বিজ্ঞাপন

নামছে নদীর পানি, সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

June 2, 2024 | 8:40 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বৃষ্টি থেমেছে। কমেছে উজানের ঢল। এ কারণে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতিরও উন্নতি হয়েছে দ্বিতীয় দিনের মতো। বানের পানিতে প্লাবিত হওয়া উপজেলাগুলোর পানি কমতে শুরু করেছে। অনেক ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে। অন্যদিকে সিলেট নগরীতে জলাবদ্ধতা থাকলেও নতুন করে কোথাও পানি বাড়েনি। বরং কিছু কিছু এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে।

বিজ্ঞাপন

জেলা প্রশাসন বলছে, বন্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছয় লাখের বেশি। তাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও সেগুলোতে খুব বেশি মানুষ আশ্রয় নেয়নি। তবে প্রশাসন বন্যা কবলিত মানুষের যেকোনো প্রয়োজনে পাশে রয়েছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের প্রায় সব নদীর পানিই কমেছে। বেশির ভাগ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার নিচেও নেমে এসেছে। নতুন করে ভারী বৃষ্টিপাত না হলে নদীর পানি আপাতত আর বাড়বে না।

রোববার (২ জুন) সন্ধ্যা ৬টার তথ্য জানিয়ে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ সারাবাংলাকে বলেন, কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদী বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে গতকাল সন্ধ্যা ৬টার তুলনায় এই পয়েন্টে পানির উচ্চতা কমেছে ১১ সেন্টিমিটার। একই নদী সিলেট পয়েন্টে রোববার সন্ধ্যায় প্রবাহিত হয়েছে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, আগের দিন সন্ধ্যাতেই যা বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পাউবোর তথ্য আরও বলছে, রোববার সন্ধ্যাতেও অমলশিদ পয়েন্টে কুশিয়ারা বিপৎসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে এই পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে পানির উচ্চতা কমেছে ৯৯ সেন্টিমিটার। এই নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে অবশ্য ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে বেড়েছে ৮ সেন্টিমিটার, এটি রয়েছে বিপৎসীমার ঠিক ৮ সেন্টিমিটার ওপরে। তবে কুশিয়ারা নদীর পানির উচ্চতা শেওলা পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার ও শেরপুর পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার কমেছে। এ দুটি পয়েন্টেই নদীর পানি রয়েছে বিপৎসীমার নিচে।

এ ছাড়া লুবা ছড়া পয়েন্টে লুবা নদীর পানি ২৪ ঘণ্টায় কমেছে ১৪ সেন্টিমিটার। অন্যদিকে সারিঘাট পয়েন্টে সারি নদী এবং জাফলং পয়েন্টে ডাউকি নদীর পানিও রয়েছে বিপৎসীমার নিচে।

এ অবস্থায় জেলার সাত উপজেলার সবগুলোতেই বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। অনেক বাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে যারা আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাদের অনেকে ঘরবাড়িতে ফিরে এসেছেন। তবে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে যাওয়া সড়কসহ নানা ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন ভেসে উঠছে। বিভিন্ন স্থান কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, আর দুয়েক দিন বৃষ্টি না হয়ে রোদ উঠলে পরিস্থিতি স্বাভাবিকের দিকে যাবে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে গতকাল শনিবারও সিলেট নগরীতে পানি বেড়েছে। তবে রোববার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। নগরীরর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা থাকলেও এ দিন বিকেল থেকে কমতে শুরু করেছে পানি।

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড বন্যা কবলিত হয়েছে। করপোরেশনের কর্মীরা সবাই সর্বাত্মকভাবে নগরবাসীর পাশে থাকার চেষ্টা করেছে। এখন পানি কমতে শুরু করেছে। তারপরও ঝুঁকিপূর্ণ সব ওয়ার্ডে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পানি বাড়লে সবাই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে পারবেন।

সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কিশোরী মোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাশের একটি পাঁচ তলা খালি ভবনে দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। সাজলু লস্কর তাদের বলেন, তাদের জন্য রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। চিকিৎসক দল সেখানে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

সিলেট নগরীর মতোই উপজেলাগুলোতেও আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষের সংখ্যা অনেক কম। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তথ্য বলছে, জেলায় রোববার পর্যন্ত বন্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছয় লাখ আট হাজার ৩৩৫ জন। এর মধ্যে মাত্র এক হাজার ৮০৬ জন আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। এতে জেলা প্রশাসন থেকে প্রস্তুত রাখা সাড়ে পাঁচ শ আশ্রয়কেন্দ্রের বেশির ভাগই কাজে আসেনি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন