বিজ্ঞাপন

হাজার কোটি টাকার মাছ ভাসিয়ে নিয়ে গেল রেমাল

May 29, 2024 | 10:15 pm

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আবারও এক ঘূর্ণিঝড়, আবারও তছনছ উপকূল। দেশের সবচেয়ে দক্ষিণপূর্বের কক্সবাজার থেকে শুরু করে সবচেয়ে দক্ষিণপশ্চিমের সাতক্ষীরা— প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাত থেকে রক্ষা পায়নি উপকূলের কোনো জেলাই। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, উপকূলের ১৯টি জেলায় তাণ্ডব চালিয়েছে এই ঘূর্ণিঝড়। প্রাণহানি ঘটেছে ১০ জনের। বিধ্বস্ত হয়েছে দেড় লক্ষাধিক বসতঘর। রেমালের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস আর প্রবল বর্ষণে জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে উপকূলের কয়েক লাখ মানুষ। তবে রেমালের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে কৃষি খাতে। দেড় লক্ষাধিক হেক্টর জমির ফসল তো আক্রান্ত হয়েইছে, পাশাপাশি মৎস্য খাতে ক্ষতি প্রায় হাজার কোটি টাকার।

বিজ্ঞাপন

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, রেমালের প্রভাবে দেশের চার বিভাগের ৮৬ উপজেলায় ৯৭ হাজার ২৮২টি পুকুর ও ৪৮ হাজার ৭৬৯টি ঘের তলিয়ে গেছে। এ ছাড়াও তলিয়ে গেছে চার হাজার ৭১৭টি কাঁকড়া ও কুচিয়ার খামার। অতি বর্ষণ, বন্যা ও জোয়ারে ভেসে গেছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার মাছ।

এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য বলছে, রেমালের প্রভাবে উপকূলীয় জেলার এক লাখ ৫৩ হাজার ৬৩০ হেক্টর বিভিন্ন ফসলি জমি আক্রান্ত হয়েছে। আউশের বীজতলা, সবজি, তিল, পাট, ভূট্টা, মুগ ডাল, পেঁপে, কলা, পানবরজ ও মরিচের ক্ষয়ক্ষতি হলেও এখনো ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া গুরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগির মৃত্যুতে প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬২ কোটি টাকার।

মাছের ঘের, ফসলি জমি— সবই তলিয়ে গেছে জলোচ্ছ্বাস আর তীব্র বর্ষণে। ভোলা থেকে তোলা। ছবি: সারাবাংলা

মৎস খাতে ক্ষয়ক্ষতি

মৎস্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দেশের চার বিভাগের ৮৬টি উপজেলায় মৎস্য সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৯৭৭ কোটি ৫২ লাখ ৭২ হাজার টাকার। এসব উপজেলায় ৯৭ হাজার ২৮২টি পুকুর ও ৪৮ হাজার ৭৬৯টি ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তলিয়ে গেছে চার হাজার ৭১৭টি কাঁকড়া ও কুচিয়ার খামার। এসব উপজেলায় ২৩ হাজার ৭৬২ টন মাছ, সাত হাজার ৯১৬ টন চিংড়ি, এক হাজার ৯৩৭ টন পোনা, ২৪৮ টন কাঁকড়া ও কুঁচিয়া এবং ৫৮৮ লাখ পিএলের (পোস্ট লার্ভি) ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

অধিদফতরের তথ্য বলছে, জেলাগুলোতে মাছের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৪১৫ কোটি ৩৯ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। চিংড়িতে ক্ষতির পরিমাণ ৩৩৯ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বিভিন্ন পোনায় ক্ষতি ১০৬ কোটি ৯৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা। কাঁকড়া ও কুচিয়ায় ক্ষতি ২১ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর পিএলের ক্ষতি ১৪ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

আক্রান্ত চার বিভাগের জেলাগুলো হচ্ছে— খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনা; বরিশাল বিভাগের বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা ও বরগুনা; চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর; এবং ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর। রেমালের প্রভাবে মৎস্য খাতের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে মন্তব্য জানতে মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে একাধিকবার কল করলেও তার মোবাইল নম্বরটি পাওয়া গেছে।

কৃষিতে ক্ষয়ক্ষতি

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, রেমালের প্রভাবে দেশের এক লাখ ৫৩ হাজার ৬৩০ হেক্টর বিভিন্ন ফসলি জমি আক্রান্ত হয়েছে। উপকূলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আউশের বীজতলা, সবজি, তিল, পাট, ভূট্টা, মুগ ডাল, পেঁপে, কলা, পানবরজ ও মরিচের ক্ষেত। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে গ্রীষ্মকালীন সবজির— ৪৫ হাজার ৬৫ হেক্টর সবজির জমি তলিয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া পাটের ৩৪ হাজার ৪০৯ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। পানবরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাঁচ হাজার ৬৫০ হেক্টর। আউশের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ হাজার ৫৮৪ হেক্টর। ড্রাগন ফলের ১০ হাজার হেক্টর জমিও তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে বিভিন্ন ফলের এক হাজার ২১৫ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে এই ঘূর্ণিঝড়ে।

বড় বড় ঘের থেকে শুরু করে বসতবাড়ির পাশের ছোট পুকুরগুলোও রেহাই পায়নি রেমালের তাণ্ডব থেকে। পটুয়াখালীর কুয়াকাটায়। ছবি: সারাবাংলা

জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক তাজুল ইসলাম পাটোয়ারি সারাবাংলাকে বলেন, মাঠে এখন তেমন কোনো ফসল ছিল না। বোরো ধান আগেই কাটা শেষ হয়েছে। আউশ আবাদের জন্য এরই মধ্যে বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল। সেই বীজতলাগুলো আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া গ্রীষ্মকালীন সবজি, তিল, পাট, ভূট্টা, মুগ ডাল, পেঁপে, কলা, পানবরজ ও মরিচের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পাওয়া যায়নি। উপকূলীয় এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট থাকায় সব তথ্য এখনো সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও নিরুপণ করা হয়নি।

প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষয়ক্ষতি

এদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য বলছে, ঘূর্ণিঝড়র রেমালের প্রভাবে দেশের তিন বিভাগের ১২ জেলার ৬২ উপজেলায় প্রাণিসম্পদ খাতে প্রায় ৬২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত গবাদি পশুর খামার তিন হাজার ২৫২টি ও হাঁস-মুরগীর খামার ১০ হাজার ১৫৭টি।

রেমালের আঘাতে বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগে গরু মারা গেছে ৩০৪টি, মহিষ মারা গেছে ৩৮৭টি, ছাগল ৬৮৬টি, ভেড়া ৬৯৬টি। এ ছাড়া দুই লাখ ৩৮ হাজার ২৩৮টি মুরগি ও ২৭ হাজার ৯০৮টি হাঁস মারা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দানাদার পশু খাদ্য, খড় ও ঘাস।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন