বিজ্ঞাপন

সিলেটে বন্যা ছড়াল ৭ উপজেলায়, পানিবন্দি সাড়ে ৫ লাখ মানুষ

May 31, 2024 | 6:10 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বানের পানিতে আগে থেকেই প্লাবিত হয়েছিল পাঁচ উপজেলা। নদীর পানি বেড়ে নতুন করে ঢল নেমেছে আরও দুই উপজেলায়। সাত উপজেলা মিলিয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ। পানি ঢুকতে শুরু করেছে সিলেট নগরীতেও।

বিজ্ঞাপন

এ পরিস্থিতিতে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) জরুরি সেবা খাতের সব কর্মীর ছুটি বাতিল করেছে। জরুরি যোগাযোগের জন্য খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। সিলেটের সব পর্যটনকেন্দ্রও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। জেলা প্রশাসন থেকে ৫৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে।

সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, লোভা, ধলাই ও পিয়াইন নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলে মঙ্গলবার (২৮ মে) রাতেই গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে পড়ে। বুধবার রাত নাগাদ বন্যা ছড়িয়ে পড়ে কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জেও।

এবার বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলাতেও ছড়িয়েছে বন্যা। শুধু তাই নয়, বৃহস্পতিবার রাতে নদী উপচে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে সিলেট নগরীর নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলেও। পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগও বাড়তে শুরু করেছে উপজেলাগুলোতেও।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- সব নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, বন্যায় ডুবছে সিলেট

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য বলছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে টানা দুই দিনের অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে উজানের ঢল মিলিয়ে মূলত এই বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে বৃষ্টি থেমে রোদের দেখা মিললেও উজানে বৃষ্টি থামেনি।

শুক্রবার (৩১ মে) দুপুরে সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব সারাবাংলাকে বলেন, টানা কয়েকদিন বৃষ্টির পর আজ (শুক্রবার) সকালে বৃষ্টি থেমেছে। কিছুটা রোদও উঠেছে। কিন্তু উজানে ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টি থামেনি। গত ২৪ ঘণ্টাতেও মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ১৯৩ মিলিমিটার। সেখানে আরও দুয়েক দিন বৃষ্টিপাতের আভাস রয়েছে। বৃষ্টি থাকলে উজানের ঢলও অব্যাহত থাকবে।

বিজ্ঞাপন

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাসও বললেন একই কথা। তিনি বলেন, রেমালের প্রভাবে বৃষ্টি একটি কারণ। কিন্তু এই বন্যা মূলত উজানের ঢলের কারণে। উজানে বৃষ্টি বন্ধ হলে ও ঢল থামলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, শুক্রবার বিকেল ৩টায় কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদী বিপৎসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে ওই নদীর সিলেট পয়েন্টে পানির উচ্চতা বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছিল। বৃষ্টিপাত থেমে যাওয়া সারিঘাট পয়েন্টে সারি নদী এবং জাফলংয়ে ডাউকি নদীর পানিও বিপৎসীমার কিছুটা নিমে নেমেছে।

আরও পড়ুন- বন্যা: কন্ট্রোল রুম খুলল সিসিক, কর্মীদের ছুটি বাতিল

ওই সময়ে অমলশিদ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছিল বিপৎসীমার ২০৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, শেওলা পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ ও শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল পানি।

বিজ্ঞাপন

এ অবস্থায় বন্যাকবলিত এলাকায় ৫৪৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে চালু করেছে জেলা প্রশাসন। এরমধ্যে আক্রান্ত সাত উপজেলার ৩৪৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৪ হাজার ৮০২ জন আশ্রয় নিয়েছে। নগরের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখার কথা জানিয়েছে সিটি করপোরেশন।

স্থানীয়দের তথ্য বলছে, বন্যায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে জৈন্তাপুর উপজেলা। এখানকার টিলা বা উঁচু এলাকা বাদ দিলে সমতলের প্রায় পুরোটা পানিতে নিমজ্জিত। পানি উঠে গেছে বেশিরভাগ বসতবাড়িতে। নিচু এলাকায় কোনো কোনো বাড়ির চাল পর্যন্ত ডুবে গেছে। বন্যা কবলিত মানুষদের উদ্ধার করেছে প্রশাসন, অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। তবে ভেসে গেছে অনেক হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু।

এদিকে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙে একাধিক স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে বিয়ানীবাজারে। উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। মানুষজন বন্যা পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন- বন্যায় সিলেটের সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ

জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, জেলার সব উপজেলা মিলিয়ে ৫৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, ‘জেলার যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে, সেগুলোও প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। সে প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।’

জেলা প্রশাসক জানান, প্লাবিত এলাকায় এরই মধ্যে এক হাজার বস্তা শুকনো খাবার, ৭৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে আরও বরাদ্দের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। বন্যার্তদের স্বাস্থ্য সেবা দিতে ইউনিয়নভিত্তিক মেডিকেল টিমও গঠন করা হয়েছে। তিনি নিজেও বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করছেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দেশনা দিচ্ছেন বলে জানান।

এদিকে সিলেট নগরীতেও বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় বৃহস্পতিবার জরুরি সভা করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। সভা থেকে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাহায্যের জন্য ০১৯৫৮২৮৪৮০০ নম্বরটিকে ২৪ ঘণ্টা সচল কন্ট্রোল রুমের নম্বর ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনে ভারপ্রাপ্ত মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে বন্যায় উপদ্রুতদের।

সভায় দুর্যোগ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সিসিকের বিদ্যুৎ, পানি, স্বাস্থ্য ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি বন্যা পরিস্থিতিতে সহায়তার জন্য প্রাথমিকভাবে তিন টন চিড়া, তিন টন মুড়ি, গুড়, খাবার পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ওরস্যালাইন কেনা হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে ২৪ ঘণ্টা সব ধরনের জরুরি সেবা দেওয়ার প্রস্তুতিও রাখতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট সবাইকে।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন