বিজ্ঞাপন

২১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিতে ফের ডুবল সিলেট

June 3, 2024 | 11:55 am

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বৃষ্টি কমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল সিলেটে। উপজেলাগুলোর পাশাপাশি সিলেট নগরীর পানিও নেমে যেতে শুরু করেছিল। কিন্তু এক রাতের অতি ভারী বৃষ্টিপাতে ফের সিলেট নগরীতে পানি বেড়েছে। আগের জলাবদ্ধ ওয়ার্ডগুলোতে পানি বেড়েছে। তলিয়ে গেছে নতুন আরও কয়েকটি ওয়ার্ড।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২ জুন) দিবাগত রাতে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকাতেই। এর মধ্যে সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। সোমবার (৩ জুন) সকালে আবহাওয়া অধিদফতর ঢাকা কার্যালয়ের তথ্য বলছে, সিলেটে আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২২৭ মিলিমিটার। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড অবশ্য সিলেটে বৃষ্টির পরিমাণ জানিয়েছে ২১৪ মিলিমিটার।

কেবল সিলেট শহরে নয়, বৃষ্টি হয়েছে উপজেলাগুলোতেও। সোমবার সকাল ৯টায় সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, একই সময়ে জাফলংয়ে বৃষ্টি হয়েছে ১১২ মিলিমিটার, লাউড়েরগড়ে ১২৭ মিলিমিটার, ছাতকে ১০৮ মিলিমিটার।

ভারী এই বৃষ্টিপাতের প্রভাব পড়েছে নদীর পানির উচ্চতাতেও। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ সারাবাংলাকে জানান, সুরমা-মেঘনা নদী সিলেট পয়েন্টে রোববার সন্ধ্যায় বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচে নেমে এসেছিল। সোমবার সকাল ৯টায় সেটি ফের বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

নির্বাহী প্রকৌশলী আরও জানান, সোমবার সকাল ৯টায় কানাইঘাট পয়েন্টে এখনো বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সুরমা-মেঘনার ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। অমলশিদে পয়েন্টে কুশিয়ারা ছিল বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপরে। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টেও পানি ছিল বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপরে।

সিলেট সিটি করপোরেশন বলছে, উঁচু এলাকা বাদ দিলে সিটি করপোরেশনের প্রায় সব ওয়ার্ডেই পানি উঠেছে। ছবি: ফেসবুক

অতি ভারী এই বৃষ্টিপাতের প্রভাতে রোববার দিবাগত রাতে সিলেটের নগরীর উপশহর, যতরপুর, মেন্দিবাগ, জামতলা, মিরের ময়দান পায়রা, তালতলা, শেখঘাট, দরগাহ, মিরাবাজার, মাছুদিঘীরপার, তোপখানা, কাজির বাজার, সোবহানীঘাট, লালদীঘির পাড়সহ অনেক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানেও পানি ঢুকে পড়েছে। সিটি করপোরেশনের তথ্য বলছে, নগরীর উঁচু দুয়েকটি ওয়ার্ড ছাড়া প্রায় সব ওয়ার্ডেই কমবেশি পানি ঢুকে গেছে।

স্থানীয় অধিবাসী ও সাংবাদিকদের অনেকেই ফেসবুক পোস্টে আচমকা বন্যা কবলিত হওয়ার দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেছেন। আশফাক রানা লিখেছেন, ‌‘এই মুহূর্তে সিলেট শহরের অবস্থা খুবই নাজেহাল ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বৃষ্টি না থামলে ২০২২ সালের মতো আবার বন্যা দেখা দিতে পারে।’

বিজ্ঞাপন

অ্যাডভোকেট দেবব্রত চৌধুরী লিটন লিখেছেন, ‘আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায় নির্ঘুম রাত কাটছে সিলেটবাসীর। প্রথমে রাত ১টায়, পরে ৩টা ৫০ মিনিট— দুইবার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে সবকিছু। পানি বাড়ছেই।’

সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি তুলে ধরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মিরের ময়দান পায়রা এলাকার আজমল আলী লিখেছেন, ‘নগরবাসীর দাবি একটাই, সুরমা নদী খনন চাই। সুরমা নদী খনন করুন, বন্যা থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করুন।’

সাংবাদিক মিসবাহ উদ্দীন আহমদও সুরমা খননের কথা তুলে ধরে লিখেছেন, ‘সুরমা নদী যদি সময়মতো খনন করা হতো, তবে নগরবাসীকে এতটা দুর্ভোগ পোহাতে হতো না!’

সিলেট নগরীর বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে দোকানপাটেও পানি উঠে গেছে। নগরীর উপশহর এলাকায়। ছবি: ফেসবুক

এ অবস্থায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বেশকিছু আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে শুকনা খাবার। আশ্রয়কেন্দ্রে খিচুড়িসহ রান্না খাবারের প্রস্তুতিও রাখা হয়েছে। তবে এখনো আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে তেমন একটা মানুষ দেখা যায়নি। নগরীর বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে খুব একটা আগ্রহী নন।

বিজ্ঞাপন

এদিকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালের প্রধান ফটক ও নিচতলায় প্রশাসনিক ভবনসহ ২৬, ২৭ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে পানি ঢুকে গেছে। হাসপাতালের সামনে ও নিচতলার বেশির ভাগ জায়গাতেই পানি রয়েছে। এতে হাসপাতালে থাকা রোগী ও স্বজনদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। চিকিৎসকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কথা হয় সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গতকাল (রোববার) পানি কমে গিয়েছিল। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে ২১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এটা অনেক বৃষ্টি। ঠিক এই মুহূর্তেও বৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। এখন বলতে গেলে সিটি করপোরেশনের প্রায় সব ওয়ার্ডেই পানি উঠে গেছে। গতকালও যেখানে বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল, ভারী বৃষ্টিপাতে আবার পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটেছে।’

বন্যা কবলিত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে সিটি করপোরেশনের প্রস্তুতি জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছি। তবে আশ্রয়কেন্দ্রে খুব বেশি মানুষ এখনো আসেননি। শহরের বাসিন্দারা আসলে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে আগ্রহী নন খুব একটা। তারা যতক্ষণসম্ভব বাড়িতেই থাকতে চান। তবে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। কাউন্সিলরদের মাধ্যমে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সহযোগিতা করা হচ্ছে। শুকনা খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। খিচুড়িসহ রান্না খাবারের আয়োজনও রয়েছে। সিটি করপোরেশন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।’

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন