বিজ্ঞাপন

যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলে পদত্যাগ করবেন ইসরায়েলি মন্ত্রীরা!

June 2, 2024 | 11:50 am

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধে বিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সে প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবেই দেখার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে ইসরায়েলের দুই কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, নেতানিয়াহু এই প্রস্তাবে রাজি হলে তারা ছোট ছাড়বেন তো ছাড়বেন, জোট ভেঙেই দেবেন।

বিজ্ঞাপন

ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিস ও জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির বলেন, হামাসকে ধ্বংস করার আগে যেকোনো চুক্তি ইসরায়েলের স্বার্থবিরোধী। এ ধরনের কোনো চুক্তি আমরা মেনে নেব না।

ইসরায়েলের বিরোধী জোট অবশ্য বিপরীত অবস্থান নিয়েছে। বিরোধী নেতা ইয়ার ল্যাপিড বলেছেন, যুদ্ধবিরোধী এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করলে ক্ষমতাসীন নেতানিয়াহু সরকারকে ববং তারা সমর্থন দেবেন।

বিবিসির খবরে বলা হয়, গাজায় যুদ্ধবিরতি না করার বিষয়ে সম্পূর্ণ কঠোর অবস্থানে ছিল ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এর আগে বলেছিলেন, হামাসের শাসন ও সামরিক ক্ষমতা ধ্বংস না করা এবং সব জিম্মিকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত কোনো স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে তারা যাবেন না। তবে বাইডেনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব সবকিছু নতুন রূপ দিচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

বাইডেনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শুরু হবে। প্রস্তাব অনুযায়ী ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজার জনবহুল এলাকা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করবে। পরে সব জিম্মিদের মুক্তি, স্থায়ী শত্রুতার অবসান ও ব্যাপকভাবে গাজা পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে এই প্রস্তাবনায়।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এই প্রস্তাবের পর শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে অর্থমন্ত্রী স্মোট্রিস লিখেছেন, তিনি নেতানিয়াহুকে বলেছেন যে হামাসকে ধ্বংস করা ও সব জিম্মিকে ফিরিয়ে না এনে প্রস্তাবিত রূপরেখায় নেতানিয়াহু রাজি হলে সরকারের এই প্রক্রিয়ার অংশ হবেন না তিনি।

জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী বেন-গভিরও একই ধরনের মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এই চুক্তির অর্থ হলো যুদ্ধের সমাপ্তি এবং হামাসকে ধ্বংস করার লক্ষ্য থেকে সরে আসা। এই চুক্তি অপরিণামদর্শী। এই চুক্তির অর্থ সন্ত্রাসবাদের বিজয়, যা ইসরায়েল রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। এই প্রস্তাবে রাজি হওয়ার বদলে সরকার ভেঙে দেওয়া ভালো।

বিজ্ঞাপন

নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ডানপন্থি জোটের অংশ বেন-গভিরের ওটজমা ইয়েহুডিত (ইহুদি শক্তি) এবং স্মোট্রিসের ধর্মভিত্তিক জায়োনিজম পার্টি। প্রথম দলটির ছয়টি ও দ্বিতীয় দলটির সাতটি আসন রয়েছে সংসদে। অন্যদিকে ইসরায়েলের সবচেয়ে প্রভাবশালী বিরোধী রাজনীতিবিদদের একজন ইয়ার ল্যাপিড। তার দল ইয়েশ আতিদের আসনসংখ্যা ২৪টি। তাদের দলের অবস্থা বেশ ভালো এবং ইসরায়েলের রাজনীতিতে অনেক সম্ভাবনাময় মনে করা হয়।

বেন-গভির ও স্মোট্রিস সমর্থন তুলে নিলে ল্যাপিড তার দলের সমর্থন নেতানিয়াহুর জন্য বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। ল্যাপিড বলেন, ‘বেন-গভির ও স্মোট্রিস সরকার ছেড়ে দিলে জিম্মি চুক্তির জন্য নেতানিয়াহুর জন্য আমাদের সমর্থন আছে।’

এদিকে বাইডেনের দেওয়া প্রস্তাবে ইসরায়েলি সরকারকে রাজি হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তেল আবিবে কয়েক হাজার মানুষ সমাবেশ করেছেন। তারা এ সময় নেতানিয়াহুর পদত্যাগও দাবি করেছে। এ সময় বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটকও করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বাইডেনের প্রস্তাবের পক্ষে বিভিন্ন দেশ

শনিবার এক যৌথ বিবৃতি মিশর, কাতার ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থ্যতাকারীরা ইসরায়েল ও হামাস উভয়কেই বাইডেনের দেওয়া যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব চূড়ান্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছেন, গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি ও বন্দিদের মুক্তির জন্য চলমান আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসাবে তারা জো বাইডেনের রূপরেখার মূল বিষয়গুলোকে চূড়ান্ত করতে হামাস ও ইসরায়েল উভয়ের প্রতি আহ্বা জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও এই যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবনার প্রতি তার সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘হামাস যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা গ্রহণ করলে যুক্তরাজ্য সরকার গাজায় বিপুল পরিমাণ সহয়তা পাঠাতে পারবে।’

এর আগে হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ বিবিসিকে বলেন, ইসরায়েল রাজি থাকলে তারা এই চুক্তিতে যাবেন। তবে শনিবার এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, যুদ্ধ শেষ করতে ইসরায়েল যে নীতি গ্রহণ করেছিল তাতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

হামাসের সামরিক ও শাসন ক্ষমতার ধ্বংস, সমস্ত জিম্মিকে মুক্ত করা এবং গাজা যেন আর তাদের জন্য হুমকি না হয় তা নিশ্চিত করতেই যুদ্ধ নীতি গ্রহণ করেছিল ইসরায়েল। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী অফিসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার আগে ইসরায়েল ‘এই শর্ত পূরণের জন্য জোর দিতে থাকবে’।

অন্যদিকে মিশর সীমান্তে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরে রাফাহতে শনিবারও ইসরায়েলি বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের উত্তরে গাজা শহরেও গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে।

হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় ৩৬ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রবেশ করে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১২০০ ইসরায়েলিকে হত্যা এবং প্রায় ২৫২ জন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে বন্দি করে গাজায় নিয়ে আসে হামাস।

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন