলীই প্রথম যিনি ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে এভারেস্ট জয় করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে প্রতিটি ঘরে ঘরে বাবর আলী জম্ম নেবে। ক্রাউডফান্ডিংয়ের আমরা বিকাশে ২৫ টাকা পর্যন্ত সহায়তা পেয়েছি। বাবর একা এভারেস্টে ওঠেনি। যারা যারা তাকে সহযোগিতা করেছে, তার পাশে থেকে সাহস দিয়েছে সবাইকে নিয়েই সে এভারেস্টের চূড়া জয় করেছে।’

উল্লেখ্য, এভারেস্ট ও লোৎসে পর্বতশৃঙ্গে আহরণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে বাবর আলী নেপালের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন গত ১ এপ্রিল। গত ১৯ মে ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন বাবর আলী। এ দিন বাংলাদেশ সময় সকাল পৌনে ৯টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন বাবর। এর পর গত ২১ মে চতুর্থ সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ‘লোৎসে’ জয় করেন তিনি। আর মঙ্গলবার (২৮ মে) রাত ৯টায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পৌঁছান বাবর আলী।

সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন