বিজ্ঞাপন

সরকারের জবাবদিহিতা; মাধ্যম হল ‘বাজেট’

June 2, 2024 | 3:53 pm

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন

সরকারের প্রধান কাজ হল, রাজস্ব আদায় করা। তবে জনশ্রেণির জন্য নাগরিক সুবিধাদি প্রদান করার ধারাবাহিকতা রক্ষা করেই সরকার তা প্রত্যাশা করতে পারে। নচেৎ, এই অঞ্চলের তথা বাংলাদেশের মানুষ কর প্রদানে প্রস্তুত থাকে না। গেল পনের বছরে একজন শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক জ্ঞানমনস্ক চরিত্র হয়ে পড়া এবং আবুল মাল আব্দুল মুহিত, আ হ ম লোটাস কামালদের দূরদৃষ্টি, বাংলাদেশকে দিকভ্রষ্ট করেনি।

বিজ্ঞাপন

বৈশ্বিক পর্যায়ে রাজনৈতিক অপতৎপরতা, কোভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চলমান প্রভাবে চাপ অনুভব করলেও অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে পড়ে লক্ষ্য হারায়নি বাংলাদেশ। সূত্রমতে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে আমাদের নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন। বাজেট নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই হবে এবারের বাজেটের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।’

এদিকে সরকারের জবাবদিহিতা; মাধ্যম হিসাবে প্রধানত ‘বাজেট’ কে দেখার সুযোগ আছে। উন্নত দেশের শাসকেরা এও বলে থাকেন যে, ‘সরকারি খরচে স্বচ্ছতা দরকার। আমাদের প্রতিটি সরকারি খরচ অনলাইনে রাখতে হবে যাতে করে জনমানুষেরা দেখতে পারে যে তাদের করের অর্থ কোথায় ব্যয় করা হচ্ছে।’ আমরাও একটা সময় এমন পর্যায়ে চলে যেতে পারব বলে মনে করার সুযোগ আছে। এখানেই জনশ্রেণির সাথে সু শাসকের সম্পর্ক নিশ্চিত হয়। যদিও আমরা ইউরোপের মত করে পুরোপুরিভাবে কর আদায় করেই সরকারের আয়-ব্যয় দেখভাল করছি না। এবার অবশ্য আগামী অর্থবছরে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে।
রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনা সাড়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি ধরে নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট সাজানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা জোগাড় করার লক্ষ্য ঠিক করে দেওয়া হতে পারে বলে অনুমিত হয়। কাজেই বাংলাদেশ যেহেতু ভৌতঅবকাঠামোগত উন্নয়নে সফলতা দেখিয়েছে, সে কারণে নাগরিকশ্রেণিকে করের আওতায় আনা প্রাসঙ্গিক বলেই মনে করার সুযোগ হয়।

অন্যদিকে করছাড় সীমিত করার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আছে। অভ্যন্তরীণ আয়ের খাতকে শক্তিশালী করতে আমাদের সরকারেরও চেষ্টা আছে। এই দুই কারণে বিভিন্ন উৎস থেকে বাড়তি কর আদায়ের পরিকল্পনা করা হচ্ছে আসছে বাজেটে। এতে ধনীদের ওপর করের বোঝা কিছুটা বাড়বে। আবার করপোরেট কর ও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত উৎপাদনশীল খাতের প্রতিষ্ঠানের কর কমানোর সিদ্ধান্তে ব্যবসার খরচ কিছুটা কমে আসবে বলে ধরে নেয়া যায়।

বিজ্ঞাপন

অপরদিকে বাজেটে এনবিআর বহির্ভূত খাত থেকে যে রাজস্ব আদায়ের কথা বলা হয়, তা আসে মাদক শুল্ক, যানবাহন কর, ভূমি রাজস্ব, নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প বিক্রয় ও সারচার্জ খাত থেকে। সুত্র বলছে, চলতি অর্থবছরে কর বহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার কোটি টাকা থাকলেও আগামী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে তা ৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা ধরা হচ্ছে।

এক এগারোর অনাকাঙ্ক্ষিত সরকারের পর যখন ২০০৯ সালে দেশের ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে, তখন থেকেই প্রতি অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা করলেই, একটি পক্ষ বাজেটের আকার ও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার পরিকল্পনাকে প্রতিবার বলেছেন ‘উচ্চাভিলাষী’। জবাবে আমাদের ১০টি বাজেট দেওয়া প্রয়াত অর্থনীতিবিদ আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘সরকার দেশের উন্নয়নে উচ্চালিভাষীই।’ মনে করি, শেখ হাসিনার অদম্য নেতৃত্বে সৎ সত্তা মুহিতের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে ঝুঁকি নেয়ার ক্ষমতা; আমরা কেহ অস্বীকার করতে পারি না যে, উন্নয়নের অভিযাত্রায় ভর করেই বাংলাদেশ এগিয়ে গিয়েছে, যাচ্ছে ও যাবে।

গুঞ্জন আছে, এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য-শিক্ষায় অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। বরাদ্দ কমছে যোগাযোগ-বিদ্যুত খাতে। তবে যোগাযোগ খাতের চলমান ধারাবাহিকতার সুফল মানুষ পাচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জ ও সক্ষমতা– শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে বড় করে। অতি গুরুত্বের সাথেই তাই সঙ্গত যুক্তিতে যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ খাতকে আগলিয়ে রাখতে হবে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এই দেশ মৎস্যজীবিদের জন্যও অনন্য ঠিকানা। সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপে কৃষক ও জেলেদের জন্য সুনীতি প্রণয়ন করতে পারলে তারা ন্যায্য মূল্য পেত এবং সকলের জন্যই ‘আতংক’ বাজার সিন্ডিকেটকে তখন দমন করা যেত। পর্যটন খাতেও বিপ্লব করার দরকার। যা দ্বারা ৮টি পর্যটন অঞ্চল থেকে আমরা রাজস্ব আদায় করতে পারতাম। একইভাবে শিল্পনীতির সাথে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সু সমন্বয়করত বাংলাদেশ উচ্চ আয়ের দেশ হতে পারে বলে মত আমার।

একটি বিখ্যাত মতবাদ আছে। তা হল, সোশ্যাল সিকিউরিতি ইজ নট জাস্ট এনাদার গভারমেন্ট স্পেন্ডিং প্রোগ্র্যাম– ইট ইজ এ প্রমিজ ফ্রম জেনারেশন টু জেনারেশন। বিশ্বাস করি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি নারী শেখ হাসিনা তা ধারন করেই এগিয়ে যাচ্ছেন। হয়তো দেশের সেবা করতে যেয়ে তার মৃত্যু ঝুঁকি আছে বা বাড়ছে, তবু বাংলার মানুষের পথ দেখাতে তিনি লড়ে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র রুটিন দায়িত্ব হিসাবে অর্থ বছরের বাজেট তাই ঘোষণা করা হচ্ছে না। সরকারের পরিকল্পনাগুলোর সাথে বাস্তবতার ক্যানভাস তৈরি করেই টানা পনের বছর ধরে আওয়ামী লীগ জনমানুষের জন্য সেরাটা দিয়ে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনা এও বোঝেন যে, ‘ক্রমবর্ধমান ব্যয় কভার করার জন্য ক্রমবর্ধমান করের হার দ্বারা অর্জিত ভারসাম্যপূর্ণ বাজেটের পরিবর্তে প্রকৃত লক্ষ্য হওয়া উচিত সরকারি ব্যয় হ্রাস করা।’ সে কারণেই তিনি গেল রমজানে আমাদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন, ‘প্রার্থনা কর কিন্তু ইফতার মাহফিলের অনুষ্ঠান কমাও।’

আমরা সকলেই অবগত যে, বাজেট ঘোষণার সাথে সাথেই বামপক্ষ বলবেন, এটা গরীব মারার বাজেট। সুশীল উপদ্রব হিসাবে খ্যাত সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী বলবেন, ঘোষিত বাজেট লক্ষ্য পূরণে অর্জিত হয়ে উত্তীর্ণ হবে না। বিএনপির মতো বুর্জোয়া শক্তিও বলবেন, ঘোষিত বাজেটে প্রবৃদ্ধির যে প্রত্যাশা করা হয়েছে, তা পূরণ হবে না। বাংলাদেশের মানুষকে বলব, জনগণের আয় ও ব্যয়ের সমন্বয় সাধনের দিকটি সবার আগে বিবেচনায় এনে বঙ্গবন্ধু আত্মজার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অতঃপর সরকার তার লক্ষ্য ঠিক করছে। আঞ্চলিক, জাতীয় এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির সাথে তাল মিলিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতির অনন্য ব্যবস্থাপনার দৃষ্টান্ত গড়েই বাংলাদেশ সঠিক কক্ষপথে আছে বলে মনে করার তাই সুযোগও আছে।

লেখক: সভাপতিমন্ডলির সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন