বিজ্ঞাপন

‘বাঁচা-মরার লড়াই’য়ে টিকে গেল কংগ্রেস?

June 4, 2024 | 11:51 pm

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, সংক্ষেপে শুধুই কংগ্রেস। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দলটির নাম। গত শতকে ভারতের রাষ্ট্রক্ষমতাতেও বেশির ভাগ সময়ই আসীন ছিল দলটি। গত এক দশকে সেই দলটির অবস্থাই হয়ে পড়ে সঙ্গীন। হারতে হারতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল। রীতিমতো অস্তিত্বের সংকট তৈরি হয়েছিল দলটির।

বিজ্ঞাপন

‘মোদি গ্যারান্টি’ আর ‘৪০০ পার’ স্লোগানের চাপে ভারতের এবারের লোকসভা নির্বাচন বলতে গেলে কংগ্রেসের জন্য পরিণত হয়েছিল বাঁচা-মরার লড়াইয়ে। বিজেপিবিরোধীদের নিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠন করে সেই লড়াইয়ে উৎরানোর সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছে দলটি। ভোটের ফলাফল বলছে, সেই লড়াইয়ে কংগ্রেস ভালোই করেছে। এক দশক পরে এসে দলটি শত আসনের দোরগোড়ায় পৌঁছেছে লোকসভা নির্বাচনে।

মঙ্গলবার (৪ জুন) সকালে শুরু হয়েছে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল গণনা। রাত ১১টায় ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে বিজেপি জয় পেয়েছে ২২৮টিতে, এগিয়ে রয়েছে আরও ১২টি আসনে। সব মিলিয়ে বিজেপি জিততে পারে ২৪০ আসনে। অন্যদিকে কংগ্রেস ৮৮টি আসনে জয় পেয়েছে, এগিয়ে রয়েছে আরও ১১টি আসনে। সে হিসাবে তারা ৯৯টি আসনে জয় পেতে পারে।

আরও পড়ুন- সরকার গঠনের ঘোষণা মোদির, বললেন বিকশিত ভারতের জয়

বিজ্ঞাপন

এর আগে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস আসন পেয়েছিল মাত্র ৫২টি। এর আগের ২০১৪ সালের নির্বাচনে অবস্থা ছিল আরও ভয়াবহ— মাত্র ৪৪টি আসনে জয় পেয়েছিল কংগ্রেস। গত এক দশকের রাজনীতিতে কংগ্রেস একদমই কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির চাপে কংগ্রেসকে বেশ অসহায়েই মনে হচ্ছিল।

এই এক দশকে দলের ভেতরে এসেছে নানা পরিবর্তন। রাহুল গান্ধি নানাভাবে চেষ্টা করেছেন নিজেকে ভেঙেচুড়ে ভোটারদের সামনে হাজির হওয়ার। পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস, দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি, উত্তর প্রদেশে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি, বিহারের নীতিশ কুমারের জনতা দলের মতো সব দল নিয়ে গঠন করেন ‘ইন্ডিয়া’ জোট। এবারের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রায় শত আসনের পেছনেও এই জোটের বড় ভূমিকা রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। আর তাতেই কংগ্রেসের রাজনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠল বলেই মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।

২০১৪ ও ২০১৯-এর নির্বাচনে ভরাডুবি

এর আগে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ‘মোদি ঢেউ’য়ে রীতিমতো ভেসে যায় রাহুল গান্ধির কংগ্রেস। ১৬২টি আসন হারাতে হয়, ভোট কমে ৯ শতাংশের বেশি। ওই নির্বাচন দিয়েই মূলত হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির উত্থান। পশ্চিমের গুজরাট-রাজস্থান থেকে শুরু করে পুবের বিহার-ঝাড়খণ্ড হয়ে মধ্যপ্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল বিজেপির সেই উত্থান।

বিজ্ঞাপন

সেবার বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট ৩৩৬টি লোকসভা আসনে জয় পায়, যার মধ্যে বিজেপি এককভাবেই পেয়েছিল ২৮২টি আসন। ওই নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে মাত্র দুটি আসনে জয় পেতে সমর্থ হয় কংগ্রেস। ওই অঞ্চল তো বটেই, গোটা ভারতেই সেবার কংগ্রেসের ভরাডুবি ঘটে। লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে তারা পায় মাত্র ৪৪টি আসন।

(বাঁ থেকে) সোনিয়া গান্ধি, কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খারগে ও রাহুল গান্ধি। ছবি: অনলাইন

পাঁচ বছর পর ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও বিজেপির জয়ের ধারা অব্যাহত ছিল। এবার জোটের ৩৫৩টি আসনের মধ্যে বিজেপি এককভাবে পেয়েছিল ৩০৩টি আসন। এই ভূমিধস জয়ের পেছনেও ছিল উত্তর প্রদেশসহ ওই অঞ্চলে বিজেপির একাধিপত্য। উত্তর প্রদেশ, বিহারে, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তরখাণ্ড, হিমাচল, দিল্লি, ছত্তিশগড় আর ঝাড়খণ্ড মিলিয়েই বিজেপি জোটের আসন দাঁড়ায় ২৩৮টিতে।

এ নির্বাচনে কংগ্রেসের পরিস্থিত একটু উন্নতি হয়, তবে তা নগণ্য। এবার গোটা ভারতে ৫২টি আসন পায় কংগ্রেস। তবে আগের মতোই উত্তর প্রদেশসহ ওই অঞ্চলজুড়েই যৎসামান্য আসন মিলেছিল কংগ্রেসের ঝুলিতে। শুধু তাই নয়, খোদ রাহুল গান্ধি কংগ্রেসের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আমেথিতে হেরে বসেন বিজেপির স্মৃতি ইরানির কাছে। এ পরাজয়ের জের ধরে কংগ্রেস প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয় রাহুলকে।

বুথফেরত জরিপ ছাপিয়ে কংগ্রেসের অগ্রযাত্রা

এবারের লোকসভা নির্বাচনেও কংগ্রেস খুব ভালো করবে, এমন আশাবাদ ছিল না অনেক রাজনীতি বিশ্লেষকেরও। শুধু তাই নয়, ভোটের পর বুথফেরত জরিপের তথ্যেও কংগ্রেসের জন্য আশার বাণী ছিল না বললেই চলে। ইন্ডিয়া টুডে ও অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া এবং ইন্ডিয়া টিভি ও সিএনএক্সের বুথফেরত জরিপ বলছিল, বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ৪০১টি আসন পাবে। নিউজট২৪ ও টুডেস চাণক্যের জরিপে এনডিএর আসন ছিল ৪০০টি।

বিজ্ঞাপন

কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নেতারা। ছবি: অনলাইন

আরও কয়েকটি জরিপেও বিজেপি ও এনডিএর আসনসংখ্যা দেখানো হয় ৩৭৮টি থেকে ৩৯২টি পর্যন্ত। বাস্তবে এখন এই জোট ৩০০টি আসন পূরণ করতে পারে কি না, সেটিই দেখার বিষয়।

এই নির্বাচনে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ জোট ২৯৫টি আসন পাবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খারগে। তবে বেশির ভাগ বুথফেরত জরিপেই এই জোটের আসন দেখাচ্ছিল ১৫০টির আশপাশে। এবিপি নিউজ-সি ভোটারের হিসাবে তা ছিল সর্বোচ্চ ১৮২টি। দুটি জরিপে এই আসন নেমে এসেছিল ১০৭টি ও ১০৯টিতে। বাস্তবে এখন এই জোট ২৩০টির মতো আসন পেতে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন-

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন