বিজ্ঞাপন

‘আওয়ামী লীগ গোপনে বেনজীরকে পাচার করে দিয়েছে’

June 4, 2024 | 11:25 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: আওয়ামী লীগ সরকার সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদকে বাঁচাবার জন্য গোপনে পাচার করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৪ জুন) বিকেলে নগরীর ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইইবি) চট্টগ্রাম মিলনায়তনে ‘চট্টগ্রাম ফোরাম’ আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সেমিনারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজ দেখুন। ভাবতে ও বলতে লজ্জা হয়, যে আমার সাবেক পুলিশ বাহিনীর প্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন পাতায় পাতায় হাজার হাজার দুর্নীতির খবর বের হচ্ছে। বাংলাদেশের এমন কোনো জায়গা নেয় যেখানে তিনি জমি কিনেননি বা দখল করেনি।’

‘হিন্দু সম্প্রদায়ের জায়গা পর্যন্ত তিনি দখল করে নিয়েছেন। আর এ সরকার ওই চোরকে বাঁচাবার জন্য গোপনে তাকে পাচার করে দিয়েছে। লজ্জা হয়। কি বলব জানি না।’

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগের সমর্থনপুষ্ট একেকজন রাক্ষস হয়ে উঠেছে মন্তব্য করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আমার সেনাবাহিনী, যার xপর আমরা সবচাইতে বেশি ভরসা করি। যাদের ওপর মানুষের আস্থা আছে। আজ সে সেনাবাহিনীর সাবেক সেনা প্রধানের ওপর মার্কিন স্যাংশন আসে। মার্কিন স্যাংশনে বলে দেওয়া হয় কি কি কারণে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে দুর্নীতি প্রধান।’

‘তারপর সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারে বাধা দেওয়া। এরকম অসংখ্য বেনজীর ও আজিজ আওয়ামী লীগ তৈরি করেছে। চতুর্দিকে দেখবেন আওয়ামী লীগের সমর্থনপুষ্ট সব একেকটা রাক্ষস হয়ে উঠেছে। মাফিয়া চক্র তৈরি করেছে। পুরো দেশটাকে তারা গিলে খাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে যখন বাকশাল তৈরি করা হয়েছিল সেখান থেকে আওয়ামী লীগকে বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ছিল না। দ্বিতীয়বার আওয়ামী লীগের জম্ম হয়েছিল জিয়াউর রহমান যখন একদল থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন করে মাল্টিপার্টি সিস্টেম নিয়ে আসলেন। তখন তারা দরখাস্ত করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামে নিবন্ধিত করেছিল। এটা আওয়ামী লীগ মনে করতেই চাই না।’

বিজ্ঞাপন

‘তারা সারাক্ষণ বলতে থাকে জিয়াউর রহমানের কোনো কৃতিত্ব নেই। মিথ্যা অপবাদ, অপব্যাখ্যা দিতে থাকে। বলে জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের চর ছিলেন। তিনি যুদ্ধ করেননি। এ কথা গুলো বললে অনেক কথা চলে আসবে। যেগুলো বললে তাদের পছন্দ হবে না। তাদের শরীরে আগুন ধরে যায় যখন আমরা সত্য কথা বলি।’

আওয়ামী লীগ সবসময় একদলীয় শাসন চেয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ১৯৭২ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিল। সে সময় ছিল দুঃশাসন, দুর্নীতি, দারিদ্রতা ও দুর্ভিক্ষ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা আসার পরপরই শেখ মুজিবের নেতৃত্বে মানুষ মনে করলো দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। দেখা গেল তার উল্টোটা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের লোকেরা ভক্ষক হয়ে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার শুরু করেছে।’

‘গণতন্ত্রকে তারা নির্বাসিত করেছে। বিরোধী দল বলতে কিছু ছিল না। বিরোধিতা করার সাহসও কেউ পেত না। মাল্টিপার্টির ডেমোক্রেসি তারা চায়নি। তারা সবসময় চেয়েছে একদলীয় শাসন। তারা লুটপাট করে সবকিছু নিয়ে চলে যাবে। ওই পাঁচ বছর ছিল আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বছর। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্ন সেদিন ধ্বংস করে দিয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম সংবিধান তারাই কাঁটাছেটা করেছে। প্রথমে তারা বিশেষ ক্ষমতা আইন করেছে। এরপর জরুরী অবস্থা আইন করেছে। সবশেষে যখন তারা কোনো কিছু সামাল দিতে পারছিল না সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে দিয়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। শেখ মুজিবর রহমান যিনি গণতন্ত্রের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন তার নেতৃত্বেই মাত্র ১১ মিনিটের একটি পার্লামেন্টের সভায় সেদিন গণতন্ত্রের গলা টিপে হত্যা করেছিল।’

বিজ্ঞাপন

‘সেদিনই একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। এ বাকশাল ছিল বাংলাদেশের মানুষের আশা আকাঙ্খার বিরুদ্ধে। আজ সে আওয়ামী লীগ আবারও নতুন করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে ১৫ বছর ধরে কাজ করছে।’

আওয়ামী ছদ্মবেশে বাকশাল করতে চায় অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সবসময় গণতন্ত্র বিরোধী। এরা সবসময় একনায়কতন্ত্রে অর্থাৎ বাকশালকে বিশ্বাস করে। তারা ছদ্মবেশে বাকশাল করতে চায়। সেভাবে তারা তাদের শাসনকে আবার ফিরিয়ে আনতে চায়। এজন্য ১৫ বছর ধরে সম্পূর্ণ বেয়াইনিভাবে বিনাভোটে, জনগণের রায় ছাড়াই তারা ক্ষমতাকে দখল করে আছে।’

‘আমরা যারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম আমাদের সব স্বপ্নগুলো খান খান করে দিয়ে তারা শুধুমাত্র কিছু ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীকে লুটপাত করার সুযোগ দিয়ে লুটের রাজত্ব করেছে। আইনের শাসনকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়ে, বিচার ব্যবস্থাকে শেষ করে দিয়ে, ভোট ডাকাতি করে তারা এখন ডামি নির্বাচন, মধ্য রাতের নির্বাচন এসব দেখায়। মানুষ এটাকে বেশিদিন সহ্য করবে না। মানুষ লড়াই করছে। গত ১৫ বছর ধরে আমরা এ ভয়াবহ দানবের বিরুদ্ধে লড়াই করছি।’

সামনে ভয়াবহ দিন আসছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সবাই বিপদে আছে। কোন কথা বললেই বা লিখলেই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। বিনা কারণেই পুলিশ ধরে নিয়ে সাজা দিয়ে দিচ্ছে। ভয়ভীতি ও ত্রাসের রাজত্ব চলছে। আরও ভয়াবহ দিন আসছে।’

‘সামনে আরও একটি আইন আসছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্সের উপর একটি আইন হতে যাচ্ছে। এ আইনটি আরও ভয়াবহ। অর্থাৎ আপনি কিছু বললেই আপনার ঘরে পর্যন্ত তারা আঁড়ি পাততে পারবে। আপনার কথা তারা সবাই নিতে পারবে। এটা মানুষকে নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা চলছে।’

নাগরিক সমাজের সংগঠন ‘চট্টগ্রাম ফোরাম’র উদ্যোগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘জাতিসত্তার রূপকার : রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমান’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

এতে ধারণৈাপত্র উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব ও পেশাজীবি নেতা কাদের গণি চৌধুরী।

নগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও ড্যাবের কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম সারোয়ার আলমের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, এস এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, সহ কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া, সহ ধর্ম সম্পাদক দিপেন দেওয়ান, সহ উপজাতি সম্পাদক কর্ণেল মনিষ দেওয়ান, সদস্য সাচিং প্রু জেরী, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, কক্সবাজার জেলার সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম।

সারাবাংলা/আইসি/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন